কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী তালিকায় নতুন মুখ আনল ডান বাম দুই শিবিরই। বুধবার রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের তরফে রীতিমতো চমক দিয়ে জল্পনার বাইরে থাকা প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়। এ বার জোড়া ফুল প্রতীকে টিকিট পেয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা রেণুকা সিংহ। বামেদের প্রার্থী হচ্ছেন ফরওয়ার্ড ব্লকের দীপক রায়। গত নির্বাচনে ওই আসনে জয়ী দলের বিদায়ী সাংসদ নৃপেন রায়কে সরিয়ে দীপকবাবুকে প্রার্থী করা হয়েছে। দুই প্রধান প্রতিপক্ষের প্রার্থীরাই একেবারে নতুন মুখ। এ বারই তাঁরা প্রথমবার লোকসভা নির্বাচনে লড়ছেন। গতবারের প্রার্থী ভবেনচন্দ্র বর্মনের বদলে দলের জেলা সভাপতি হেমচন্দ্র বর্মনকে প্রার্থী ঘোষণা করে বিজেপি আগেই নতুন মুখ আনার কথা ঘোষণা করেছে। কংগ্রেসের তরফেও প্রার্থী হিসাবে নতুন মুখ আনার সিদ্ধান্ত পাকা হয়ে গিয়েছে। সবমিলিয়ে নতুন মুখের চতুর্মুখী লড়াই-ই এ বারের লোকসভা নির্বাচনের আকর্ষণ।
দলীয় সূত্রেই জানা গিয়েছে, তৃণমূল প্রার্থী রেণুকা সিংহ ১৯৯৫ সাল থেকে পাঁচ বছর কোচবিহার পুরসভার কংগ্রেস পরিচালিত পুরবোর্ডে ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। পরে অবশ্য সক্রিয় রাজনীতি থেকে তাঁর দূরত্ব তৈরি হয়। তৃণমূলের কোনও কর্মসূচিতেও তাঁকে দেখা যায়নি। সম্ভাব্য তৃণমূল প্রার্থী হিসাবে যাঁদের নাম নিয়ে জল্পনা ছিল সেই তালিকাতেও তিনি ছিলেন না। দলের এক নেতার কথায়, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে একাধিক পুরুষ প্রার্থীর নাম বিভিন্ন শিবির থেকে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে পাঠান হয়। পরিস্থিতি সামলাতে সর্বসম্মত প্রার্থী হিসাবে শেষপর্যন্ত মহিলা মুখ হিসাবে সক্রিয় রাজনীতির বাইরে থাকা রেণুকাদেবীর নামে সিলমোহর দেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “মহিলাদের সম্মান দেওয়ার পাশাপাশি যোগ্য প্রার্থীকে বেছে নেওয়া হয়েছে। আমরা খুশি।” রেণুকাদেবীর বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী তো বটেই, তাছাড়া দলের সমস্ত নেতার কাছেই কৃতজ্ঞ। সকলের সহযোগিতায় এ বার কোচবিহারে আসনে জোড়া ফুল ফুটবেই।”
দলের দখলে থাকা আসনরে রেখে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী বামফ্রন্টের ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী দীপক রায়। সিতাই বিধানসভায় ২০১১ সালে প্রথমবার প্রার্থী হন। তৃণমূল সমর্থিত জোটের কংগ্রেস প্রার্থী কেশব রায়ের কাছে ১৪৭৭ ভোটের ব্যবধানে হেরে গিয়েছিলেন তিনি। গত নির্বাচনে জয়ী বিদায়ী সাংসদ নৃপেন রায়ের পরিবর্তে ফরওয়ার্ড ব্লক দীপকবাবুকে টিকিট দিয়েছে। তাতে আসন ধরে রাখাটা এবার দলের অন্দরেও তাঁর কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। দীপকবাবু বলেন, “জয়ের ব্যাপারে আমি একশো শতাংশ আশাবাদী।” ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ বলেন, “সাংগঠনিক কাজে নৃপেনবাবুকে আরও বেশি করে কাজে লাগাতেই তাঁর বদলে নতুন মুখ আনা হয়েছে। যদিও দলের অন্দরের খবর, পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলের বিপর্যয়ের পর নতুন মুখ এনে ক্ষত সামলাতে চেয়েছেন ফব নেতৃত্ব।
লোকসভা ভোটে গতবার বিজেপি’র প্রার্থী ভবেন্দ্রনাথ বর্মনের পরিবর্তে এ বার প্রথম কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রের টিকিট পেয়েছেন হেমচন্দ্র বর্মন। নরেন্দ্র মোদী ঝড়কে হাতিয়ার করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ময়দানে নেমেছেন তিনি। দলের জেলা সম্পাদক নিখিল দের কথায়, ভবেনবাবুর অসুস্থতার জন্য এবার নতুন মুখ আনতে হয়েছে। কংগ্রেসের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় আছেন সিতাইয়ের বিধায়ক কেশব রায়, রবীন রায় এবং পরেশ বর্মন। কেশববাবুর পাল্লা অবশ্য ভারি। কোচবিহার জেলা কংগ্রেস সভাপতি শ্যামল চৌধুরী বলেন, “তিন জনের যিনিই টিকিট পাবেন তিনিই হবেন ওই আসনে আমাদের নতুন মুখ।”