রায়গঞ্জের প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি কালিয়াগঞ্জের বয়রা কালী মন্দিরে পুজো দিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যেতেন। সেই কালীবাড়িতেই পুজো দিয়ে আড়াই ঘন্টার ব্যবধানে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন দেওর ও বৌদি। কালিয়াগঞ্জের শ্রীকলোনি এলাকার একই বাড়ির বাসিন্দা বৌদি, প্রিয়বাবুর স্ত্রী কংগ্রেস প্রার্থী দীপা দাশমুন্সি। আর দেওর প্রিয়বাবুর ভাই তথা তৃণমূল প্রার্থী পবিত্র দাশমুন্সি। বুধবার দু’জনে রায়গঞ্জের কর্ণজোড়ায় উত্তর দিনাজপুরের জেলা নির্বাচনী আধিকারিক স্মিতা পান্ডের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন। মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রের বামফ্রন্ট প্রার্থী মহম্মদ সেলিমও।
তবে অনুমতি না নিয়ে প্রার্থীদের সঙ্গে বাইক নিয়ে মিছিল করার অভিযোগে কংগ্রেস ও তৃণমূল সমর্থকদের ২৬টি বাইক আটক করেছে পুলিশ। জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, আটক করা বাইকের মধ্যে ১৪টি বাইকই তৃণমূল সমর্থকদের। দুইপক্ষের অভিযুক্ত বাইক চালকদের বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য ধারায় মামলা হওয়ায় তাঁরা থানা থেকে ব্যক্তিগত জামিনে ছাড়া পান। জেলাশাসক তথা জেলা নির্বাচনী আধিকারিক বলেন, “নির্বিঘ্নেই মনোনয়নপত্র জমা নেওয়ার কাজ শেষ হয়েছে। নির্বাচনী বিধিভঙ্গ হওয়ায় কিছু বাইককে আটক করা হয়েছে।”
এদিন সকাল ৯টা নাগাদ বাড়ি থেকে স্নান সেরে বয়রা কালীমন্দিরে গিয়ে পুজো দেন পবিত্ররঞ্জনবাবু। এরপর দই চিড়া খেয়ে গাড়িতে রায়গঞ্জের কসবা এলাকায় যান। সেখান থেকে সকাল ১১টা নাগাদ দলীয় নেতা কর্মীদের সঙ্গে হুড খোলা পিকআপ ভ্যানে চেপে মিছিল করে কর্ণজোড়া পৌঁছে দুপুর ১টা নাগাদ মনোনয়নপত্র জমা দেন। পরিবত্রবাবুর পরণে ছিল সাদা বুটিকের কাজ করা পাঞ্জাবি ও পায়জামা। কপালে ছিল লাল তিলক। মনোনয়ন জমা দিয়ে তিনি কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তাঁর কথায়, ‘‘অসুস্থ দাদার কথা আজ খুব মনে পড়ছে। দাদার দেখানো পথেই ওই মন্দিরে গিয়ে এদিন পুজো দিয়ে দাদার আরোগ্য কামনার পাশাপাশি দেবীর কাছে আশীর্বাদ চেয়েছি। জিতলে রায়গঞ্জের সার্বিক উন্নয়নে জোর দেব।”
অন্যদিকে, এদিন বেলা ১১টা নাগাদ বাড়ি থেকে স্নান সেরে উপোস করে সবুজ পারের সাদা শাড়ি, সবুজ ব্লাউজ ও সবুজ টিপ পড়ে দীপাদেবী বয়রা কালিমন্দিরে গিয়ে পুজো দেন। তার পরে দলীয় নেতাকর্মী সমর্থকদের সঙ্গে একটি হুডখোলা জিপে চেপে মিছিল করে কর্ণজোড়ায় গিয়ে দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ জেলাশাসকের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এদিন মিছিল চলাকালীন শহরের বিভিন্ন এলাকার শতাধিক মহিলা দীপাদেবীকে লক্ষ্য করে ফুল ছিটিয়ে শুভেচ্ছা জানান। কয়েকজন মহিলা তাঁর মঙ্গল কামনা করে কপালে চন্দনের তিলকও পড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, “তৃণমূল নেত্রী এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণ না করে প্রিয়বাবুর প্রধান স্বপ্নই ভেঙে দিয়েছেন। জয়ী হলে আমার প্রধান কাজই হবে হাসপাতাল তৈরি করা।”
বেলা দুপুর একটায় বামফ্রন্টের কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে রায়গঞ্জের দেবীনগর এলাকা থেকে মিছিল করে কর্ণজোড়া গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন সেলিমবাবু। সেলিমবাবু অবশ্য একাই হুডখোলা জিপে ছিলেন। বামফ্রন্টের কর্মী সমর্থকদের মিছিলে কোনও বাইক বা ছোটগাড়ি ছিল না। দুপুর পৌনে তিনটে নাগাদ সেলিমবাবু জেলাশাসকের কাছে মনোনয়ন জমা দেন। তিনি বলেন, “বিদায়ী সাংসদরা অতীতে প্রতিশ্রুতি পালন করতে পারেননি। আমি জয়ী হলে জেলার সার্বিক উন্নয়নের চেষ্টা করব।”
এ দিন তিনটি রাজনৈতিক দলের মিছিলেই কর্মী সমর্থকদের ভিড় ছিল প্রচুর। শহরে দীর্ঘক্ষণ যানজট হয়।