আলিপুরদুয়ার জেলা ঘোষণার পরে উন্নয়নের আশায় বুক বাঁধছেন ডুয়ার্সের জনজাতি গোষ্ঠীর বাসিন্দারা। ডুয়ার্সের টোটো, রাভা, মেচ প্রভৃতি জনজাতির লোকজনকে জেলা সদর হিসেবে জলপাইগুড়িতেই যেতে হত। গাড়ি ভাড়া খরচ হত মোটা টাকা। কাজ সেরে দুর্গম পথ পেরিয়ে বাড়ি ফেরাও অনিশ্চিত হয়ে পড়ত। সে পথ পেরিয়ে প্রশাসনের কর্তারাও গ্রামে পৌঁছতেন না বলে অভিযোগ ছিল। এ বার তাঁরা উন্নয়নের কাজে শরিক হবেন বলে আশা করছেন বাসিন্দারা। তাই শুক্রবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী আলিপুরদুয়ারকে আলাদা জেলা হিসাবে ঘোষণা করার পর খুশি ডুয়ার্সের টোটো, রাভা, মেচ জনজাতির লোকেরা।
ডুয়ার্সের মাদারিহাট থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে ভুটান পাহাড়ের কোলে টোটোদের গ্রাম। গ্রামে পৌঁছতে হলে তিনটি পাহাড়ি ঝোরা পেরোতে হয়। ছোট ছোট পাথর বিছানো পথে গাড়ির ঝাঁকুনি সহ্য করে টোটোপাড়া যাতায়াত করতে হলে ঘাম ছুটে যায় সকলের। বাসিন্দাদের অভিযোগ, খুব প্রয়োজন ছাড়া তাই ওই পথে পা মাড়ান না জেলার কোনও দফতরের অফিসারেরা। জলপাইগুড়ির বাসিন্দা এক সরকারি আধিকারিকই বলছেন, “টোটোপাড়া যাতায়াত করতে হলে শরীর খারাপ হয়ে যায়। কাজ করার ইচ্ছা ধাকলেও শরীর দেয় না সেখানে যেতে। সরকারি অফিসাররা নিয়মিত না আসাতে দিনের পর দিন টোটোদের দুর্ভোগ ক্রমশ বাড়লেও তার খবরাখবর রাখারও সময় নেই কারও।”
টোটো সম্প্রদায়ের কিছু বাসিন্দা জানান, গ্রামে আসার রাস্তার হালও খুব খারাপ। অনেক আবেদন নিবেদন করে টোটোপাড়াতে যে রাস্তা চার বছর আগে তৈরি হয়েছিল সে রাস্তার অস্তিত্ব নেই। নতুন করে সে রাস্তা তৈরি করার আগ্রহও নেই বলে অভিযোগ। সরকারি কর্তারা টোটোপাড়া এলে রাস্তার জন্য আবেদন নিবেদন করা হয় ঠিকই। তবে তাঁরা ফিরে গেলে সে কথা ভুলে যান বলে ক্ষোভ বাসিন্দাদের। অভিযোগ, পাঁচ ঘণ্টার পথ পেরিয়ে রাস্তার তদ্বির করতে জলপাইগুড়ি নিয়মিত যাতায়াত সম্ভব নয়। মাঝেমধ্যে পানীয় জলের সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করলেও জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের কেউ সে ভাবে নজর রাখেন না।
টোটো ছাড়াও নতুন আলিপুরদুয়ার জেলার অন্তর্গত হবে অপর পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী রাভা সম্প্রদায় অধ্যুষ্যিত ১০টি গ্রাম। মেন্দাবাড়ি, কুমরাই, আন্দু, বানিয়া গ্রামগুলি জঙ্গল লাগোয়া। সেচ ব্যবস্থা নেই গ্রামগুলিতে। পানীয় জল সমস্যা আছে। জেলা সদর জলপাইগুড়ি দূরে। তাই জেলার কর্তারা সচরাচর গ্রামে যাতায়াত না করায় উন্নয়ন তেমন ভাবে হচ্ছে না বলে অভিযোগ।
এ বার তাঁদের দুর্দশা ঘুচবে বলে তাই আশা এই এলাকার বাসিন্দাদের। আলিপুরদুয়ার জেলা হলে সেখানে যেতে সময় লাগবে মাত্র দেড় ঘণ্টা। যে কেউ সকালে গিয়ে বিকেলের মধ্যে বাড়ি ফিরতে পারবেন।
গ্রামের বাসিন্দা তথা স্থানীয় ব্যাঙ্ক ম্যানেজার ভক্ত টোটো বলেছেন, “ভোরে জলপাইগুড়ি রওনা দিলেও বাড়ি ফেরা অনিশ্চিত। খারাপ রাস্তা ও জঙ্গলের পথ হাতির উপদ্রবের কারণে বিকেল সাড়ে চারটার পর টোটোপাড়ায় আসার গাড়ি মেলে না। জলপাইগুড়ি গিয়ে ফেরার সময় তাই প্রায় সময় মাদারিহাটে রাত কাটিয়ে পরের দিন বাড়ি ফিরতে হয়। এখন তো অনেক সুবিধা হবে।” অশোক টোটো বলছেন, “কর্তারা এখন খোঁজ নিতে নিয়মিত আসবেন বলে মনে করছি। পৃথক জেলা হলে বহু টাকা আসবে। তাতে ঝোরাগুলির উপর সেতু যেমন হবে, তেমনই আমাদের এখানকার উন্নয়ন হবে। পর্যটনের বিকাশ ঘটবে।”