উন্নয়নে বরাদ্দ খরচ হয়নি, উঠল অভিযোগ

উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ টাকা সময়মতো খরচ না করার অভিযোগ উঠল কোচবিহার জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েত সমিতিগুলির বিরুদ্ধে। শুক্রবার কোচবিহার রাসমেলার মাঠে জেলা পঞ্চায়েত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথন জানান, এখনও কোচবিহার জেলা পরিষদের হাতে ৫০ কোটি এবং পঞ্চায়েত সমিতিগুলির হাতে ১০০ কোটি টাকা পড়ে রয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৪০
Share:

উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ টাকা সময়মতো খরচ না করার অভিযোগ উঠল কোচবিহার জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েত সমিতিগুলির বিরুদ্ধে। শুক্রবার কোচবিহার রাসমেলার মাঠে জেলা পঞ্চায়েত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথন জানান, এখনও কোচবিহার জেলা পরিষদের হাতে ৫০ কোটি এবং পঞ্চায়েত সমিতিগুলির হাতে ১০০ কোটি টাকা পড়ে রয়েছে। ওই টাকার কাজ মার্চ মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে। তাঁর বক্তব্য অবশ্য মানতে নারাজ জেলা পরিষদের সভাধিপতি পুস্পিতা ডাকুয়া। তিনি জানান, এখন আমরা ১১৭ কোটির কিছু বেশি টাকা হাতে পেয়েছি। তাঁর দাবি, “ সেই টাকা খরচ হয়েছে। আমরা সময় মতো টাকা খরচ করছি। নিজস্ব তহবিলের কিছু টাকা আমাদের কাছে রয়েছে। সেগুলি গাড়ির তেল সহ নানা কাজে খরচ করতে হয়।”

Advertisement

সভাধিপতির পক্ষ নিয়ে পূর্ত দফতরের পরিষদীয় সচিব রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, ৫০ কোটি টাকার হিসেব পুরনো। ইতিমধ্যে অনেক কাজ হয়ে গিয়েছে। তিনি একটি তথ্য তুলে ধরে জানান, ইন্দিরা আবাস যোজনার ৩৩ কোটি টাকা বিলি করা হয়েছে। নির্মল ভারত অভিযানের ৮ কোটির মধ্যে ৬ কোটির কাজ হয়েছে। বাকি আরও প্রকল্পের ১২ কোটি টাকার টেন্ডার হয়েছে বলে রবিবাবুর দাবি।

সরকারি কর্তা-জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে দুরকম মত কেন? রাজ্য পঞ্চায়েত দফতরের উপসচিব সুদীপ্ত পোড়েল বলেন, “ওই বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। জেলাশাসক বলতে পারবেন।” ফের জেলাশাসককে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানান, তাঁর কাছে জানুয়ারি মাসের হিসেব রয়েছে। তার পরে কিছু টাকা খরচ হয়েছে আবার কিছু টাকা ঢুকেছে।

Advertisement

জেলা প্রশাসন সুত্রের খবর, পঞ্চায়েত স্তরে উন্নয়নের টাকা যাতে দ্রুত খরচ হয় সে ব্যাপারে জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে উত্তরবঙ্গে এসে বৈঠক করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায়। ওই বৈঠকেই কোচবিহার জেলা পরিষদে ৫০ কোটি টাকা এবং পঞ্চায়েত সমিতিগুলিতে ১০০ কোটি টাকার মতো পড়ে আছে দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। এর পরেই বিষয়টি নিয়ে কোচবিহার জেলার উপরে চাপ তৈরি হয়। বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন বলেন, “উন্নয়নের টাকা যাতে সময়মতো খরচ করা হয় সে ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী বারে বারে উদ্যোগী হয়েছেন। সেই কাজ আমাদের করতে হবে।” এদিন পঞ্চায়েত দফতরের উপসচিব জানান, ১০০ দিনের কাজে কোচবিহার জেলাকে শোকজ করেছে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ম অনুযায়ী, ১০০ দিনের কাজের বরাদ্দ টাকার ষাট শতাংশ টাকা কৃষি ক্ষেত্রে খরচ করতে হবে, সেখানে মাত্র কুড়ি শতাংশ টাকা কোচবিহার জেলা খরচ করতে পেরেছে।

এদিন পরিষদীয় সচিব রবীন্দ্রনাথবাবু ইন্দিরা আবাসন প্রকল্পে ঘর বিলি এবং রাস্তা তৈরিতে দুর্নীতি নিয়ে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান এবং ঠিকাদারদের সতর্ক করে দেন। তাঁর দাবি, গ্রামে পাকা রাস্তার পরিবর্তে মোরামের রাস্তা তৈরিতে বেশি উৎসাহী প্রধানরা। ওই রাস্তায় কাজ না করেই টাকা উঠিয়ে নেওয়া হয় বলে তাঁর সন্দেহ। তিনি বলেন, “মোরামের রাস্তা তৈরিতে প্রধানদের বেশি ঝোঁক। ওই রাস্তায় চুরি করা সহজ। প্রধানরা অনেক সময় মিষ্টি খেয়েও কাজ করে দেন। মোরামের রাস্তা তৈরির কাজ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া দরকার।” তিনি দাবি করেন, মোরামের রাস্তা সংস্কারের নামেও টাকা বরাদ্দ করা হয়। অথচ বহুক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে রাস্তা খুড়ে ফের রোলার করে টাকা তুলে নেওয়া হয়। ইন্দিরা আবাস প্রকল্পে বেনিফেসিয়ারিদের কাছ থেকে অনেকে টাকা তুলছেন বলেও দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, “গরিব মানুষের টাকা তছরুপের বিষয়ে কোনও প্রমাণ পেলে এফআইআর করা হবে। কাউকে ছেড়ে কথা বলা হবে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন