উৎসবের বসে আঁকোতে বিশৃঙ্খলা, ভোগান্তি

গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ডে নাম তোলার উৎসাহে প্রায় ১৫ হাজার ছাত্র-ছাত্রীকে নিয়ে বসে আঁকো প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল উত্তরবঙ্গ উৎসব কমিটি। কিন্তু হই-হট্টগোল আর বিশৃঙ্খলায় দফায় দফায় নাকাল হতে হল প্রতিযোগীদের। কড়া রোদে ছাউনি না থাকায় একাধিক শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ। আবার ভিড়ের চাপে বহু ছাত্রছাত্রী স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অভিভাবকদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৪০
Share:

শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে বসে আঁকো প্রতিযোগিতা। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ডে নাম তোলার উৎসাহে প্রায় ১৫ হাজার ছাত্র-ছাত্রীকে নিয়ে বসে আঁকো প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল উত্তরবঙ্গ উৎসব কমিটি। কিন্তু হই-হট্টগোল আর বিশৃঙ্খলায় দফায় দফায় নাকাল হতে হল প্রতিযোগীদের।

Advertisement

কড়া রোদে ছাউনি না থাকায় একাধিক শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ। আবার ভিড়ের চাপে বহু ছাত্রছাত্রী স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অভিভাবকদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। শুধু তাই নয়, সার্টিফিকেট, মেডেল, টিফিন এবং খাবার জল না পেয়ে মঞ্চে উঠেই ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায় অনেককেই। প্রতিযোগিতার শেষ অবধি মঞ্চে বসে সব কিছু দেখার পর উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব আগামী দিনে নিখুঁতভাবে প্রতিযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিলেন। মন্ত্রীর কথায়, “একসঙ্গে একটি জায়গায় এতজন ছবি আঁকল, আর কোথাও এমন হয় বলে জানি না। আমরা সমস্ত তথ্য এবার গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে পাঠাব। কিছু সমস্যা, ত্রুটি থাকতে পারে। আগামী দিনে বিষয়গুলি মাথায় রাখা হবে।” তিনি জানান, স্টেডিয়ামের মেলা প্রাঙ্গন থেকে কিছু সার্টিফিকেট মেডেল দেওয়া হয়েছে। বাকি সব স্কুলে স্কুলে পৌঁছে দেওয়া হবে।

উদ্যোক্তাদের দাবি, গতবছর কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে বসে আঁকো প্রতিযোগিতায় ১০,৩৬৪ জন অংশ গ্রহণ করেছিল। এ বার অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ১৫ হাজার হবে বলে ঘোষণা করা হয়। উদ্যেক্তাদের তরফে জয়ন্ত করের দাবি, “এবার ১৬,৪৮৮ জন ছবি আঁকায় অংশ নেয়। প্রতিবার সংখ্যাটা বাড়তে থাকায় ব্যবস্থাপনায় কিছু ত্রুটি হচ্ছে।” তবে সবচেয়ে বেশি যে সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অভিভাবকেরা সরব হয়েছেন তা হল দুপুরে খোলা মাঠে ছবি আঁকার প্রতিযোগিতা। অথচ মাথার উপরে কোনও ছাউনি’র ব্যবস্থা করা হয়নি। তাঁরা জানান, ঘোষণা মতো নাম নথিভুক্ত করার জন্য বলা হয়েছিল সকাল ১১টা থেকে। বসে আঁকো শুরু হয় দুপুর ১টায়। চলে দেড় ঘন্টা। সকাল থেকে কড়া রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকায় অনেক ছেলেমেয়েই অসুস্থ হয়ে পড়ে।

Advertisement

নিউ জলপাইগুড়ির আরতি বিশ্বাস, শালুগাড়ার সুযশ্বিনী দেববর্মন, শক্তিগড়ের দেবার্জি কুণ্ডু বা বিশু দাসের মত অন্তত ১০ জন কচিকাঁচাকে মঞ্চে তুলে সুস্থ করতে হয়েছে। অনুষ্ঠানে থাকা মেডিক্যাল টিমের সদস্যরা জানান, দীর্ঘক্ষণ রোদে দাঁড়িয়ে অনেকেরই মাথা ঘোরা, চোখে অন্ধকার দেখা বা বমি’র সমস্যা হয়। লবন চিনি মেশানো ঠান্ডা জল খাইয়ে সবাইকেই সুস্থ করা হয়েছে। কাউকে হাসপাতালে নিতে হয়নি। অনেকে পরে মঞ্চে বসেও ছবি এঁকেছে।

‘এসো ইতিহাস গড়ি, পনেরো হাজার একসঙ্গে রং-তুলি ধরি’-এই স্লোগানকে সামনে রেখেই এবারের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। শিলিগুড়ি মহকুমা, রাজগঞ্জ এবং ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি এলাকার বিভিন্ন প্রাথমিক ও হাইস্কুল মিলিয়ে মোট ১৬৮টি সরকারি স্কুল অংশগ্রহণ করে। এ ছাড়াও সামরিক স্কুল-সহ ৫০টির মত বেসরকারি স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাও প্রতিযোগিতায় যোগ দেয়। এ ছাড়া ব্যক্তিগতভাবেও ছেলেমেয়েদের নিয়ে এসেছিলেন অভিভাবকেরা। চারটি বিভাগে ৩ বছর থেকে ১০ বছর এবং তার বেশি বয়সসীমার প্রতিযোগীরাও ছবি আঁকে। যেমন খুশি আঁকো থেকে জঙ্গল, চা বাগান, আমার শহর ও গ্রাম, দলবদ্ধভাবে কাজ করা এবং মুখের ছবি আঁকতে বলা হয়েছিল। ‘বিচারকে’র ব্যাজ লাগিয়ে ঘোরাঘুরি করতেও দেখা গিয়েছে বহু তৃণমূল নেতানেত্রী কে।

আড়াইটা নাগাদ আঁকা শেষ হতেই শুরু হয় বিশৃঙ্খলা। অভিভাবক এবং স্কুলের দিদিমনি ও মাস্টারমশাইদের না পেয়ে কান্নাকাটি শুরু করে কচিকাঁচারা॥

সকাল থেকে স্টেডিয়ামে এই অবস্থার সঙ্গে শহরের বাসিন্দারাও দুর্ভোগ পোহান যানজটে। স্টেডিয়ামের চারদিকে যান নিয়ন্ত্রণ, প্রতিযোগীদের বাসের ভিড়ে হাঁটাচলা করাও সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল বাসিন্দাদের। বিশেষ করে সরস্বতী পুজোর আগের দিন বিধান মার্কেটে বাজার, প্রতিমা কিনতে এসে অনেকেই নাকাল হন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন