কৃষ্ণেন্দু-সাবিত্রীকে এক হতে বলে জেলা ছাড়লেন মমতা

হেলিকপ্টারে উঠতে গিয়েও থমকালেন, ঘাড় ফেরালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার বিকেলে মালদহ বিমানবন্দরে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের সামনে তৃণমূল নেত্রীকে বলতে শোনা গেল, “সাবিত্রী, কৃষ্ণেন্দু, বাবলাতোরা সবাইকে নিয়ে এক সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করবি কিন্তু।”

Advertisement

পীযূষ সাহা

মালদহ শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৪ ০৪:০৭
Share:

মুর্শিদাবাদ রওনা হওয়ার আগে মালদহে মুখ্যমন্ত্রী। রয়েছেন সাবিত্রী মিত্র, মুকুল রায় এবং কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।

হেলিকপ্টারে উঠতে গিয়েও থমকালেন, ঘাড় ফেরালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার বিকেলে মালদহ বিমানবন্দরে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের সামনে তৃণমূল নেত্রীকে বলতে শোনা গেল, “সাবিত্রী, কৃষ্ণেন্দু, বাবলাতোরা সবাইকে নিয়ে এক সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করবি কিন্তু।” ঘাড় ঝোঁকালেন জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী তথা রাজ্যের মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র। মাথা হেলালেন রাজ্যের আর এক মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী। হাত নাড়লেন ইংরেজবাজার পুরসভার উপপুরপ্রধান দুলাল ওরফে বাবলা সরকার।

Advertisement

হেলিকপ্টার চোখের আড়াল হল। পরস্পর কথা নেই। বিমানবন্দর থেকে মালদহ জেলা তৃণমূলের তিন নেতা-নেত্রীর গাড়ি বেরোল আলাদা-আলাদা। যা দেখে প্রকাশ্যেই তৃণমূলের এক নেতার আক্ষেপ, “কাল রাতেও মুকুলদা (রায়) তিন জনকে নিয়ে মিটিং করলেন! বোঝালেন, তিনটে গোষ্ঠী একজোট না হলে কোতোয়ালিকে (গনি পরিবার) হারানোর সুযোগ হাতছাড়া হতে পারে! এঁদের মাথায় কি সেটা ঢুকছে না?”

কৃষ্ণেন্দু পরে বলছেন, “যে কোনও বড় দলে মতান্তর হয়। তর্ক-বিতর্ক হতেই পারে। তবে সাবিত্রী মিত্রর সঙ্গে আমার কোনও মতবিরোধ হয়নি।” আর সাবিত্রীর মন্তব্য, “সবার সঙ্গে আলোচনা করেই কাজ করতে চাই।” কিন্তু কার্যত তা কতটা হবে তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে দলেরই অনেকের।

Advertisement

গত বৃহস্পতিবারই দলের কর্মিসভায় কৃষ্ণেন্দুর বিরুদ্ধে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে মদত দেওয়া নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন সাবিত্রী। বলেছিলেন, “কিছু ব্লকের নেতা ভাবছেন, জেলায় সাবিত্রী মিত্রর একটা গোষ্ঠী আছে। আর কৃষ্ণেন্দুর একটা গোষ্ঠী আছে। এতে দল দুর্বল হচ্ছে।” তৃণমূল অন্দরের খবর, গোষ্ঠী-লড়াই নিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বরও একই মত। এ বারের লোকসভা ভোটে কংগ্রেস, সিপিএমের সঙ্গে বিজেপি-কেও কার্যত একই বন্ধনীতে রেখে দলের নেতা-কর্মীদের ঝাঁপিয়ে পড়তে বলেছেন মমতা। পাশাপাশি, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব যে জয়ের পথে বাধা হয়ে উঠতে পারে সে সতর্কবার্তাও পৈলানে প্রচার কর্মসুচি শুরু করার দিন থেকেই দিচ্ছেন। ফলে, দলের ফাটল মেরামতিতে হস্তক্ষেপ ছিল অবশ্যম্ভাবী।

ঘটনা হল, দলনেত্রীর কর্মিসভার প্রস্তুতির শুরু থেকে কর্মিসভার দিন, বুধবার দুপুর পর্যন্ত কৃষ্ণেন্দু-সাবিত্রীকে এক সঙ্গে দেখা যায়নি। কর্মিসভার মঞ্চে অনুষ্ঠান পরিচালনার রাশ কাদের হাতে থাকবে, তা নিয়েও সাবিত্রী-অনুগামীদের সঙ্গে কৃষ্ণেন্দু-ঘনিষ্ঠদের গোলমাল বাধে।

তৃণমূল সূত্রের খবর, কর্মিসভা শেষ হতেই দেরি করেননি দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। কৃষ্ণেন্দু, সাবিত্রীদের নারায়ণপুরের কাছে একটি হোটেলে নিয়ে গিয়ে শুরু হয় আলোচনা। উত্তর মালদহের দায়িত্ব দেওয়া হয় কৃষ্ণেন্দুকে। ওই কেন্দ্রের নির্বাচনী এজেন্ট করা হয় তাঁরই অনুগামী দেবপ্রিয় সাহাকে। দক্ষিণ মালদহের দায়িত্ব পান সাবিত্রী। সেখানে নির্বাচনী এজেন্ট হন তাঁর ঘনিষ্ঠ রামপ্রবেশ মণ্ডল। সেই সঙ্গে দুই মন্ত্রীর থেকে পৃথক থাকা দলের আর এক জেলা নেতা বাবলা সরকারের প্রসঙ্গও আলোচনায় আসে। সাংগঠনিক শক্তির নিরিখে তুলনায় ‘দুর্বল’ উত্তর মালদহ লোকসভা আসনের জন্য দলের সবাইকে এক সঙ্গে ঝাঁপাতে বলা হয়।

বাবলাবাবু বলছেন, “কোতোয়ালিকে হারাতে দলের সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করতে বলেছেন দলনেত্রী। এর বেশি বলতে চাই না।” যা শুনে দক্ষিণ মালদহ আসনে কংগ্রেস প্রার্থী আবু হাসেম খান চৌধুরীর টিপ্পনী, “ক্রাইমিয়া নিয়ে ওবামা-পুতিন এক হতে পারেন। প্যালেস্তাইন আর ইজরায়েল মিলে যেতে পারে। তৃণমূলের জেলার দুই মন্ত্রী এক হয়ে কোতোয়ালিকে ভাঙবেন? উঁহু!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন