কে বলবে চৈত্র মাস! গাঁয়ের মেঠো পথে ধুলো উড়ছে। মধ্য গগনে সূর্য, নেই দাবদাহ হাঁসফাঁস করা বিশ্রী গরম. তবুও সতর্ক প্রত্যেকে। রোদের উত্তাপ এড়াতে কেউ সাত সকালে মন্দিরে পুজো দিয়ে ভোট প্রার্থনায় নামছেন। কেউ বাড়ির উঠানে বসে কর্মিসভা করছেন। প্রচারের ফাঁকে জিরিয়ে নিতে কেউ শিশুদের সঙ্গে খুনসুটিতে মেতে উঠছেন। ভোটের জন্য মেলার ভিড়ে মিশে যাচ্ছেন। দুপুরে সামান্য বিরতি দিয়ে বিকেলে রোডশো সারছেন।
মঙ্গলবারেও দিনভর ভোট প্রচারের এই ছবি ছিল জলপাইগুড়ি কেন্দ্র জুড়ে। লাউড স্পিকারের দাপাদাপি অথবা মিছিল পাল্টা মিছিলের পরিচিত দৃশ্য কার্যত পাল্টে যেতে দেখে অবাক অনেকে। অচেনা চৈত্র মাসের অর্ধেক দিন পার হয়েও তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রির মধ্যে ঘোরাফেরা করছে, তাও দুপুরে। সকালের তাপমাত্রা এখনও এতটাই কম যে শীতের রেশ কাটে না। এই সুযোগে দলীয় কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে প্রার্থীদের এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে ঘুরে বেড়াতে দেখে জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের কাশিয়াবাড়ি গ্রামের সুবল সরকার, কানু দাস, বিমল রায়ের মত অনেকে বলছেন, “এবার ভোট জমছে না কেন? মিছিল, পথসভা কিছুই তো দেখছি না। কেমন ম্যাড়মেড়ে ভোট। টিভিতে দেখছি এই গরমে কলকাতায় প্রচারের কি ফাটাফাটি অবস্থা।”
এ দিন সকালে কাশিয়াবাড়ি বাজারে পৌঁছে যান সিপিএম প্রার্থী মহেন্দ্রকুমার রায়। সবে ক্রেতাদের ভিড় জমতে শুরু করেছে। গাড়ি থেকে নেমে কয়েকজন কর্মীকে নিয়ে তিনি বাজারের এক গলি থেকে অন্য গলিতে ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের কাছে ভোট চাইলেন। রবিবার থেকে প্রচারের কাজে একটানা হেঁটে পা ফুলেছে। বিরোধী বিজেপি প্রার্থী সত্যলাল সরকার তখন দলীয় কর্মীদের নিয়ে জলপাইগুড়ি শহরের এক ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ড চষে বেড়াতে ব্যস্ত। বিলি করলেন প্রচারপত্র। তৃণমূল প্রার্থী বিজয়চন্দ্র বর্মন সাড়ে ৮টা নাগাদ শান্তিপাড়ার ভাড়া বাড়ি থেকে সোজা চলে যান ময়নাগুড়ির জল্পেশ এলাকায়। সেখানে মন্দিরে পুজো দিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে ভোট প্রার্থনা শুরু করেন। সাপটিবাড়ি গ্রাম কাশিয়াবাড়ির মতো গুঞ্জন ‘দাদা, ভোট জমছে না’। বিজয়বাবু বলেন, “জনসভা তো হচ্ছে। তবে কম। প্রত্যেকে কর্মিসভার উপরে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। হয়তো তাই ভোটের উত্তাপ বোঝা যাচ্ছে না।”
কংগ্রেস প্রার্থী সুখবিলাস বর্মা এ দিন বাড়িতে দলীয় কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ সেরে নেন। বিকেল ৩টায় বেরিয়ে যান ময়নাগুড়ির দোমহনি-১ ও দোমহনি-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। সেখানে প্রচার সেরে সন্ধে নাগাদ বেরুবাড়ির বারুনি মেলার ভিড়ে মিশে প্রচার করেন। ওই সময় শহরে রোডশো করে ভোটের আসরে উত্তাপ সঞ্চারের চেষ্টা করেন বিজেপির সত্যলালবাবু।