উত্তর কড়চা

ঝান্ডি পর্যটন মানচিত্রে সম্প্রতি যুক্ত হওয়া অনন্য সৌন্দর্যখনি। মালবাজার থেকে ৩২ কিমি দূরে। ঝান্ডিকে ঘিরেই রোজগারের রাস্তা পেয়েছেন দোর্জে ভুটিয়া, সঞ্জয় ছেত্রী, ধনসিংহ লামা, সোনম ভুটিয়া, সুনীল ছেত্রীরা। এঁরা প্রত্যেকে স্নাতক। রিসেপশন থেকে কিচেন কাউন্টার পর্যটকদের দেখভাল সব দায়িত্ব সামলাচ্ছেন এই তরুণরাই। অখ্যাত পাহাড়ি গ্রামে গড়ে ওঠা এই পর্যটন কেন্দ্রটি দিশা দেখাচ্ছে এলাকার যুবকদের।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৪ ০২:২৭
Share:

ছবি : অনিতা দত্ত।

বিলাসের অলস অবসর

Advertisement

ঝান্ডি পর্যটন মানচিত্রে সম্প্রতি যুক্ত হওয়া অনন্য সৌন্দর্যখনি। মালবাজার থেকে ৩২ কিমি দূরে। ঝান্ডিকে ঘিরেই রোজগারের রাস্তা পেয়েছেন দোর্জে ভুটিয়া, সঞ্জয় ছেত্রী, ধনসিংহ লামা, সোনম ভুটিয়া, সুনীল ছেত্রীরা। এঁরা প্রত্যেকে স্নাতক। রিসেপশন থেকে কিচেন কাউন্টার পর্যটকদের দেখভাল সব দায়িত্ব সামলাচ্ছেন এই তরুণরাই। অখ্যাত পাহাড়ি গ্রামে গড়ে ওঠা এই পর্যটন কেন্দ্রটি দিশা দেখাচ্ছে এলাকার যুবকদের। ঝান্ডি থ্রি নাইটস ফোর ডেজ -এর ব্যাপার নয়, অলস অবসরও।

পাহাড়ের ধাপে ধাপে ৭টি কটেজ। অবসর পূর্ণ হয় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সাদর সান্নিধ্যে। মালবাজার থেকে গাড়ির চাকা গড়াতেই সামনে পেছনে ডাইনে বাঁয়ে সবুজ চা-এর রাজ্য। গুরজাং ঝোরা, মালনদী, মিনগ্লাস, লোয়ার ফাগু চা-বাগান পেরোতে পেরোতে গরুবাথান বাজার। বাজার থেকে এ বার গাড়ি উতরাই পথে। চেল খোলার লোহার সেতু থেকেই দেখা যায় রংচঙের বৌদ্ধ চোর্তেন। সবুজে লেপ্টে থাকা পাহাড় কাছে আসে। পেরিয়ে যায় নিমবস্তি সুনতালের ছোট পাহাড়ি জনপদ। খাড়া চড়াই ধরে রাস্তা এক মোচড়ে কয়েক শো ফুট। এক পাশে পাথরের দেওয়াল, ও পাশে আকাশ আড়াল করা চিলৌনি, চাপ, কার্টুস, ধুপি, পানিসাজের জঙ্গল। এ পথে যাত্রিবাহী গাড়ির যাতায়াত নেই বললেই চলে। পাহাড় চাড়িয়ে পাহাড়ের চুড়োয় উঠে গাড়ির স্টার্ট বন্ধ। পাহাড়ের গায়ে এক মুঠো আশ্রয়বিলাসের আয়োজন মজুত। হাত বাড়ালে ছোঁয়া যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা। নজর টানে মেঘ জড়ানো এক কালো পাহাড় বা ব্ল্যাক মাউন্টেন। দূর পাহাড়ের মাথায় পাইন গাছের ছায়ায় ছায়ায় ‘চাকুমদারা’। প্রথম লেপচা কিং গাবাচক-এর এটা জন্মস্থান। দূরে আরও দূরে রুপোলি রিবনের মতো পিস, ঘিস, চেল খোলা। দূরবিনে চোখ রেখে পাখি দেখা, পাখি চেনার আনন্দ। রিসর্ট চত্বরের পাথুরে পথ ধরে গাছের ছায়ায় ছায়ায় অলস অন্য মনে। কটেজের গায়ে বারান্দায় বসে কফি মগে চুমুক দিতে দিতে খুচরো খুচরো স্মৃতি সঞ্চয়। ঝুপ করে সন্ধ্যা নামে পাহাড় পারের দেশে। চোখের আয়নায় তখনই অন্য দৃশ্যদূর সমতলে আলোয় আলোয় সেজে ওঠে তরাই-ডুয়ার্স। দু’হাজার দুশো ফুট ওপর থেকে সে ছবি দেখা এক অনন্য অভিজ্ঞতা। বলতে ভুলে গেছি এখানে শীত ক্ষণস্থায়ী নয়। খানিক দূরে যখন হাঁসফাঁস গরম, অলৌকিক জাদুকাঠির ছোঁয়ায় এখানে তখন ভেজা বাতাস, ঠান্ডা হাওয়া, যা ঝান্ডির ইউএসপি। পা বাড়ালেই হল।

Advertisement

পাখির খোঁজে স্পন, আরোহণ

উন্নয়নের হুড়োহুড়ি শহরটার বুকে এখনও তেমন করে আছড়ে পড়েনি। শহরের মাঝে বয়ে চলা তিস্তা ও করলা নদী, নদী বাঁধ, বাঁধের ধারে ধারে বহু বছরের পুরনো বড় বড় গাছপালা, নদীর চর। তাতে অসংখ্য পাখপাখালি। শীত শুরু হতেই দূর দূর থেকে উড়ে আসে অজস্র পরিযায়ী পাখির দল। নগরায়নের চাপে যখন পাখিদের বিপন্নতা বাড়ছে, শহর থেকে তারা চলে যাচ্ছে দূরে। সেখানে প্রতিদিনই এই শহরে দৃশ্যমান পাখির তালিকায় সংযোজিত হচ্ছে নতুন নাম। পাখি পর্যবেক্ষণে উৎসাহিত হচ্ছেন শহরের অনেকে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম। পাঁচ-ছ’বছর ধরে ‘স্পন’ নামে ২৫-৩০ জনের সংগঠন কাজ করে চলেছে।

এ শহরের বিশ্বপ্রিয় রাহুত, পাখি পর্যবেক্ষক হিসেবেই বেশি পরিচিত। পাখি বিষয়ে যাঁর গবেষণামূলক লেখা ছাপা হয়েছে দেশ-বিদেশের পত্রিকায়। তাঁর হাত ধরেই ‘স্পন’ এই শহরে ডকেট করেছে ২০৫ প্রজাতির পাখি।

অপর একটি সংগঠন ‘আরোহণ’ কাজ করছে তিস্তা ও করলা নদীর বাঁধ সংলগ্ন এলাকায়। তারা তিস্তা উদ্যানের পেছনের বাঁধে মাত্র পাঁচশ মিটারের মধ্যে ডকেট করেছে ৯০টির কাছাকাছি বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। মজার ব্যাপার এখানে একই সঙ্গে পরিযায়ী ‘ওয়েডার’ গোত্রের পাখি যেমন, রেড ক্রেস্টেড পোচার্ড, স্যান্ড পাইপার, রুডি শেল ডাক, ওয়্যাগ টেইল, ফেরুগিনাস ডাক, গ্যাডওয়াল, কটন পিগমি গুস, নরদার্ন পিন টেইলড (আঞ্চলিক নাম রাঙামুড়ি, কাদাখোঁচা, চখাচখি, খঞ্জনা, ভুতিহাঁস, পিংহাঁস, বালিহাঁস, বড় দিগর)-সহ নানা ফ্লাইক্যাচারযেমন এশিয়ান প্যারাডাইস ফ্লাই ক্যাচার, ভারডিটার ফ্লাই ক্যাচার (দুধরাজ, নীল কটকটিয়া), স্মল মিনিভেট (সহেলি), অরেঞ্জ বেলিড লিফ বার্ড (কমলা হরবোলা), ইউরেশিয়ান ট্রি স্প্যারো (গাছ চড়াই) ও শিকারি পাখি অসপ্রে (উৎক্রোশ), স্টেপ ইগল্, কেসট্রেল-এর সঙ্গে সহাবস্থান কাক, চিল, শালিক, টিয়া, বুলবুলি, হাড়িচাচা, বেনেবৌ, কোকিল, ধনেশ, কাঠঠোকরা, মাছরাঙা, ডাহুক-পানকৌড়িদের। এক শহরে এত পাখির একসাথে থাকার একটি বড় কারণ তিস্তা-করলার বিস্তীর্ণ ভেজা জমি। বন দফতরের সহযোগিতায় ‘আরোহণ’ এই অঞ্চলে পাখিদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখার জন্য প্রচার অভিযানে নেমেছে। শহরের বুকেই রয়েছে আরও অনেক বার্ড ওয়াচিং স্পট। যেমন পান্ডাপাড়া ইটভাটা সংলগ্ন জলাভূমি, দোমহনির তিস্তা সংলগ্ন জলা, মোহিতনগরে জলা ভূমি। সারা পশ্চিমবঙ্গে শকুনের সংখ্যা যেখানে প্রায় ৯৯ শতাংশ কমেছে সেখানে তিস্তা নদীর চরে সম্প্রতি এক লং বিলড ভালচার ডকেট করা হয়েছে। লেখা: মৌসুমী মজুমদার।

রাজবংশী ভাষা কবিতার ‘বৈঠা’

আঠাশ বছর ধরে প্রকাশিত হচ্ছে রাজবংশী ভাষার কবিতা সংকলন ‘বৈঠা’। সবটাই হাতে লেখা। কবিতার পাশাপাশি প্রতিটি পৃষ্ঠাতেই রয়েছে অলংকরণ। বাদ পড়েনি বাংলা এবং রাজবংশী ভাষায় লেখা নানা উক্তিও। বৈঠা-র ‘এই সংখ্যাতে বৈঠা ধরিছেন’ রামেশ্বর রায়, শ্যামল কুমার চৌধুরী, দীপক কুমার রায়, পাঞ্চালি সিনহা, সুবীর সরকার, শচীমোহন বর্মন, জাফর ওয়াজেব, অভিজিৎ দাস, সূর্যময় সিরাজ, অজিত কুমার বর্মা এবং আমিনুর রহমান। এই সংকলনের প্রচ্ছদ, অলংকরণ, নামাঙ্কন এবং সম্পাদনার দায়িত্ব সামলেছেন আমিনুর রহমান। যে সময়ে মাতৃভাষাকে অবহেলা লেটেস্ট ট্রেন্ডকোচবিহারে গীতালদহ থেকে ‘মায়ের ভাষা মাটির ভাষা’-য় প্রকাশ পাওয়া এই সংকলন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ।

লেখা: সুদীপ দত্ত।

উত্তরবঙ্গ: প্রসঙ্গ দার্জিলিংনামা ১

দার্জিলিং বিষয়ক প্রবন্ধ সংকলন। তিন প্রবন্ধকার আনন্দগোপাল ঘোষ, সুদীপ খাসনবিশ এবং সুপম বিশ্বাসের প্রবন্ধ স্থান পেয়েছে গ্রন্থে। এ গ্রন্থের লেখকরা গুরুত্ব দিয়েছেন বাংলা ভাষার তথ্যকে। পাশাপাশি ব্যবহার করেছেন নেপালি ভাষার তথ্যও। গ্রন্থে রয়েছে ‘বাঙালি মনীষীদের স্মৃতিধন্য দার্জিলিং’, ‘ষষ্ঠ তফসিলউদ্ভব, বিকাশ ও প্রয়োগ’, ‘ইতিহাস-আলোয় দার্জিলিং’, ‘জেলার তরাই অঞ্চলে স্থাননাম’, ‘চা-বাগানের বাঙালি বাবুদের সাংস্কৃতিক জীবনসে-কাল এ-কাল’। ‘দার্জিলিংনামা’ শব্দ ব্যবহার প্রসঙ্গে গ্রন্থকাররা জানান, ইতিহাস নয়, ‘নামা’ ফারসি শব্দ।” ‘নামা’ ও ইতিহাসকে একই পঙ্ক্তিতে বসাতে চাননি তাঁরা। গ্রন্থে তাই বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ‘পাহাড়ের রানি’কে দেখা। সেই দেখার কাজে গ্রন্থকাররা পুরোপুরি সফল।

লেখা: সুদীপ দত্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন