মৌসুমি বায়ুর আনাগোনা এখনও শুরু না হলেও উত্তরবঙ্গের চার জেলায় বর্ষাকালীন পরিস্থিতির উপরে বিশেষ নজরদারির প্রস্তুতি শুরু করে দিল সেচ দফতর। নদীর জলস্তর এবং বন্যা সম্পর্কিত তথ্য জানাতে আগামী ১ জুন তিন জেলায় ‘কন্ট্রোল রুম’ চালু হবে। একই দিনে জলপাইগুড়িতে খোলা হবে কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম। সেখানে চব্বিশ ঘণ্টা পরিষেবার ব্যবস্থা থাকবে। গুজবে কান না দিয়ে বাসিন্দারা যেন সহজে কোন নদীর জলস্তর বিপদ সীমার উপর দিয়ে বইছে, কোন এলাকা প্লাবিত হয়েছে ওই ধরণের বন্যা সম্পর্কিত তথ্য জানতে পারেন সেজন্য দেওয়া হবে টোল ফ্রি নম্বর।
উত্তরবঙ্গ বন্যা নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান গৌতম দত্ত বলেন, “আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার জেলা ছাড়াও দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়িতে আগামী পয়লা জুন ফ্লাড কন্ট্রোল রুম খোলার প্রস্তুতি চলছে। এর বাইরে জলপাইগুড়িতে কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম খোলা হবে। দিনরাত ওই দফতরগুলি খোলা থাকবে।” সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম থেকে কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর, কেন্দ্রীয় জল কমিশন, সিকিম ও ভুটানের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে পাহাড় ও সমতলে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা ও বন্যার পূর্বাভাস জানানোর কাজ চলবে। তিস্তা, জলঢাকা, রায়ডাক, মানসাইর মতো নদীর জলস্তর বিপদসীমা ছুঁয়েছে কিনা, কোন নদীতে লাল, হলুদ সঙ্কেত দেওয়া হয়েছে সেটাও জেনে নেওয়া সম্ভব হবে সেখান থেকে। কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম থেকেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চার জেলা প্রশাসনের কাছে নিয়মিত রিপোর্ট পাঠানো হবে পয়লা জুন থেকে।
মৌসুমি বায়ুর দেখা না মিলতে ফ্লাড কন্ট্রোল রুম খোলার তোড়জোড় কেন? সেচ দফতরের এক কর্তা জানান, উত্তরবঙ্গের আবহাওয়ার সঙ্গে দেশের অন্য এলাকার আবহাওয়ার হিসেব করলে ঠকতে হবে। মে মাসের পরে আর ঝুঁকি নেওয়া সম্ভব নয়। যে কোন সময় পাহাড়ে বর্ষা শুরু হয়ে যেতে পারে। দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহারের বড় নদীগুলি সিকিম ও ভুটান পাহাড় থেকে নেমে এসেছে। পাহাড়ে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হলে তিস্তা, জলঢাকা, তোর্সা, মানসাই, রায়ডাক নদী বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। ওই কারণে বর্ষায় পাহাড়ের আবহাওয়ার উপরে বিশেষ নজরদারি জরুরি হয়ে পরে। আগাম কন্ট্রোল রুম খুলে ওই কাজ অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে করার জন্য প্রস্তুতির কাজ চলছে।
শুধু কন্ট্রোল রুম খোলাই নয়। চার জেলার নদী সংলগ্ন গুরুত্বপূর্ণ অন্তত ২৫টি এলাকায় দিনরাত নজরদারিও ১ জুন থেকে শুরু হয়ে যাবে। অন্তত ৪৫ জন কর্মী ওই কাজে যুক্ত থাকবেন। এলাকায় ঘুরে তাঁরা নদী বাঁধের অবস্থা, ভাঙনের পরিস্থিতি, বসতি এলাকায় জল ঢুকে পরার আশঙ্কা নিয়ে তথ্য সংগ্রহ সেচ দফতরের পাঠাবেন। তাঁদের পাঠানো রিপোর্ট দেখে জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন অথবা বন্যা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উত্তরবঙ্গ বন্যা নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, “সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে কিছু এলাকায় চব্বিশ ঘণ্টা বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা এবারও থাকবে।”