বিগত দুই দশক ধরে উত্তরবঙ্গের চা-শিল্প সঙ্কটগ্রস্ত। আরও সত্যি করে বললে চা-শিল্পে চলছে একপ্রকার মনুষ্য-সৃষ্ট মন্দা। যার নির্মম বলি হয়ে চলেছেন অসংখ্য আদিবাসী চা-শ্রমিক, আর যাদের পরিণতি অকাল অনাহার মৃত্যুতে। ইতিমধ্যে অবশ্য কেন্দ্রের নেতা, মন্ত্রী ও সংবাদমাধ্যমের অতি উৎসাহী প্রচারে সাধারণ মানুষের মধ্যে এ রকম একটি ধারণা তৈরি হয়েছে যে বর্তমান চা-শিল্পের এই সংকটের জন্য দায়ী বাজারে চা-পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়া। তার উপর উত্তরোত্তর চায়ের উৎপাদন বৃদ্ধি। এক কথায়, উৎপাদন আর কম চাহিদার দরুন লভ্যাংশ হ্রাস নাকি এই সঙ্কটের জন্য দায়ী। চা-শিল্পে তথ্য-পরিসংখ্যান কিন্তু অন্য কথা বলছে।
আমাদের দেশে চায়ের অভ্যন্তরীণ চাহিদা (প্রতি বছর বৃদ্ধি পায় শতকরা ৩.৩ হারে) এবং রফতানির সমন্বিত প্রয়োজন উৎপাদনের তুলনায় অনেক বেশি। এক হিসাব অনুযায়ী ২০০৬ সালে আমাদের দেশে চা-এর অভ্যন্তরীণ চাহিদা ছিল ১০১০ মিলিয়ন কেজি। আর উৎপাদন এবং আমদানি সম্মিলিত ভাবে ছিল ৯৮০ মিলিয়ন কেজি। অর্থাৎ ঘাটতি ছিল ৩০ মিলিয়ন কেজি। ফলত চায়ের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। কিন্তু কেন চা-শিল্পে এমন সাজানো মন্দা-মন্দা খেলা? আসলে চা-শিল্পপতি, সরকার উভয়ের লক্ষ্য হল চা-বাগানের বিপুল জমি। যেন-তেন-প্রকারেণ একবার মন্দার দোহাই দিয়ে কোনও চা-বাগান বন্ধ করাতে পারলেই কেল্লা ফতে। তার পর বন্ধ চা-বাগানের জমিতে চলবে রিয়াল এস্টেটের ফাটকা ব্যবসা কিংবা হাল আমলের টি-ট্যুরিজম। কিন্তু আইন মোতাবেক চা-বাগানের জমি অন্য কাজে ব্যবহার করা যায় না। তাহলে আইনের কী হবে? ২০০৭-এ রাজ্য পর্যটন দফতর বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে যে আইন পাল্টে দ্রুত চা-শিল্পের জমি অন্য কাজে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হবে। সেই মর্মে ইতিমধ্যেই আমাদের রাজ্য টি-ট্যুরিজম চালু করার জন্য কেন্দ্রের অনুমোদন চায়। প্রায় মেঘ না চাইতে বর্ষণের মতো কেন্দ্র শুধু আবেদন মঞ্জুরই নয়, ৮০ কোটি টাকা বরাদ্দও করেছে। অতএব এ বার বিকৃত লালসা ও পচাগলা ভোগবাদী সংস্কৃতির অন্যতম বাহন টি-ট্যুরিজমে ঝাঁপিয়ে পড়ার পালা। প্রচুর মুনাফা। ‘ওয়ানটাইম ইনভেস্ট, ফুল টাইম প্রফিট।’ এ সব নাকি বাগানের স্বার্থে, শ্রমিকের স্বার্থে, সর্বোপরি দেশের স্বার্থে। চালচিত্র বলছে দেশি-বিদেশি বেসরকারি পুঁজির সহযোগিতায় গড়ে ওঠা টি-ট্যুরিজম সাধারণ মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। টি-ট্যুরিজমের জন্য বাগানে স্থাপিত ভিলা, গেস্ট হাউস, সাঁতারের পুল, ডান্স বার, গল্ফ সেন্টার, ক্যাসিনো প্রভৃতি আমোদ ও ফুর্তির নানা উপকরণ আম-জনতার জন্য নয়। সবই ধনী শ্রেণির জন্য। এ লালসায় নিবৃত্তির উৎস হবেন স্থানীয় আদিবাসী মা-বোনেরা। দেশি-বিদেশি বহু নামী-দামি সংস্থা এতে মোটা অঙ্কের অর্থ লগ্নি করেছে। কেন্দ্রের বড় মাঝারি ছোট সব নেতা-মন্ত্রী পুলকিত। টি-ট্যুরিজম ছাড়া যে চা-শিল্পের সঙ্কট, অনাহারে মৃত্যু ঠেকানো অসম্ভব!
ঝন্টু বড়াইক, শিলিগুড়ি।
স্বপ্নের মানসাই সেতু গড়া হচ্ছে
কাজ চলছে মানসাই সেতুর।
উত্তরজনপদের প্রত্যন্ত মহকুমা দিনহাটার সঙ্গে সিতাই ব্লকের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ঘিরে সিতাই ব্লকের বাসিন্দাদের দুঃখের শেষ নেই। সড়ক ব্যবস্থার মাঝে মানসাই নদী দুঃখের কারণ। খরা মরসুমে চর পড়ে গেলেও ভরা বর্ষায় মানসাই কী ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে তা এলাকার বাসিন্দারা জানেন। জীবন হাতে নিয়ে নদী পারাপার করেন দু’পারের মানুষ জন। স্বাধীনতার কয়েক দশক কেটে গেলেও মানসাই নদীর উপর সেতু করার গুরুত্ব বিগত সরকারের আমলে দেখা হয়নি। ছিল শুধু প্রতিশ্রুতি আর শিলান্যাসের বাড়াবাড়ি। রাজ্যে ক্ষমতার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে গুরুত্ব পেয়েছে সিঙ্গিমারী অঞ্চলে মানসাই নদীর বুকে সেতু। একুশটি পিলারের এই সেতুর কাজ চলছে জোড়কদমে। এই সেতু তৈরি হলে দিনহাটা সিতাইয়ের মানুষ জনের দুঃখ ঘুচে যাবে। উল্লেখ্য সিতাই ব্লক হল তামাক চাষে বিখ্যাত। এখানকার তামাকের গুণগতমান উন্নত। ফলে অর্থকরী ফসলের বাণিজ্যে এই সেতুর উপর অনেকটাই নির্ভর করে। কাজ দ্রুত শেষ হোক আমরা উদ্বোধনের অপেক্ষায় রইলাম।
শুভাশিস দাস, দিনহাটা।