‘এক ফোনে-একাধিক সুবিধা’। ল্যান্ডলাইন থেকে ব্রডব্যান্ড। মাল্টিমিডিয়া থেকে ভিডিও চ্যাট, ওয়াইফাই। ফ্যাক্স থেকে আইএসডিএন, কী নেই! সংযোগ শুধুমাত্র একটি ল্যান্ডলাইনের। মাসিক বিলও একটি। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির যুগে যা পরিচিত ‘নেক্সট জেনারেশন নেটওয়ার্ক’ বা এনজিএন নামে। বিশ্বের আধুনিক দেশগুলিতে গত কয়েক বছর ধরে তা পরিচিত নাম হলেও ভারতে টেমিকম পরিষেবার আওতায় থাকা গ্রাহকদের কাছে অনেকটাই নতুন। দেশের একমাত্র ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেডের (বিএসএনএল) হাত ধরে এই প্রযুক্তি বসানোর কাজ চলছে বাছাই করা শহরে।
কী কী থাকছে
• ল্যান্ডলাইন।
• ব্রডব্যান্ড বা ইন্টারনেট
• ভিডিও কনফারেন্সিং
• আইএসডিএন।
• লিজ লাইন।
• কল ট্রান্সফার।
• মাল্টিমিডিয়া।
• ফ্যাক্স।
বিএসএনএল সূত্রের খবর, এবার রাজ্যের যে তিনটি শহরে এই পরিষেবা চালু হচ্ছে। আগামী মার্চে মাসের মধ্যে দেশের ‘পাইলট প্রজেক্ট’ হিসাবে উত্তরবঙ্গের একমাত্র শিলিগুড়ি শহরে ওই পরিষেবা চালু হতে চলেছে। এনজিএন চালু হবে দুর্গাপুর এবং আসানসোল শহরে। বিএসএনএলের এই পরিষেবার জন্য ‘টাইমবেস স্যুইচিং’কে বদলে ফেলার কাজ চলছে। বর্তমানে সমস্ত ল্যান্ডলাইন সংযোগের পুরানো ‘স্যুইচ’-এর মত প্রযুক্তি বদল করে ‘ইন্টারনেট প্রোটোকল’ বা আইপি’ ব্যবস্থার মধ্যে আনা হচ্ছে। এতে অন্য পরিষেবা ছাড়াও গ্রাহকেরা আরও ভাল পরিস্কার ডায়াল টোন, ভাল স্পিডের ব্রডব্যান্ড ব্যবস্থা ব্যবহার করতে পারবেন। ‘আইপি’র মাধ্যমে নেটওয়ার্ক থাকায়, বাড়বে সাইবার ও টেমিকম অপরাধ মোকাবিলা সংক্রান্ত সুরক্ষা ব্যবস্থাও। কোনও অপরাধ সংগঠিত হলে হজেই বার করা যাবে ব্যবহারকারীর হদিশ।
বিএসএনএলের শিলিগুড়ি টেলিকম ডিস্ট্রিক্টের জেনারেল ম্যানেজার অরুময় ডাকুয়া বলেন, “আগামী মার্চ মাসের মধ্যে শিলিগুড়ির শহরের মধ্যে এই নতুন পরিষেবা চালু হচ্ছে। প্রত্যেক পরিষেবার জন্য আলাদা সংযোগ নিতে হবে না” জিএম জানান, এক্সচেঞ্জগুলির প্রযুক্তিগত পরিবর্তন হচ্ছে। তার পরেই আমরা এনজিএনের বিস্তারিত তথ্য গ্রাহকদের জানানোর কাজ শুরু করব।
শিলিগুড়ির বিএসএনএলের আওতায় বর্তমানে ৩১২৫৮ ল্যান্ডলাইন এবং ১০১৪৭টি ব্রডব্যান্ড সংযোগ রয়েছে। প্রাথমিকভাবে এনজেএন পরিষেবা আওতায় আনা হবে মূল এক্সচেঞ্জের আওতায় থাকায় ৬ হাজার গ্রাহককে। তার পরে ধাপে ধাপে আশ্রমপাড়া, সেবকরোড, শক্তিগড়, শিবমন্দির এবং প্রধাননগর এক্সচেঞ্জের ওই পরিষেবা চালু করা হচ্ছে। বিএসএনএলের কয়েকজন অফিসার জানান, এক্সচেঞ্জের ল্যান্ডলাইনের খোলনলচে পাল্টে যে প্রযুক্তি আসবে তাতে গ্রাহকেরা যেমন ল্যান্ডলাইন পরিষেবা পান, তেমনিই তার মাধ্যমে পাবেন। এনজিএন পরিষেবা চাইলে তা দেওয়া হবে। পাশাপাশি, নতুন সংযোগের সময়ই পুরো পরিষেবা নেওয়া যাবে।
সংস্থা সূত্রের খবর, বর্তমানে নতুন ল্যান্ডলাইনের জন্য প্রথমে গ্রাহকদের ৫০০ টাকা। প্রথম মাসে ইনস্টলেশন বাবদ ৭৫০ টাকা, হ্যান্ডসেটের জন্য ৬০০ টাকা নেওয়া হয়। এর পরে গ্রাহকেরা মাসিক ১৯৫ টাকা বা ১৪০ টাকার ভাড়ায় পরিষেবা নেন। বাকি বিল লাইন ব্যবহারের উপর হয়। এ ছাড়া সাধারণ ব্রডব্যান্ডের জন্য ৫৪৫ টাকা থেকে ৩৫০০ টাকা অবধি মাসিক প্ল্যান এবং ফাইবার ব্রডব্যান্ডের জন্য ৪ হাজার থেকে ১৭ হাজার টাকা বিশেষ প্ল্যান গ্রাহকদের নিতে হয়। নতুন ব্যবস্থায় একটি সংযোগ নিলেও সব কাজ হবে। অফিসারদের বক্তব্য, এনজেএনের জন্য ৭ হাজার টাকার হ্যান্ডসেট-সহ সংযোগ দরকার হয়। তবে বিএসএনএল টাকার অঙ্কটি কমানোর চেষ্টা করছে। তা চূড়ান্ত হলেই ‘ট্যারিফ’ ঘোষণা হবে। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, কর্পোরেট গ্রাহকদের লক্ষ্যমাত্রার প্রথমে রাখা হয়েছে।
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড অ্যাপ্লিকেশন বিভাগের শিক্ষক রাকেশ কুমার মণ্ডল বলেন, “ তামিলনাড়ু দিয়ে পরিষেবার কাজ সরকার শুরু করেছে। মূলত একটি সংযোগের মাধ্যমে গ্রাহকেরা নানা পরিষেবা পাবেন। আর টেলিফোন পরিষেবার আওয়াজ বা স্বর আরও পরিস্কার হবে।”