গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, মাথা ফাটলো তৃণমূল নেত্রী প্রতিভার

লোকসভা নির্বাচনের মুখে মালদহে প্রচার সেরে ফেরার সময় হেলিকপ্টারে ওঠার মুখে থমকে দাঁড়িয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর পিছনে তখন দলের তৎকালীন জেলা সভানেত্রী সাবিত্রী মিত্র, মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী ও প্রাক্তন জেলা সভাপতি দুলাল সরকার।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৪ ০২:৫৫
Share:

মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জখম প্রতিভা সিংহ। শুক্রবার মনোজ মুখোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

লোকসভা নির্বাচনের মুখে মালদহে প্রচার সেরে ফেরার সময় হেলিকপ্টারে ওঠার মুখে থমকে দাঁড়িয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর পিছনে তখন দলের তৎকালীন জেলা সভানেত্রী সাবিত্রী মিত্র, মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী ও প্রাক্তন জেলা সভাপতি দুলাল সরকার। মমতা তাঁদের বলেছিলেন, “এক সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করবি।” কিন্তু তারপরে তিন মাস কেটে গিয়েছে, মালদহে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ক্রমশ বেড়েছে। মালদহের দু’টি লোকসভা কেন্দ্রেই দলের প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটাতে দক্ষিণ মালদহ কেন্দ্রে দলের প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেনকে তৃণমূলের জেলা সভাপতি করা হয়েছে। কিন্তু সভাপতি হিসেবে তাঁর প্রথম প্রকাশ্য দলীয় সভাতেই শুক্রবার রতুয়াতে দলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে রক্তারক্তি কাণ্ডও হল। সভায় দলের জেলার কার্যকরী সভানেত্রী প্রতিভা সিংহের মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

Advertisement

পুলিশের উপস্থিতিতেই সভাস্থলে সাবিত্রীদেবী ও কৃষ্ণেন্দুবাবুর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। তখন বোমাবাজি ও গুলি চলেছে বলেও অভিযোগ। কৃষ্ণেন্দুবাবুর অনুগামী প্রতিভাদেবী এ দিন ইংরেজবাজার থানায় অভিযোগ করেছেন, তৃণমূলের রতুয়া ১ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মহম্মদ ইয়াসিন তাঁকে মঞ্চ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে লোহার রড দিয়ে মেরে তাঁর মাথা ফাটিয়ে দিয়েছেন। তাঁর শ্লীলতাহানিও করা হয়েছে বলে অভিযোগ প্রতিভাদেবীর। তিনি এখন মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আইসিসিইউতে চিকিৎসাধীন। তাঁর মাথায় ৩টি সেলাই পড়েছে। ওই ঘটনায় ৩ তৃণমূল সমর্থককে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। মহম্মদ ইয়াসিন সাবিত্রীদেবীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। মোয়াজ্জেমও এই ঘটনায় ইয়াসিনকে দায়ী করেছেন।

এই ঘটনায় রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। বিধানসভায় এ দিন পুলিশ বাজেট নিয়ে বিতর্কের সময় আরএসপি-র বিধায়ক সুভাষ নস্কর মালদহের ঘটনার কথা তোলেন। সুভাষবাবুর বক্তব্য ছিল, “বিরোধীদের ধ্বংস করে যত জোর করে শক্তি বাড়াবেন, তত নিজেদের গোষ্ঠী-বিবাদ হবে।” জবাবি ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আপনারা গোষ্ঠী-সংঘর্ষের কথা বলছিলেন। মালদহের ঘটনার খোঁজ নিয়েছি। তিন জন নিজের দলের লোককে গ্রেফতার করেছি। আমি ও’সব দেখি না। ঘটনা ঘটলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবেই।”

Advertisement

রতুয়া ১ ব্লক এলাকার কর্মীদের সঙ্গে দলের নতুন জেলা সভাপতির পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্যই সভা ডাকা হয়। পৌনে এগারোটায় সভা শুরুর পরেই বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। মঞ্চে বহু লোক ভিড় করেন। তখন প্রতিভাদেবী ব্লক নেতাদের মঞ্চ থেকে নেমে যেতে বলেন। শুরু হয় হুড়োহুড়ি। এর মধ্যে প্রতিভাদেবীর মাথা ফেটে গেলে সভা মাঝপথে সভা শেষ করে দেওয়া হয়। মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রর বক্তব্য, “কারা দায়ী, বলতে পারব না। তবে দোষীদের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নিক।” ক্ষুব্ধ কৃষ্ণেন্দুবাবু বলেন, “যার নেতৃত্বে হামলা হয়েছে, সে কুখ্যাত দুষ্কৃতী। স্থানীয় পুলিশের ব্যর্থতার জন্য এমনটা ঘটেছে।”

তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে এ দিন রক্তারক্তি হয়েছে শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে পোড়াঝাড়েও। নদীর চরের জমি দখলের কর্তৃত্ব কোন গোষ্ঠীর হাতে থাকবে, তা নিয়ে লাঠিসোটা নিয়ে হামলা ও ভাঙচুর হয়। জখম হয়েছেন তিন জন। শিলিগুড়ি পুলিশের এডিসি কে সাভারি রাজকুমার বলেন, “এলাকায় বিরাট বাহিনী পাঠানো হয়।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement