জীবনবিমার টাকা পেতেই অপহরণ, দাবি

জীবন বিমার ৩৫ লক্ষ টাকা পাওয়ার উড়ো খবর সত্যি ভেবেই অপহরণ করা হয়েছিল তাঁকে। ২৪ ঘণ্টা নিখোঁজ থাকার পর বাড়ি ফিরে জামাইয়ের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ করেছেন বামনহাট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ভুবন মোহন পাল। বৃহস্পতিবার স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৫৮
Share:

জীবন বিমার ৩৫ লক্ষ টাকা পাওয়ার উড়ো খবর সত্যি ভেবেই অপহরণ করা হয়েছিল তাঁকে। ২৪ ঘণ্টা নিখোঁজ থাকার পর বাড়ি ফিরে জামাইয়ের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ করেছেন বামনহাট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ভুবন মোহন পাল। বৃহস্পতিবার স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। শুক্রবার রাতে বাড়ি ফেরেন ‘অপহৃত’ এই প্রধান শিক্ষক। তিনি অভিযোগ করেছেন, অপহরণের পরে ২০ লক্ষ টাকা চেয়ে দুষ্কৃৃতীরা তাঁর উপর চাপ তৈরি করেছিল। টাকা না মিললে খুন করে রেললাইনে ফেলে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল তাঁকে। কিন্তু পরে একটি ফোনে বিমার টাকা পাওয়ার খবর সঠিক নয় বলে জানতে পেরে তাঁকে ছেড়ে দেয় তারা। তাঁর জামাই ছাড়াও ওই দুষ্কৃৃতী দলে আরও পাঁচ জন ছিল বলে পুলিশকে জানিয়েছেন ভুবন বাবু। পরিচয় জানালে বিপদ হবে বলেও ভয় দেখানো হয় ওই শিক্ষককে। যদিও, তিনি সব কথা তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদের জানিয়েছেন বলে দাবি করেছেন। কোচবিহারের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব বলেন, “ভুবনবাবুর জামাই ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। সঙ্গে কয়েকজন ছিল। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।”

Advertisement

আতঙ্কের ঘোর এখনও কাটেনি ভুবনবাবুর। তাঁর অভিযোগ, গত বৃহস্পতিবার স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে শিমুলবাড়ি বাজারের কাছে বন্দুক নিয়ে তাঁর পথ আটকায় দুষ্কৃৃতীরা। জোর করে গাড়িতে তুলে কালো চাদর দিয়ে মুখ ঢেকে দেওয়া হয় তাঁর। দুপাশে দু’জন বসেছিলেন। তাদের হাতে রিভলবার ও ভোজালি ছিল। দুষ্কৃতীরা তাঁকে মারধরও করে বলেও অভিযোগ। ভুবন বাবু জানান, মাথাভাঙা যাওয়ার পরে তিনি বুঝতে পারেন তাঁকে শিলিগুড়ি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। গাড়িতে চারজন ছিল। শিলিগুড়িতে ওই দলের সঙ্গে আরও দু’জন যোগ দেয়। এরপরেই তাঁকে নিয়ে যাওয়া দার্জিলিঙয়ে। সেখানে একটি হোটেলে ওঠেন তাঁরা। মুখের ঢাকা খুলে ফেলায় এখানেই তিনি জামাইকে চিনতে পারেন বলে ভুবনবাবু দাবি করেছেন। ২০০৭ সালে দিনহাটার যুবক গৌরব কর্মকারের সঙ্গে ভুবনবাবুর মেয়ের বিয়ে হয়। স্বামীর বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত অত্যাচারের অভিযোগ করে বাপের বাড়ি চলে আসেন ভুবনবাবুর মেয়ে। এরপরেই বিবাহবিচ্ছেদ চেয়ে মামলা করেন।

হোটেলের একটি ঘরেই রাতে সবাই মিলে ছিলেন বলে ভুবনবাবু পুলিশকে জানিয়েছেন। সে সময় তাঁর কাছে ২০ লক্ষ টাকা দাবি করা হয়। ভুবনবাবু বলেন, “আমি ওদের বার বার বোঝাই যে বিমা থেকে ওই টাকা পাইনি। কেউ ভুল তথ্য দিয়েছে। এরপরে বাইরে থেকে কেউ ফোন করে ওদের। তারপরেই আমাকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ওরা।’’ শুক্রবার ফেরার পথে শিলিগুড়িতে, তার কাছ থেকে এটিএম কার্ড কেড়ে নিয়ে দুষ্কৃতীরা ৮০ হাজার টাকা তুলে নেয় বলে অভিযোগ। সেই টাকাও বিমা থেকেই পেয়েছিলেন ভুবনবাবু।

Advertisement

বিবাহবিচ্ছেদ্দের মামলা দায়ের হওয়ার পর থেকেই গৌরববাবু তাঁদের হুমকি দিত বলে অভিযোগ ভুবনবাবুর স্ত্রী মলিনা দেবীর। তিনি বলেন, “এরকম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে আমাদের। পুলিশ ব্যবস্থা নিক সেটাই চাই।” এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ জানান, অভিযুক্ত যুবক দিনহাটার তৃণমূল নেতা অসীম নন্দীর আত্মীয়। তাই তদন্তে প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা তাঁদের। অসীমবাবু অবশ্য বলেন, “ওই যুবকের সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই। অপরাধী কারও আত্মীয় বা আত্মীয় নয়, সেটা বড় কথা নয়, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। পুলিশের কাছে অভিযুক্তদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।” অভিযুক্ত গৌরব ও তার সঙ্গীরা ফেরার বলে পুলিশ জানিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন