টিএমসিপি-র হুমকি

কলেজে মনোনয়ন তুলতে বাধা

কোথাও কলেজ গেটে ঢোকার রাস্তায় দল বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যরা। কোথাও আবার লাঠি হাতে ছাত্র সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে তৃণমূলের বাহিনী। কোচবিহার জেলার দিনহাটা থেকে মাথাভাঙা, তুফানগঞ্জ সর্বত্র এই ছবি দেখা গিয়েছে বলে অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার কোচবিহার জেলায় ৯টি কলেজ নির্বাচন বয়কটের ডাক দিল এসএফআই এবং ডিএসও।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:১১
Share:

ধূপগুড়ির সুকান্ত মহাবিদ্যালয়ে মনোনয়ন তোলার সময়ে পুলিশ নিরাপত্তা দিতে না পারায় বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র তোলা ও সংসদ নির্বাচন বয়কট করে অন্য ছাত্র সংগঠনগুলি। তাই ফাঁকা পড়ে রয়েছে মনোনয়নপত্র তোলার কেন্দ্র। ছবি: রাজকুমার মোদক।

কোথাও কলেজ গেটে ঢোকার রাস্তায় দল বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যরা। কোথাও আবার লাঠি হাতে ছাত্র সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে তৃণমূলের বাহিনী। কোচবিহার জেলার দিনহাটা থেকে মাথাভাঙা, তুফানগঞ্জ সর্বত্র এই ছবি দেখা গিয়েছে বলে অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার কোচবিহার জেলায় ৯টি কলেজ নির্বাচন বয়কটের ডাক দিল এসএফআই এবং ডিএসও।

Advertisement

এদিনই ছিল মনোনয়ন পত্র তোলার শেষ দিন। ডিএসও-র অভিযোগ, পুলিশের মদতে তৃণমূলের কর্মীরা কলেজের সামনে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন, বিরোধী সংগঠনের কাউকে মনোনয়ন পত্র তুলতে দেওয়া হয়নি। মাথাভাঙায় তাঁদের সদস্যদের হাত থেকে ১২টি মনোনয়নপত্র ছিনিয়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলেন তাঁরা। প্রতিবাদ করতে গিয়ে ৬ জন তৃণমূলের বাহিনীর হাতে আক্রান্ত হন। পুলিশ অভিযুক্তদের না ধরে আক্রান্তদের আটক করছে বলে অভিযোগ ডিএসও-র। এসএফআইয়ের অভিযোগ, মেখলিগঞ্জ ও হলদিবাড়ি বাদে কোথাও নির্বাচন করার মতো পরিস্থিতি নেই। তাঁদের ছাত্র সংগঠনের সদস্যদের কলেজের সামনে ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি বলে দাবি করেছে এসএফআই। ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের অভিযোগ, তুফানগঞ্জ কলেজে এদিন তাঁদের ৩ জন সদস্যকে মারধর করে টিএমসিপি। তাঁদের মধ্যে ১ জন হাসপাতালে ভর্তি। কোচবিহারের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব অবশ্য বলেন, “কোথাও কোনও গণ্ডগোল হয়েছে বলে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি।”

প্রশাসন সূত্রের খবর, আগামী ২২ জানুয়ারি কোচবিহারের ১১টি কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন। ৭ ও ৮ জানুয়ারি মনোনয়ন পত্র তোলার দিন ছিল। মেখলিগঞ্জ ও হলদিবাড়ি বাদে জেলার ৯টি কলেজে বিরোধী ছাত্র সংগঠনের কেউ মনোনয়নপত্র তুলতে পারেনি। মাথাভাঙায় বিজেপি-র ছাত্র সংগঠন কয়েকটি মনোনয়ন তুলেছে। এই অবস্থায় বেশিরভাগ কলেজে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হতে চলেছে টিএমসিপি।

Advertisement

ডিএসও-র কোচবিহার জেলা সম্পাদক স্বপন বর্মন বলেন, “টিএমসিপি বাইরে থেকে দুষ্কৃতীদের জড়ো করে কলেজের বাইরে রেখে দিয়েছে। বিরোধী ছাত্র সংগঠনের কাউকে দেখলে প্রথমে হুমকি দিচ্ছে। তাতে কাজ না হলে মারধর করছে। পুলিশ-প্রশাসন মুখে নিরপেক্ষতার কথা বললেও আসলে টিএমসিপি-র হয়ে কাজ করছে। তাই মেখলিগঞ্জ ও হলদিবাড়ি বাদে অন্য কলেজগুলিতে ভোট বয়কট করেছি।” এদিন কোচবিহার শহরে প্রায় পনেরো মিনিট ধরে রাস্তা অবরোধ করে ডিএসও।

দলীয় সূত্রের খবর, হলদিবাড়ি ও মেখলিগঞ্জ কলেজে টিএমসিপি শক্তিশালী নয়। ওই অঞ্চলে বিরোধী দলগুলি নিজেদের প্রভাব এখনও বজায় রেখেছে। স্বাভাবিক ভাবেই সেখানে সব ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা মনোনয়ন তুলতে পেরেছে। এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক দেবজ্যোতি রায় বলেন, “কলেজের সামনে গেলেই দেখা গিয়েছে, লাঠি হাতে তৃণমূলের লোকেরা দাঁড়িয়ে। পুলিশ কিছু বলছে না। ভোট কী ভাবে হবে? ওই দু’টি কলেজেই কেবল কিছুটা গণতন্ত্র রয়েছে।” তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কোচবিহার জেলা সভাপতি সাবির সাহা চৌধুরী বলেন, “বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলি মিথ্যে অভিযোগ করছে। মেখলিগঞ্জ, হলদিবাড়ি কলেজে সবাই প্রার্থী দিয়েছে। বাকি কলেজগুলিতে ওঁদের সংগঠন নেই।”

মালবাজার পরিমল মিত্র স্মৃতি কলেজের মনোনয়নপত্র নেওয়ার দ্বিতীয় তথা শেষ দিনেও তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ছাড়া অন্য কোনও ছাত্র সংগঠনকে কলেজের আশেপাশে খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রথম দিনে ৮৭টি মনোনয়ন তোলা হয় এবং বৃহস্পতিবারে মোট ৯টি মনোনয়ন তোলা হয়েছে বলে কলেজ সূত্রের খবর। বিরোধীদের উপস্থিতি না থাকায় এদিন কার্যত মালবাজার কলেজের ছাত্র সংসদ জয়ের বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে যায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদ।

এসএফআই-এর তরফে সুব্রত দত্ত জানান, তৃণমূল ছাত্র পরিষদ গত নির্বাচনেও বিরোধী সংগঠনের ছাত্রছাত্রীদের উপরে হামলা চালায়। সেই ঘটনারই পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা ছিল। জলপাইগুড়ি জেলা যুব বিজেপি-র নেতা জয়ন্ত চক্রবর্তী বলেন, “তৃণমূল কংগ্রেস ভোট ভীতিতে ভুগছে। তাই নির্বাচনের বদলে পেশি শক্তির প্রদর্শনেই ওরা বেশি জোর দিয়েছে। তবে এর পরিণাম তৃণমূলের বিপক্ষেই যাবে। মানুষ অত্যন্ত সচেতন। তাঁরা মালবাজার কলেজের ঘটনা জানেন। চলতি বছরে মালবাজার পুরভোটে এর প্রতিবাদ হবে।” জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি অভিজিৎ সিংহ বলেন, “রাজ্য জুড়ে উন্নয়নের ফলে বিরোধীদের কোনও অস্তিত্ব নেই। তাই বিরোধীদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন।”

বৃহস্পতিবার কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে মালদহ কলেজে মনোনয়ন তুলল ও জমা দিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। এদিন কলেজে ৬৩টি আসনের মধ্যে সব কটি আসনেই মনোনয়ন তুলেছে টিএমসিপি। এদিন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি প্রসেনজিৎ দাসের নেতৃত্বে কর্মীরা মিছিল করে কলেজ গেটের সামনে হাজির হন। কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন ও আজ, শুক্রবার পর্যন্ত মনোনয়ন তোলা ও জমা দেওয়ার পর্ব চলবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন