এ বার পুলিশকেও মারধর ছোট যাত্রিবাহী গাড়ির চালকদের

সিটি অটো, ছোট যাত্রিবাহী গাড়ির একশ্রেণির চালকদের দৌরাত্ম্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ রয়েছে শিলিগুড়িতে। কখনও দুর্বব্যহার, কখনও যাত্রীদের মারধর, হুমকির ঘটনাও ঘটেছে। এমনকী, ট্রাফিক পুলিশকে রড দিয়ে মারার ঘটনাও ঘটেছে। সোমবার সকালে শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে তিনবাতি মোড়ে ফের পুলিশের উপরে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠল একটি ছোট গাড়ির চালক সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। তাঁরা পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করেছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৪ ০২:১৩
Share:

পুলিশের ভাঙচুর হওয়া গাড়ি। পাশে দাঁড়িয়ে আহত কালচিনির সার্কেল ইন্সপেক্টর কার্তিক ভট্টাচার্য। সোমবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

সিটি অটো, ছোট যাত্রিবাহী গাড়ির একশ্রেণির চালকদের দৌরাত্ম্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ রয়েছে শিলিগুড়িতে। কখনও দুর্বব্যহার, কখনও যাত্রীদের মারধর, হুমকির ঘটনাও ঘটেছে। এমনকী, ট্রাফিক পুলিশকে রড দিয়ে মারার ঘটনাও ঘটেছে। সোমবার সকালে শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে তিনবাতি মোড়ে ফের পুলিশের উপরে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠল একটি ছোট গাড়ির চালক সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। তাঁরা পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করেছেন। একজন সার্কল ইন্সপেক্টরের মুখ ফাটিয়ে রক্তারক্তি কাণ্ড ঘটিয়ে পালিয়েছেন অভিযুক্তেরা।

Advertisement

এ দিন বেলা ১০টা নাগাদ ‘উত্তরকন্যা’র অদূরে কামরাঙ্গাগুড়ি ওভারব্রিজের কাছে এই ঘটনায় অবাক স্থানীয় বাসিন্দারা। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে। অন্যতম অভিযুক্ত ওই ছোট গাড়ির চালককে অবশ্য পুলিশ ধরতে পারেনি। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগমোহন বলেন, “অভিযুক্তদের কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও কয়েকজনকে খোঁজা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

কিন্তু এই ঘটনায় এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ। পুলিশ সূত্রের খবর, এদিন শিলিগুড়ি ঢোকার মুখে তিনবাতি ওভার ব্রিজের কাছে রাস্তা আটকে যাত্রী ওঠাচ্ছিল ছোট গাড়িটি। তাতে রাস্তায় অযথা যানজটের সৃষ্টি হয়। সাধারণ মানুষের বক্তব্য, এমন ভাবেই এই ছোটগাড়িগুলি প্রায়ই যাত্রী ও এলাকার মানুষের ভোগান্তির কারণ হয়। এক অফিসার চালককে ধমক দেওয়ায় গণ্ডগোলের সূচনা ঘটে। ইন্সপেক্টর পারিজাত সরকার বলেন, “আমরা ওইভাবে যাত্রী ওঠানোর প্রতিবাদ করল ওরা পাল্টা হুমকি দেয়। স্থানীয় কিছু লোকজনও জড়ো হয়ে হুমকি দেয়। আমরা পুলিশকর্মী জেনেও তারা ক্রমাগত হুমকি দিতে থাকে। হঠাৎই কিছু লোক আমাদের গাড়ি ভাঙচুর শুরু করে।” গাড়ির সামনে ও পিছনের কাচ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। কার্তিকবাবুকে মুখে ঘুঁষি মারেন একজন। তাঁকে মারধরে বাধা দিতে গিয়ে জখম হন চালকও। পারিজাতবাবুকেও মারা হয় বলে অভিযোগ। সবচেয়ে বেশি জখম হন কার্তিক ভট্টাচার্য। তাঁর চোয়াল ফেটে যায়। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। পরে তিনি থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন। কার্তিকবাবু বলেন, “আচমকাই একজন আমাকে ঘুঁষি মারে চোয়ালে। চোয়াল ফেটে গিয়ে রক্ত বেরোতে থাকে।”

Advertisement

পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, ওই এলাকায় চলা সমস্ত অটো ও ছোট গাড়ির চালক ও মালিকরাই তৃণমূল আইএনটিইউসির সদস্য সমর্থক। পুলিশের বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন সিটুর দার্জিলিং জেলা সভাপতি অজিত সরকার। তাঁর দাবি, “ওই এলাকায় সমস্ত অটো, ছোট গাড়ি আইএনটিটিইউসি ইউনিয়নের। শাসক দলের সমর্থনেই তাদের এত সাহস বেড়েছে।” জেলা কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক বিকাশ সরকারও এই ঘটনায় পুলিশকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “ছোট গাড়ি, অটোচালকদের নিয়ে অনেক অভিযোগ রয়েছে। তবে পুলিশকে পেটানো ভয়ঙ্কর ঘটনা। এর দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে এদের সাহস আরও বেড়ে যাবে।”

এই ঘটনায় দায় অবশ্য স্বীকার করেননি ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি আইএনটিটিইউসির ব্লক সভাপতি বিজন নন্দী। তিনি বলেন, “অটো চালকদের সঙ্গে বচসায় পুলিশ অফিসারদের মার খেতে হয়েছে। তবে অভিযুক্তরা কেউই আমাদের সংগঠনের নয়।” যদিও ফুলবাড়ি-১ তৃণমূল ব্লক সভাপতি রাজীব মণ্ডল বলেন, “অভিযুক্তরা সকলেই স্থানীয় বাসিন্দা। চালকদের মধ্যে থেকে কেউ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়।”

অপরাধীর কড়া শাস্তির দাবি করেছেন, সিটি অটো ওয়ার্কার্স ওয়েলফেয়ার অ্যসোসিয়েশনের সম্পাদক নির্মল সরকারও। তিনি বলেন, “এই ধরণের ঘটনা সংগঠন সমর্থন করে না। তবে কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তা পরিস্কার নয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement