এখনও আধফোটা মুকুল, হাসি শুকিয়েছে আমচাষির

প্রথমে টানা শীত। সঙ্গে ঘন কুয়াশা। ফাল্গুনের গোড়ায় খাপছাড়া বৃষ্টি। প্রকৃতির এমন খামখেয়ালিপনায় এ বছর মালদহে আমের মুকুল এখনও ফোটেনি। গত বছর রেকর্ড ফলন চাষিদের মুখে হাসি ফুটিয়েছিল। এবার তাঁদের মুখ শুকিয়েছে। তাঁদের আশঙ্কা, এ বারের ফলন গত বারের অর্ধেকও হবে না।

Advertisement

পীযূষ সাহা

মালদহ শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৪ ০৭:৫১
Share:

প্রথমে টানা শীত। সঙ্গে ঘন কুয়াশা। ফাল্গুনের গোড়ায় খাপছাড়া বৃষ্টি। প্রকৃতির এমন খামখেয়ালিপনায় এ বছর মালদহে আমের মুকুল এখনও ফোটেনি। গত বছর রেকর্ড ফলন চাষিদের মুখে হাসি ফুটিয়েছিল। এবার তাঁদের মুখ শুকিয়েছে। তাঁদের আশঙ্কা, এ বারের ফলন গত বারের অর্ধেকও হবে না।

Advertisement

ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে মার্চ-এর প্রথম সপ্তাহের মধ্যে মুকুল ফুটে আমগাছ ছোট গুটিতে ভরে থাকার কথা। কিন্তু, আমের গুটি বের হওয়া তো দূরের কথা, এখনও পর্যন্ত ঠিক মতো মুকুলই ফোটেনি কোনও গাছে। দ্বিতীয় দফায় ঠান্ডা ও বৃষ্টির জেরে আমের গাছে মুকুল ফোটা থমকে গিয়েছে বলে চাষিদের ধারনা। শুধু তা-ই নয়, আমের পাতা কালো হয়ে গিয়েছে।

মালদহ ম্যাঙ্গো মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুবোধ মিশ্র বলেন, “কথায় বলে, ফাগুনের জল হল আগুন। ফাগুন মাসে আমের মুকুলে জল পড়লে তা নষ্ট হবেই। এবার তাই হয়েছে।” তাঁর আশঙ্কা, বৃষ্টিতে যেভাবে আমের পাতা কালো হয়ে গিয়েছে, তাতে আগামী বছরেও জেলায় আমের ফলন মার খাবে। যতক্ষণ না কালো পাতাগুলি খসে পড়ে নতুন পাতা বের হচ্ছে, ততদিন আমের ফলন ভালো হবে না। তা হলে উপায়? আম ব্যবসায়ীরা জানান, যে সমস্ত আমগাছে ওষুধ ছেটানো গিয়েছে সেখানেই আমের ফলন কিছুটা ঠিকঠাক হবে। তবে এ বারের ফলন গত বছরের ৫০ শতাংশও হবে না, মনে করছেন সুবোধবাবু।

Advertisement

এর ফলে গোটা রাজ্যেই আমের ফলনে প্রভাব পড়বে। মালদহ মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্সের সম্পাদক উজ্জ্বল সাহা বলেন, “রাজ্যে ৬০-৬৫ হাজার হেক্টর আমবাগানের প্রায় অর্ধেক (২৯-৩০ হাজার হেক্টর) মালদহে। রাজ্যের মোট আমের ৪৫-৫০ শতাংশ উৎপাদন মালদহে হয়। তাই এ বার আমের ফলন মার খাবে।” চিন্তিত রাজ্য সরকারও। উদ্যানপালন মন্ত্রী সুব্রত সাহা বলেন, “গাছে ওষুধ দিয়ে যথাসম্ভব ফলন ধরে রাখার চেষ্টা হচ্ছে। মুর্শিদাবাদ, মালদহ, নদিয়ায় গিয়ে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন।” মন্ত্রী জানান, ফলন কতটা মার খাবে, সেই ছবিটা আর সপ্তাহ দু’য়ের মধ্যে স্পষ্ট হবে।

মালদহের উদ্যানপালন দফতরের উপ-অধিকর্তা প্রিয়রঞ্জন সান্নিগ্রাহীও আমের ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। তিনি বলেন, “এ বছর আশা করেছিলাম জেলায় ৮০ শতাংশ গাছে আমের মুকুল হবে। কিন্ত এখন যা পরিস্থিতি তাতে জেলার ২৯ হাজার হেক্টর আমবাগানের ৫০-৬০ শতাংশ গাছে আমের মুকুল হয়নি। প্রতিকূল আবহাওয়ার জন্য বেশির ভাগ গাছে মুকুল বের হচ্ছে না। যে সব গাছে মুকুল এসেছে, তাপমাত্রা কম থাকায় তা-ও ফুটছে না।” মুকুল ফোটার জন্য অন্তত ২২-২৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা চাই।

মালদহ জেলায় প্রথম লক্ষ্মণভোগ আমের মুকুল বের হয়। এর পর ল্যাংড়া, ফজলি, আশ্বিনা, আম্রপালী, মল্লিকা-সহ অন্যান্য আমের মুকুল বের হতে শুরু করে। প্রতি বছর সরস্বতী পুজোর সময় আমের গাছ মুকুলে ভরে যায়। এ বার শুরুতেই ধাক্কা খায় লক্ষ্মণভোগ। শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশার জেরে গত বছরের চেয়ে প্রায় ২০-২৫ দিন পরে লক্ষ্মণভোগ গাছে মুকুল বের হতে শুরু করে। তারপর অন্যান্য প্রজাতির আমের মুকুল আসে। কিন্তু মুকুল ফোটার ক’দিন আগে বৃষ্টি হয়ে ফের ঠান্ডা পড়ে। তাতেই থমকে যায় মুকুল।

রতুয়ার আম ব্যবসায়ী লোকমান কুমার বলেন, “বৃষ্টির জলে আমের মুকুলে ছত্রাক ধরতে শুরু করেছে। ঠান্ডায় শোষক পোকার উপদ্রব শুরু হয়েছে।” লোকমানবাবু গত বছর ৫০০ মেট্রিক টন আম বিক্রি করেছিলেন। এ বার কতটা আশা করছেন? হতাশ গলায় উত্তর দিলেন, “যা অবস্থা, তাতে বড় জোর ২০০ টন আম হতে পারে।”

জেলায় আম চাষের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে চার লক্ষ ৯০ হাজার মানুষ যুক্ত। আমের উপর জেলার আর্থ-সামাজিক অবস্থা অনেকটাই নির্ভরশীল। গত বছর আম থেকে ২০০ কোটি টাকা আয় হয়েছিল। এবার ব্যবসা মার খাবে, মনে করছেন প্রিয়রঞ্জন সান্নিগ্রাহী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন