ভাঙনের ভাবনায় বিষাদও

ছোট হয়ে যাওয়ার যন্ত্রণায় কাটল দিন

ফের অঙ্গচ্ছেদ! আবার ছোট হল জলপাইগুড়ি জেলা। স্বাধীনতার সময় পাঁচটি থানা চলে গিয়েছিল পূর্ব পাকিস্তানে। প্রায় মালবাজারের আয়তনের জনপদ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল জলপাইগুড়ি থেকে। সাতষট্টি বছর পর আবার মানচিত্র ছোট হতে চলেছে। ছ’টি ব্লক হারিয়ে কেবল সাতটি ব্লক নিয়ে জলপাইগুড়ি আয়তনে প্রায় অর্ধেক হচ্ছে। যে জেলা শেষ হয় অসম সীমান্তে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের শেষ প্রান্তে, ২৫শে জুন থেকে তা শেষ হবে গরুমারার জঙ্গল পেরিয়ে ধূপগুড়ি ব্লকের সীমানায়। এই ভাগ বাটোয়ারার ফলে প্রশাসন ও অর্থনীতিতে কী পরিবর্তন হবে তা নিয়ে আলোচনায় জেলাশাসক আজ শনিবার সব দফতরকে নিয়ে বৈঠকে বসছেন।

Advertisement

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৪ ০২:২৩
Share:

ফের অঙ্গচ্ছেদ! আবার ছোট হল জলপাইগুড়ি জেলা। স্বাধীনতার সময় পাঁচটি থানা চলে গিয়েছিল পূর্ব পাকিস্তানে। প্রায় মালবাজারের আয়তনের জনপদ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল জলপাইগুড়ি থেকে। সাতষট্টি বছর পর আবার মানচিত্র ছোট হতে চলেছে। ছ’টি ব্লক হারিয়ে কেবল সাতটি ব্লক নিয়ে জলপাইগুড়ি আয়তনে প্রায় অর্ধেক হচ্ছে। যে জেলা শেষ হয় অসম সীমান্তে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের শেষ প্রান্তে, ২৫শে জুন থেকে তা শেষ হবে গরুমারার জঙ্গল পেরিয়ে ধূপগুড়ি ব্লকের সীমানায়। এই ভাগ বাটোয়ারার ফলে প্রশাসন ও অর্থনীতিতে কী পরিবর্তন হবে তা নিয়ে আলোচনায় জেলাশাসক আজ শনিবার সব দফতরকে নিয়ে বৈঠকে বসছেন।

Advertisement

কী কী হারাল জলপাইগুড়ি?

হারাল বক্সা পাহাড়, যেখানে রয়েছে পাহাড় পিপাসুদের প্রিয় ট্রেকিং রুট, আর ঐতিহাসিক বক্সা দুর্গ। ওদিকে রয়ে গেল সংকোশ, রায়ডাক, কালজানি এবং তোর্সা নদী। পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প, জলদাপাড়া আর এ জেলায় নয়। ফলে শুধু হৃদয়ে নয়, পকেটেও টান পড়বে জলপাইগুড়ির। বিশেষ করে ৬৭টা বড় মাপের চা বাগান হারিয়ে কপালে ভাঁজ জলপাইগুড়ির শিল্প মহলের। সব মিলিয়ে যৌথ পরিবার ভেঙে যাওয়ার পর পরিবারের প্রবীণের দশা জলপাইগুড়ির। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একটাই প্রশ্ন দিনভর শোনা গেল, দোকান বাজার, অফিস কাছারিতে, এর কি দরকার ছিল?

Advertisement

অনেকের ক্ষোভ। এই ভাগাভাগির ফলে বিশ্বের দরবারে জলপাইগুড়ি তার বিশিষ্টতা হারাল। ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতির জেলা সম্পাদক বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “জলপাইগুড়ি সারা বিশ্বে প্ল্যান্টেশন ডিস্ট্রিক্ট বলে পরিচিত। ১৫৮টি বড় চা বাগান আছে। যা বিশ্বে রেকর্ড। এখন ৯১টা চা বাগান নিয়ে সেই স্থান আর থাকলো না।”

গোটা ডুয়ার্সই ছিল একটি জেলায় এখন তার প্রায় অর্ধেক যাচ্ছে ওদিকে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুগোল বিভাগের প্রধান সুবীর সরকার বলেন, “এটা প্রশাসনিক বিভাজন। প্রকৃতিকে ভাগ করা যায় না। তবে বক্সা ওদিকে যাওয়ায় জীব বৈচিত্র্যের অনেকটাই এখন পাশের জেলায়। ফলে পর্যটনেরও বড় অংশ যাবে ওদিকে।” বেসরকারী পর্যটন সংস্থার কর্ণধার রাজ বসু বলেন, “পর্যটকদের প্রায় এক তৃতীয়াংশ বক্সা এবং জলদাপাড়া সার্কিটে ঘুরতে যান। এই ব্যবসার কিছু হারাবে জলপাইগুড়ি।” টান পড়বে সরকারের ট্যাঁকেও। উত্তরবঙ্গে রাজস্ব আদায়ে শিলিগুড়ির পরেই স্থান জয়গাঁর ভুটান সীমান্তের। এই ছোট্ট শহর আমদানি রফতানির থেকে বড় অঙ্কের শুল্ক দেয় জেলায়। সেটা হারাবে। জলপাইগুড়ি পর্যটন থেকে পরিষেবা কর, চা বাগানগুলো থেকে জমির কর এবং বিক্রয় কর বাদ পড়ায় রাজস্ব বেশ খানিকটা কমবে বলে আশঙ্কা প্রশাসনের কর্তাদের।

কী দাঁড়াবে জেলা পরিষদ? সভাধিপতি নুরজাহান বেগম বলেন, “৩৭টি আসনের মধ্যে ১৮টি যাচ্ছে আলিপুরদুয়ারে। এখনই নতুন জেলা পরিষদ হবে কি না, সে বিষয়ে কোনও নির্দেশ আসেনি।” প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে এক প্রবীণ বাম নেতা প্রকাশ্যে বললেন, ‘সিদ্ধান্ত স্বাগত’। তার পরই প্রায় ‘ইতি গজ’ বলার মতো করে বললেন, ‘খুব খারাপ হল।’ কারও কটাক্ষ, ‘মানুষ ছোট থেকে বড় হয়, আমরা বড় থেকে ছোট হচ্ছি।’ তবে সর্বদলীয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত আগেই হয়েছে বলে কেউই সরাসরি আপত্তি জানাচ্ছেন না। সবাই জেলা ভাগ সমর্থন করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন