দুই ভাইয়ের সঙ্গে মৃত ড্যানিয়েল। সোমবার রেডব্যাঙ্ক চা বাগানে রাজকুমার মোদকের তোলা ছবি।
মৃত্যুর কারণ জানতে এ বার বন্ধ বাগানের শ্রমিকের মৃত্যুর পর দেহ ময়নাতদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিল স্বাস্থ্য দফতর। রেডব্যাঙ্ক বাগানের শালবনি ডিভিশনের বাসিন্দা মৃত ওই শ্রমিকের নাম ড্যানিয়েল ওঁরাও (৫২)। ঘুমন্ত অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয় বলে তাঁর পরিবার সূত্রের খবর। সোমবার ভোরে পরিবারের লোকজন তাঁকে ডাকতে গিয়ে মৃত্যুর বিষয়টি টের পান। বাগান সূত্রে খবর, কয়েক মাস ধরে ড্যানিয়েল অবসাদে ভুগছিলেন। অবিবাহিত ড্যানিয়েল শ্রমিক আবাসে থাকতেন। বেশ কিছুদিন ধরে তিনি অসুস্থ ছিলেন। কোনও চিকিৎসা করানো হয়নি বলে তাঁর পরিবারের লোকজন জানান। জলপাইগুড়ির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জগন্নাথ সরকার বলেন, “মৃত্যুর কারণ বোঝা যাচ্ছে না বলে চিকিৎসকরা ময়নাতদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে অপুষ্টিজনিত কারণে মৃত্যু হলে ময়নাতদন্তে তা উঠে আসবে না।”
গত ২০০২ সাল থেকে তিন দফায় বন্ধ হয়ে যায় বাগানটি। গত অক্টোবরে শেষ বার বন্ধ হয় বাগান। সম্প্রতি কয়েকজন শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনার পরে বিরোধী বাম ও কংগ্রেস বিধায়কদের দল দু’দফায় বাগানে গিয়ে সরকারের কড়া নিন্দা করে। পরে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে গত ১৫ জুলাই বাগানে যান রাজ্যের চার মন্ত্রী। বাগান চালুর জন্য সরকার চেষ্টা করছে বলে তাঁরা শ্রমিকদের জানান। মাসিক দেড় হাজার টাকা অনুদান ঘোষণা করেন।
মন্ত্রীরা ফিরে যাওয়ার তিন দিন পর থেকে ফের মৃত্যুর ঘটনা শুরু হওয়ায় চাপ বাড়ে প্রশাসনিক মহলে। আর এর জেরেই মৃত্যুর কারণ খুঁজতে ময়নাতদন্ত বলে সরকারি সূত্রের খবর। এদিন মৃতদেহটি বানারহাট থানা থেকে জলপাইগুড়ি মর্গে পাঠানো হয়েছে। আজ, মঙ্গলবার ময়নাতদন্ত হবে।
গত অক্টোবর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত বাগানে ৩২ জন শ্রমিক মারা গিয়েছেন। তাঁদের অধিকাংশের মৃত্যু হয়েছে বাগানের শ্রমিক আবাসে। বেশিরভাগ মৃত্যু অপুষ্টিজনিত কারণ বলে তাঁঁদের পরিবারের লোকজন দাবি করেছেন। তবে কোনও ক্ষেত্রে ময়নাতদন্ত না করা হলেও এই প্রথম বাগানের কোনও শ্রমিকের দেহের ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে। বাগানে গত শুক্রবার থেকে সোমবার পর্যন্ত তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে একজন বাদে বাকি দু’জনের মৃত্যু হয় বাড়িতে। বাগানে মৃত্যুর ঘটনা চলতে থাকায় সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা চলছেই। নতুন করে মৃত্যুর ঘটনার পরে জলপাইগুড়ির মহকুমাশাসক সীমা হালদার বলেছেন, “ওঅ ব্যক্তি মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। তাঁর চিকিৎসা করানোর জন্য বাড়িতে স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিরা গিয়েছিলেন। তাঁকে সে সময় বাড়িতে পাওয়া যায়নি।” তিনি জানান, বাগানের শ্রমিকদের একশো দিনের কাজ সহ অন্ত্যোদয় যোজনার চাল ও সপ্তাহে তিন দিন চিকিৎসা শিবির করা হচ্ছে।
মৃত ড্যানিয়েলের দুই ভাই জুয়েল ও লরিন্ডি বাগানের শ্রমিক। পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছয়। ড্যানিয়েল জুয়েলের কাছেই থাকতেন। পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, বাগান বন্ধের পর থেকে ঘরে ঘরে চরম অভাব দেখা দেয়। একের পর এক প্রতিবেশীর মৃত্যুর ঘটনায় তিনি মানসিক ভারসাম্য হারান। দিনভর বাগানের বস্তিগুলিতে ঘুরতেন। কোনও দিন কেউ কিছু খাবার দিলে খেতেন। আবার অনেক সময় না খেয়ে থাকতেন। গত চার মাস ধরে তিনি কাশিতে ভুগছিলেন। তাঁর ভাই জুয়েলের কথায়, “পাথর ভেঙে পরিবার চালাতে হয়। টাকার অভাবে দাদার চিকিৎসা করাতে পারিনি।”