প্রত্যাখ্যানের ‘শাস্তি’ অ্যাসিড।
বুধবার বর্ধমানের চিত্তরঞ্জন স্টেশনের ঘটনায় চার মাস আগের সেই সন্ধ্যাটার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে তাঁর। মালদহের বৈষ্ণবনগরের সাটাঙ্গাপাড়ায় তাঁর বাড়িতে বসে বছর পঞ্চাশের প্রৌঢ় বলেন, “মেয়েটা বড় ভাল, জানেন? পড়াশোনার বড্ড ইচ্ছে ছিল। কিন্তু কলেজে যাওয়ার আর কি মুখ থাকল ওর!”
চিত্তরঞ্জনের মহিলার মতোই, বিয়েতে রাজি না হওয়ায় মালদহের বৈষ্ণবনগরের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রীকে অ্যাসিড ছুড়ে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছিল এক যুবক। ঘটনার প্রায় চার মাস পরে মূল অভিযুক্ত উজ্জ্বল মণ্ডল শেষ পর্যন্ত এ মাসের গোড়ায় আদালতে আত্মসমর্পণ করলেও অন্য দুই অভিযুক্ত এখনও ফেরার। আর ওই তরুণীর পড়াশুনোর মতোই থমকে গিয়েছে চিকিৎসাও।
এসএসকেএম থেকে ছাড়ার পর মেয়েকে অবশ্য আর মালদহে রাখার সাহস দেখাননি তাঁর বাবা। সেই থেকে আসানসোলে, তাঁর মামার বাড়িতে রয়েছেন বছর কুড়ির মেয়েটি। তাঁর বাবার কথায়, “মেয়ে কথা বলতে পারে না। তরল খাবার ছাড়া অন্য কিছু খেতেও পারে না। চিকিৎসকেরা বলেছেন মেয়ের খাদ্যনালী নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কিন্তু অস্ত্রোপচারের টাকা কোথায়?” মরিয়া হয়ে সেই টাকার সন্ধান করে চলেছেন তিনি।
ঘটনার সময় ওই তরুণীর তৃতীয় বর্ষের টেস্ট পরীক্ষা চলছিল। ফাইনাল পরীক্ষা আর দেওয়া হয়নি। একটি বেসরকারি নার্সারি স্কুলে পড়াতেন ওই তরুণী। ছাড়তে হয়েছে সেই চাকরিও। মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরীরও সে ঘটনা মনে আছে। বলছেন, “মেয়েদের উপরে কোনও অত্যাচার বরদাস্ত করা হবে না। ওই দুই অভিযুক্ত যাতে দ্রুত ধরা পড়ে তা পুলিশকে দেখতে বলব।” দক্ষিণ মালদহের সাংসদ মৌসম বেনজির নূরও বলছেন, “বৃহস্পতিবারই এসপি-র সঙ্গে দেখা করে দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানাব।”
কিন্তু তাতে কাজের কাজ কতটা হবে তা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। স্থানীয় এক মহিলা জানান, “করছি করব করেই চলেছে পুলিশ। এখনও পর্যন্ত সব অভিযুক্তই ধরা পড়ল না। এরপরেও পুলিশের উপরে ভরসা রাখা যায়!”
পুলিশে অভিয়োগ জানানোর পরেই থানা থেকে অভিয়োগ তুলে নেওয়ার জন্য ওই ছাত্রীর বাবাকে একাধিকবার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ না তোলায় দুষ্কৃতী পাঠিয়ে ওই ছাত্রীর বাড়িতে লুঠপাটও করা হয় বলে অভিযোগ। ৬ জুন মূল অভিযুক্ত উজ্জ্বল মণ্ডল মালদহ আদালতে আত্মসমর্পণ করে। বর্তমানে সে জেল হাজতে। তবে বাকী দুই অভিযুক্তকে কেন এখনও পুলিশ গ্রেফতার করেনি? মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়
বলেন, “ওই ঘটনার সময়ে আমি দায়িত্বে ছিলাম না। তাই এ নিয়ে কিছু বলতে পারব না।” তবে বৈষ্ণবনগর থানার আইসি প্রফুল্লদেব রায়ের নির্বিকার জবাব, “মূল অভিযুক্তই ওই ছাত্রীর মুখে অ্যসিড ঢালার কথা কবুল করেছে। বাকিদের খোঁজ তো চলেছে।”