জয়েও স্বস্তি নেই, পাহাড়ে সংগঠনে জোর দিচ্ছে মোর্চা

লোকসভা ভোটে পাহাড়ে পদ্মফুল ফুটেছে তাদের হাত ধরেই। তবে তাতেও স্বস্তি নেই মোর্চার। কারণ ইতিউতি উঁকি দিচ্ছে ঘাসফুলও। তাই পাহাড়ের তিন মহকুমায় পুরসভা ও বিধানসভা নির্বাচনের আগেই সংগঠনের ফাঁকফোকর ভরাট করতে কোমর বেঁধে আসরে নেমে পড়েছেন মোর্চা নেতৃত্ব। লোকসভা ভোটে তৃণমূল প্রার্থী ভাইচুং ভুটিয়ার বিরুদ্ধে জয়ী হয়েছেন মোর্চা সমর্থিত বিজেপি প্রার্থী সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া। তবে গতবারের তুলনায় পাহাড়ে জয়ের ব্যবধান কমেছে মোর্চার।

Advertisement

রেজা প্রধান

দার্জিলিং শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৪ ০০:৫৫
Share:

লোকসভা ভোটে পাহাড়ে পদ্মফুল ফুটেছে তাদের হাত ধরেই। তবে তাতেও স্বস্তি নেই মোর্চার। কারণ ইতিউতি উঁকি দিচ্ছে ঘাসফুলও। তাই পাহাড়ের তিন মহকুমায় পুরসভা ও বিধানসভা নির্বাচনের আগেই সংগঠনের ফাঁকফোকর ভরাট করতে কোমর বেঁধে আসরে নেমে পড়েছেন মোর্চা নেতৃত্ব।

Advertisement

লোকসভা ভোটে তৃণমূল প্রার্থী ভাইচুং ভুটিয়ার বিরুদ্ধে জয়ী হয়েছেন মোর্চা সমর্থিত বিজেপি প্রার্থী সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া। তবে গতবারের তুলনায় পাহাড়ে জয়ের ব্যবধান কমেছে মোর্চার। আশাতীতভাবে বিজেপি প্রার্থীর ভোট বেড়েছে সমতলে। এই সমীকরণই স্বস্তি কেড়েছে মোর্চা নেতাদের। ২০০৯ সালের তুলনায় এ বার পাহাড়ে মোর্চা সমর্থিত বিজেপি প্রার্থীর জয়ের ব্যবধান কমেছে ৫০ হাজারেরও বেশি। তৃণমূল প্রার্থী ভাইচুং ভুটিয়া শুধু পাহাড়ের তিন মহকুমাতেই ৯১ হাজারেরও বেশি ভোট পেয়েছেন। অথচ সমতল এলাকায় গত লোকসভার তুলনায় মোর্চা সমর্থিত বিজেপি প্রার্থীর ভোট বেড়েছে ১ লক্ষ ১৩ হাজারেরও বেশি । লোকসভা ভোটের এই ফলে, পাহাড়ে সংগঠনের ভাঙন স্পষ্ট হওয়ায় কী ভাবে তা ভরাট করা যায় তা নিয়ে সম্প্রতি মোর্চার শীর্ষ স্তরে শুরু হয়েছে আলোচনা।

পরিস্থিতি পর্যালোচনায় গত ১৪ই জুন দার্জিলিং এর ২৭টি ওয়ার্ড ও লাগোয়া সাতটি পঞ্চায়েত এলাকার প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেন মোর্চা নেতারা। প্রতিটি ওয়ার্ডে যে উন্নয়ন হয়েছে সে সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি মোর্চার কর্মী সমর্থকদের আরও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার পরামর্শ দেন নেতারা। একইসঙ্গে প্রতি ওয়ার্ডে আলাদা করে বৈঠকেরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মোর্চার দার্জিলিং শহর কমিটির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ প্রধান বলেন, “লোকসভা ভোটের ফলাফল নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

Advertisement

মোর্চা সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই পাহাড়ের বিভিন্ন ইউনিট তথা বুথ ভিত্তিক পর্যালোচনা বৈঠক শেষের পথে। সেই বৈঠকের রিপোর্ট সরাসরি দলের শীর্ষ নেতাদের কাছে পৌঁছেছে। ৫ জুন মোর্চার দার্জিলিং মহকুমা কমিটিও বৈঠক করেছে। সে বৈঠকের রিপোর্ট তৈরি হলেও, এখনও দলের শীর্ষ পর্যায়ে জমা দেওয়া হয়নি বলে জানা গিয়েছে। দলীয় নেতৃত্বের নির্দেশে বৈঠকের রিপোর্টগুলিতে সংগঠনের খামতি কোথায় এবং কেন ভোট কমেছে তা অবশ্যই লিখতে বলা হয়েছে। লোকসভা ভোটে সংশ্লিষ্ট কমিটির কোনও সাফল্য থাকলে তাও জানাতে বলা হয়েছে।

লোকসভায় হেরে গেলেও পাহাড়ে জমি ছাড়তে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব। সম্প্রতি পাহাড়ে তৃণমূলের পরাজিত প্রার্থী ভাইচুং ভুটিয়াকেই দার্জিলিং জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে একবার পাহাড়ে ঘুরেও গিয়েছেন ভাইচুং। পাহাড়ে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের সংগঠন বিস্তারের চেষ্টাকে তাই কোনও ভাবেই হালকা ভাবে নিচ্ছেন না মোর্চা নেতৃত্ব। এই অবস্থায় হাত গুটিয়ে বসে থাকার পক্ষপাতী নন মোর্চা নেতারাও।

দার্জিলিঙে পরবর্তী নির্বাচন বলতে বছর দু’য়েক পরে বিধানসভা নির্বাচন। সে বছরই পাহাড়ের তিন পুরসভাতেও নির্বাচন। সময়ের হিসেবে দেরি থাকলেও এখনই যদি সংগঠন গোছানোর কাজ শুরু না হয়, তবে সংগঠনের ফাঁকফোকর আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা মোর্চা নেতৃত্বের। দলের এক নেতার জানাচ্ছেন, ভোট ভাগাভাগির জেরেই দলের একক ভোট কমেছে। এ বারের ভোটে তৃণমূল সহ নির্দল প্রার্থী ছিল। পরের নির্বাচনগুলিতে প্রার্থীর সংখ্যা বাড়তে পারে। তৃণমূলের সঙ্গেও এখন সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। তাঁর কথায়, “সংগঠন মজবুত না হলে নিজেদের ভোট ধরে রাখা যে কঠিন তা দলের শীর্ষ নেতৃত্ব বুঝেছেন। তাই সর্বস্তরে বৈঠক এবং পর্যালোচনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

তবে মোর্চার এই ‘প্রস্তুতি’কে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূল। পাহাড়ে তৃণমূলের অন্যতম আহ্বায়ক বিন্নি শর্মার কথায়, “কারা পাহাড়ের মানুষের দুঃখে পাশে থাকে, আর কারা তা নিয়ে রাজনীতি করে তা মানুষ বুঝেছেন। লোকসভা নির্বাচনে তারই ইঙ্গিত মিলেছে। আগামীদিনে আমাদের জনসমর্থন আরও বাড়বে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন