কুরুং নদীতে সীমানার খুঁটি আছে। তবে যাতায়াত রোখার ব্যবস্থা নেই। নিজস্ব চিত্র।
অরক্ষিত সীমান্ত। কাঁটাতারের বেড়া নেই। সেই সুযোগে বিএসএফের নজর এড়িয়ে চুপিসাড়ে অবাধে পারাপার চলছে। জলপাইগুড়ি শহরের অদূরে বাংলাদেশ সীমান্তের দক্ষিণ বেরুবাড়িতে এমনই ঘটছে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেই।
জলপাইগুড়ির কোতোয়ালি থানার দক্ষিন বেরুবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতে ৩৬ কিলোমিটার এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া হয়নি। কারণ, সীমান্ত সমস্যা। দু-দেশের তরফে সীমান্ত নিয়ে সমস্যার নিষ্পত্তির চেষ্টা হচ্ছে। সীমান্ত সমস্যার বিলটি লোকসভার দু’টি কক্ষে বিবেচনাধীন। ফলে কাঁটাতারের বেড়া হয়নি।
এই অবস্থায় বাংলাদেশের এক শ্রেণির কারবারি সীমান্তঘেঁষা গ্রামগুলির বাসিন্দাদের একাংশের মদতে পারাপার চালাচ্ছে। দক্ষিণ বেরুবাড়ি গ্রামপঞ্চায়েতের প্রধান রীতা মালপাহাড়ি বলেন, “সীমান্ত সমস্যা দক্ষিণ বেরুবাড়ি এলাকার প্রধান সমস্যা। দেশের সুরক্ষা এবং সুস্থিতির জন্যে এই সমস্যার সমাধান হওয়ার জরুরি।” কেন্দ্রীয় সরকারের পূর্ত বিভাগের সহকারী বাস্তুকার প্রশান্ত নন্দী বলেন, “সীমান্ত সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কিছুই করা যাবে না।”
বুধবার দক্ষিণ বেরুবাড়ির মানিকগঞ্জ সীমান্ত ঘেঁষা বনগ্রাম, ডাকেরকামাত, মরিঙ্গাপাড়া, নতুনবস্তি এবং অধিকারীপাড়ায় গেলে বাসিন্দারা দেখালেন কাঁটাতারের বেড়া না-থাকায় কী ভাবে পারাপার সহজ হয়ে যায়। পাঙা নদীর ওপারে বুড়ির জোত এলাকায় ছয়ঘড়িয়া, নতুনপাড়া, কীর্তনিয়াপাড়ায় কাঁটাতারের বেড়া নেই। গর্তেশ্বরী মন্দির সংলগ্ন ফকিরপাড়া, পাঠানপাড়া, শিরিষতলা এবং নতুন বস্তির সীমান্ত উন্মুক্ত। এ ছাড়াও দইখাতা মৌজার সাওতালপাড়ায়, দক্ষিণ বেরুবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের নলজোয়াপাড়া থেকে ভোজারিপাড়া এবং চিলডাঙা থেকে ধরধরাপাড়ায় কাঁটাতারের বেড়া নেই। স্থানীয় একজন বাসিন্দা বলেন, “অবাধ পারাপারের কারণে আমরা আতঙ্কে থাকি। রাত-বিরেতে হানা দিয়ে আমাদের গরু নিয়ে পালিয়ে যায়।”
দক্ষিণ বেরুবাড়িতে দু’টি নদী রয়েছে। যাদের গতিপথের অর্ধেকটা বাংলাদেশের এবং অর্ধেকটা ভারতের নদীর মধ্যে।
সীমানার খুঁটি বসানো আছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন ছিটশাকাতি, বারুইপাড়া, ঝাপটতলা এলাকায় কুরুং নদীর পথ দিয়ে এবং চিলডাঙাগ্রামে সুই নদী পথ প্রধানভাবে এই পারাপারে ব্যবহার হয়। এই নদীপথ দিয়ে এসে সাতকুড়া বাজারে পৌঁছে সেখান থেকে বাস ধরে হলদিবাড়ি। তার পর শিলিগুড়ি। সেখানে দালালদের ধরলেই মিলতে পারে নতুন রেশন কার্ডও।
গর্তেশ্বরী এলাকার ফকিরপাড়া, পাঠানপাড়া, শিরিষতলা, নতুনবস্তি গ্রামগুলির বাসিন্দাদের অনেকের আত্মীয়স্বজন বাংলাদেশে থাকেন। এই গ্রামগুলিতে তারা সীমান্ত পার হয়ে অহরহ আসেন। কারও শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি কিম্বা হলদিবাড়ি ঘুরতে ইচ্ছে করলে ঘুরে আসেন। বাসিন্দারা জানিয়েছেন এভাবে অনেকেই পাকাপাকিভাবে এদেশে বসবাস করার জন্যে শিলিগুড়ি হয়ে অন্যত্র চলে যান। দক্ষিণ বেরুবাড়ির প্রাক্তন প্রধান সারদাপ্রসাদ দাস বলেন, “দক্ষিণ বেরুবাড়ির মানিকগঞ্জ থেকে সাতকুড়া পর্যন্ত এলাকায় রাজ্য পুলিশের নজরদারি বাড়ানো দরকার। সীমান্ত এলাকা দিয়ে না হলে লোক ঢোকা বন্ধ করা যাবে না। এদেশে ঢুকে গেলে বিএসএফের কিছু করার থাকে না। বিষয়টি রাজ্য পুলিশের এক্তিয়ারে চলে যায়।”
বিএসএফ পারেনি কিন্তু হলদিবাড়ি থানা পেরেছে। গত ছয় মাসে এই মানিকগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে পার হয়ে আসা সন্দেহভাজন ১৬ জন বাংলাদেশি যুবককে ধরেছে হলদিবাড়ি থানার পুলিশ। এক মাস আগে ৫ জন যুবকের একটি দলকে ধরেছে হলদিবাড়ি থানার পুলিশ। এ ছাড়াও হলদিবাড়ি থানার বেলতলি এলাকায় তিস্তানদীর চর দিয়ে আসা ৭ জনের একটি দলকে ছয় মাস আগে ধরে পুলিশ। এরা বক্সিগঞ্জ এলাকায় একজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল। সেই ব্যক্তিকেও গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ জানায়, জেরার জবাবে তারা জানিয়েছে যে কেরালায় কাজ করতে যাওয়ার জন্যে এরা ভারতে এসেছে। সকলেই জানিয়েছে শিলিগুড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে তারা হলদিবাড়িতে এসেছে। এলাকার বাসিন্দাদের প্রশ্ন, সত্যিই তারা কেরলে কাজ করার জন্য এদেশে ঢুকেছে? না তাদের অন্য উদ্দেশ্য আছে? প্রাক্তন প্রধান সারদা প্রসাদ দাস বলেন, “সীমান্তে ধৃতদের ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির হাতে তুলে দেওয়া দরকার।”
হলদিবাড়ি থেকে দশ কিলোমিটার দূরে বেলতলিতে তিস্তা নদীর চর ৪ কিলোমিটার প্রশস্ত। ওপারে মেখলিগঞ্জ বেলতলি থেকে দুই কিলোমিটার দূরে তিস্তা নদী বাংলাদেশে ঢুকেছে। এই চরটিও পারাপার এবং পাচারের অন্যতম পথ বলে পুলিশের সন্দেহ।