জলস্তর কমলেও ফুলহার বিপদসীমার উপরেই

জলস্তর সামান্য কমেছে। তবে এখনও মালদহে বিপদসীমার উপর দিয়েই বইছে ফুলহার। গত রবিবার দুপুর থেকে সোমবার দুপুর অবধি ফুলহারের জলস্তর কমেছে ১৫ সেন্টিমিটার। এ দিন অসংরক্ষিত এলাকায় বিপদসীমার থেকে ১ মিটার ৭ সেন্টিমিটার ও সংরক্ষিত এলাকায় বিপদসীমা থেকে নদী ১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে। তাই হরিশ্চন্দ্রপুর ও রতুয়া এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির তেমন কোনও উন্নতি হয়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৪ ০২:৩৬
Share:

জলস্তর সামান্য কমেছে। তবে এখনও মালদহে বিপদসীমার উপর দিয়েই বইছে ফুলহার।

Advertisement

গত রবিবার দুপুর থেকে সোমবার দুপুর অবধি ফুলহারের জলস্তর কমেছে ১৫ সেন্টিমিটার। এ দিন অসংরক্ষিত এলাকায় বিপদসীমার থেকে ১ মিটার ৭ সেন্টিমিটার ও সংরক্ষিত এলাকায় বিপদসীমা থেকে নদী ১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে। তাই হরিশ্চন্দ্রপুর ও রতুয়া এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির তেমন কোনও উন্নতি হয়নি। জলস্তর কিছুটা কমায় কয়েকটি এলাকায় আবার ভাঙন শুরু হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে বন্যা ও ভাঙনের মোকাবিলা করতে রতুয়ায় জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ৪২ জন কর্মী আসছেন বলে প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে নদী বিপদসীমার উপরে থাকলেও একটি গ্রাম ছাড়া এখনও পরিস্থিতি তেমন বিপজ্জনক নয় বলে প্রশাসনিক কর্তাদের দাবি। মালদহের জেলাশাসক শরদ দ্বিবেদী বলেন, “বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে জরুরি বৈঠক করা হয়েছে। প্লাবিত মানুষদের উদ্ধার করা থেকে শুরু করে তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে রাখার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দফতরকে সতর্ক করা হয়েছে।” চাঁচলের মহকুমাশাসক সঞ্জীব দে জানান, আগাম সব রকম প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তাঁর দাবি, “ত্রিপল, শাড়ি-ধুতি, পশুখাদ্য, কেরোসিন তেল, ওষুধ মজুত রয়েছে। পরিস্থিতি বিপজ্জননক হলে দুর্গতদের ত্রাণ পেতে সমস্যা হবে না।”

Advertisement

সেচ দফতর সূত্রে জানা যায়, রবিবার নদীর জলস্তর ছিল ২৮.৬৫ মিটার। সোমবার দুপুরে তা দাঁড়িয়েছে ২৮.৫০ মিটারে। তবে গত দু’দিন ধরে যে গতিতে জলস্তর বেড়েছিল, তারপর এ দিন তা সামান্য হলেও কমতে শুরু করায় স্বস্তিতে প্রশাসন ও সেচ দফতরের কর্তারা। ভাঙন নিয়ে অবশ্য সেচ দফতরের দুশ্চিন্তা বেড়েছে। সেচ দফতরের মহানন্দা এমব্যাঙ্কমেন্টের ভালুকার এসডিও গোপাল দাস বলেন, “ফুলহারে জল কমেছে। খিদিরপুর-সহ দু-একটি এলাকায় নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। আমরা এলাকায় গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছি।”সেচ দফতর জানিয়েছে, সোমবার গঙ্গার জলস্তর বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে ২৪.৫৮ মিটারে বইছে। ফুলহার নদীর জলস্তর এখও চরম বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে।

টানা বৃষ্টির জেরে শনিবার থেকে জল বাড়তে শুরু করেছিল ফুলহারে। রবিবার দুপুরে নদীর জলস্তর বিপদসীমা পেরিয়ে যায়। ফলে হরিশ্চন্দ্রপুর ও রতুয়ার অসংরক্ষিত এলাকাগুলির অধিকাংশই প্লাবিত হয়ে পড়ে। এলাকার রাস্তাঘাট, খেতের ফসল জলে ডুবে যায়। জলবন্দি হয়ে পড়েছেন ১৫টি গ্রামের বাসিন্দারা। যার মধ্যে রতুয়া-১ ব্লকের জঞ্জালিটোলা, নয়া বিলাইমারি, বঙ্কুটোলা, টিকলিচর, আজিজটোলা ছাড়াও হরিশ্চন্দ্রপুর-২ ব্লকের উত্তর ভাকুরিয়া, দক্ষিণ ভাকুরিয়া, কাওয়াডোল, মীরপুর, রশিদপুর রয়েছে। জল ঢুকে রাস্তাঘাট ডোবা ছাড়াও ডুবেছে পটল, ঢেঁড়শ, লঙ্কার খেত। জঞ্জালিটোলার উত্তম মণ্ডল, বঙ্কুটোলার রাজেন মন্ডলরা বলেন, “বাড়ির উঠোনে জল। এখনও বাড়িতেই রয়েছি। জল আবার বাড়লে বাড়ি ছাড়তে হবে।”

একই রকম আতঙ্কে ভুগছেন গঙ্গা পাড়ের পঞ্চানন্দপুর, বাঙাটোলা, মানিকচক ও ফুলহার নদীতীরবর্তী হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকার লক্ষাধিক মানুষ। এ বারও কালিয়াচক ২ নম্বর ব্লকের পঞ্চানন্দপুর থেকে সাকুল্লাপুর, মানিকচকের ভূতনি দিয়ারার হীরানন্দাপুর পঞ্চায়েতের রাজকুমার টোলা ও হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লকের ফুলহার নদীর লাগোয়া মিঁয়াহাট এলাকার বাসিন্দাদের ইতিমধ্যে সর্তক করেছে সেচ দফতর।

চলতি বছরে ফরাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ ডোমহাট থেকে সুলতানটোলা ও কামালতিপুর পর্যন্ত ৫.৬ কিলোমিটার ভাঙন প্রতিরোধের কাজ করেছে। তার পরেও মনিকচক ও কালিয়াচক ২ নম্বর ব্লক এবারেও বন্যার সম্ভাবনা যে প্রবল তাও স্বীকার করেছেন খোদ সেচ দফতরের নিবার্হী বাস্তুকার অমরেশকুমার সিংহ। তিনি বলেন, “এ বার মালদহের হীরানন্দাপুরের রাজকুমার টোলা, পঞ্চানন্দপুর-সাকুল্লাপুর ও হরিশ্চন্দ্রপুরের মিঁয়াহাট, তিনটি পয়েন্টে ভাঙনের আশঙ্কার ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। ভূতনির রাজকুমার টোলায় ৭৫০ মিটার বাঁধ স্থানীয় পঞ্চায়েত ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে তৈরি করেছে। সেই বাঁধটিকে স্থানীয় পঞ্চায়েত বালির বস্তা দিয়ে শক্তপোক্ত করছে।” ভূতনি এলাকার জেলা পরিষদের তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্য গৌর মণ্ডল বলেন, “রাজকুমার টোলার বাঁধের উপর গোটা ভূতনি বেঁচে রয়েছে। রাজকুমার টোলার বাঁধ ভেঙে গেলে গোটা ভূতনির তিনটি পঞ্চায়েতের লক্ষাধিক মানুষ জলবন্দি হয়ে পড়বেন।”

ফুলহারের জলে প্লাবিত হরিশ্চন্দ্রপুরের মিঁয়াহাট এলাকা। বাপি মজুমদারের তোলা ছবি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement