‘ট্রাস্ট-টি’। কীটনাশক মুক্ত চা বোঝাতে ‘ট্রাস্ট’ এবং ‘টি’ দুটি শব্দের সমন্বয়ে তৈরি ভারতীয় চা পর্ষদের ‘লোগো’। সহজ বাংলায় বিশ্বস্ত চা। ‘চায়ে পিও মস্ত জিও’, এই স্লোগান গ্রহণযোগ্য করতে খুব তাড়াতাড়ি লোগো যুক্ত প্যাকেটজাত চা বাজারে মিলবে। পর্ষদের উদ্যোগে দেশ জুড়ে চা উৎপাদকদের নিয়ে শুরু হয়েছে প্ল্যান্ট প্রোটেকশন কোড মেনে চলার প্রশিক্ষণ। মঙ্গলবার ময়নাগুড়ির পানবাড়ি ক্ষুদ্র চা চাষি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর বাছাই ১২ সদস্যকে নিয়ে সংস্থার কারখানা চত্বরে প্রশিক্ষণ শিবির শুরু হয়। চলবে আজ, বুধবার পর্যন্ত। পর্ষদের কর্তারা জানান, দেশে ক্ষুদ্র চা চাষিদের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের প্রশিক্ষণের আয়োজন এই প্রথম। শিবির শেষ হওয়ার পরে নির্বাচিত সদস্যরা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর অন্য সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু করবেন। তাঁদের সঙ্গে চা বিশেষজ্ঞরা থাকবেন। টানা এক বছর ওই কাজ চলবে। এর মধ্যে চাষিদের কীটনাশক মুক্ত চা উপাদনের দক্ষতা খতিয়ে দেখা হবে। পর্ষদের অধিকর্তা (চা উন্নয়ন) এস সুন্দারাজন বলেন, “দেশের মধ্যে এই প্রথম ক্ষুদ্র চা চাষিদের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের নিয়ে পাইলট প্রোজেক্ট হাতে নেওয়া হয়েছে। এখানে শুধু মুখে বললে চলবে না। চাষিদের কাজ করে দেখাতে হবে। তাঁদের কৃষি ডায়েরি নিয়ে চলতে হবে। ওই ডায়েরিতে চাষিরা বাগানের সার্বিক তথ্য উল্লেখ করবেন।” এ দিন শিবিরে গোষ্ঠীর নির্বাচিত সদস্যদের হাতে কলমে ‘কৃষি ডায়েরি’ পূরণ পদ্ধতি শেখানো হয়। এ ছাড়াও পর্ষদের বিশেষজ্ঞরা প্রোজেক্টারের সাহায্যে স্বাস্থ্যকর চা উৎপাদনের পদ্ধতি ব্যখা করেন। প্রশিক্ষণের সূচনাতে চা পর্ষদের কর্তারা রাখঢাক না করে চাষিদের খোলাখুলি জানান, তাঁরা যে চা পাতা উৎপাদন করছেন তা যথেষ্ট স্বাস্থ্যকর নয়। কারণ, পাতার উৎাদন বৃদ্ধির জন্য অনেকে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের নিয়ম মেনে চলেন না। ফলে শুধু মানুষ নয়, পরিবেশেরও ক্ষতি হচ্ছে। বিপদ এড়াতে নিরাপদ স্বাস্থ্যকর বিশ্বস্ত চা উপাদনের উপরে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যার নামকরণ হয়েছে ‘ট্রাস্ট-টি’। শব্দটিকে রাসায়নিক বিষমুক্ত চায়ের লোগো হিসেবে ব্যবহার করা হবে। প্রশিক্ষণ শেষে যে চাষিরা নিয়ম মেনে পাতা উৎপাদন করবেন, তাঁদের সার্টিফিকেট দেওয়া হবে। ওই পাতা থেকে উৎপাদিত চায়ের মোড়কে ট্রাস্ট-টি লোগো থাকবে। পর্ষদের অধিকর্তা (চা উন্নয়ন) বলেন, “এখন যে ভাবে চা উপাদন হচ্ছে তা যথেষ্ট নিরাপদ নয়। ওই কারণে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।” সেপ্টেম্বর মাসে প্ল্যান্ট প্রটেকশন কোড (পিপিসি) চালু হয়েছে। চাষিরা কোন রাসায়নিক কীটনাশক ও সার ব্যবহার করবেন সেটা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণে চাষিদের সেটাই জানানো হবে। পানবাড়ি ক্ষুদ্র চা চাষি স্বনির্ভর গোষ্ঠী সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁদের সংস্থার সঙ্গে ৩৪০ জন চাষি যুক্ত। তাঁরা ২৬৯ হেক্টর জমিতে চা চাষ করছেন। তাঁদের বাগান থেকে বছরে ৩৫ লক্ষ কেজি পাতা উৎপাদন হচ্ছে। ওই পাতা ব্যবহার করে সাড়ে ৭ লক্ষ কেজি তৈরি চা মিলছে। জলপাইগুড়ি জেলা ক্ষুদ্র চা চাষি সংগঠনের সম্পাদক বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “এক বছর পরীক্ষার পরে চাষিরা নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট রাসায়নিক ব্যবহারে অভ্যস্ত হলে ‘ট্রাস্ট-টি’ লোগো ব্যবহারের অনুমতি মিলবে। এটা হলে আর ফিরে তাকাতে হবে না। বড় সংস্থাগুলি ক্ষুদ্র চা চাষিদের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কারখানায় তৈরি চা কিনতে নিজেরাই এগিয়ে আসবে।”