উত্তরবঙ্গের চা শিল্পের রুগ্ন অবস্থা। অনেক বাগান বন্ধ। পাশাপাশি গৌরব হারিয়েছে দার্জিলিং এর একসময়ের জনপ্রিয় কমলা লেবুও। এই সব সমস্যা মেটাতে তো বটেই, শিল্পের উন্নয়নেও উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখযোগ্য কোনও ভূমিকা নেই বলে অভিযোগ উঠল। মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইউনিভার্সিটি ইন্ডাস্ট্রি লিঙ্কেজ প্রোগ্রাম’ বিষয়ক সেমিনারে এই প্রসঙ্গ তুলে ধরলেন পর্যটন সংস্থাগুলির সংগঠনের প্রতিনিধি থেকে কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি (সিআইআই)-এর প্রতিনিধি, শিল্পোদ্যোগী সকলেই।
সরকারি সূত্রের খবর, বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের তরফে এ ধরনের অনুষ্ঠানের জন্য অন্তত ৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়ে থাকে। কিন্তু কেবল সেমিনার আয়োজন করে কাজ সারলে আখেরে যে কিছু হওয়ার নেই, এ দিন তা ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন আমন্ত্রিত শিল্পোদ্যোগীরা। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোমনাথ ঘোষ অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী ভাষণে বলেন, “অতীতে একটি জলবিদ্যুত্ প্রকল্প করার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছিলেন। ইউনির্ভার্সিটি কনসালটেন্সি সেলও রয়েছে। বায়ো ডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক নিয়ে গবেষণা চলছে। সামাজিক এবং বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে এই বিশ্ববিদ্যালয় সচেষ্ট।”
তবে শিল্পের উন্নয়নের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে উদ্যোগীদের যোগসূত্র গড়া যে প্রয়োজন তা উপলব্ধি করছেন প্রায় সকলেই। উত্তরবঙ্গে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়নে, চা পর্যটনের প্রসারে শিল্পোদ্যোগীদের সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়ার দাবি তুলেছেন সেমিনারের অংশগ্রহণকারীরা।
পর্যটন সংস্থার কর্ণধার রাজ বসু বলেন, “চা শিল্পের এই বিপর্যয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় কী কোনও সদর্থক ভূমিকা নিয়েছে? উপযোগী পাঠ্যক্রম না হওয়ায় ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্টের পাঠ্যক্রম চাল করেু বন্ধ করে দিতে হয়েছে। সেখানে বিদেশের পর্যটন নিয়ে পড়ুয়াদের পড়ানো হত। অথচ এখানকার পর্যটন কেন্দ্রগুলি নিয়ে ছাত্র ছাত্রীদের কোনও ধারণা নেই। আমরা চাইলেও এখান থেকে পাশ করা ছাত্রছাত্রীদের কাজে নিতে পারিনি।” সিআইআই-এর উত্তরবঙ্গ এবং সিকিম শাখার চেয়ারম্যান প্রবীর শীল জানান, এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উত্তরবঙ্গের শিল্পের উন্নয়নে আরও বেশি সহায়তা দরকার।
শিল্পোদ্যোগী কমল মিত্তাল বলেন, “প্রাচীন কালে গুরুকূলেও যে সময়কার যুুগোপযোগী শিক্ষা দেওয়া হত। যাতে শিক্ষা লাভ করে তারা সমাজে তা কাজে লাগাতে পারেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়েও শিল্পের উপযোগী পড়াশোনা, গবেষণা দরকার। পাশাপাশি সরকারে স্তরেও উদ্যোগ নিতে হবে।”
কলা, বাণিজ্য এবং আইন শাখার ডিন অমিতাভ মুখোপাধ্যায়, রথীন বন্দ্যোপাধ্যায়, মিনাক্ষী চক্রবর্তী, বাসুদেব বাসুর মতো শিক্ষক-অধ্যাপকেরাও চান শিল্পদ্যোগীরা যা চাইছেন, এই ধরণের সেমিনার থেকেই সেই চেষ্টার সূচনা হোক। শিল্পোদ্যোগীদের দাবি মেনে বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে তোলা হোক ‘কমন ফোরাম’। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষকরা ছাড়াও শিল্পদোগীরা থাকবেন। তাতে শিল্পের সমস্যা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করা সহজ হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রধান রথীন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “শুধু এই সেমিনারেই শেষ নয়। একে একে বিভিন্ন বিষয়ে আলাদা ভাবে আলোচনার আয়োজন করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে শিল্পদ্যোগীদেরও যুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।”