চার ঘণ্টার আগুনে ছাই ১৭টি দোকান

ঝিল বুজিয়ে দেওয়ায় জল মেলেনি, ক্ষতি দেড় কোটি

বিধ্বংসী আগুনে ভস্মীভূত হল আলিপুরদুয়ার শহরের স্টেশন রোড সংলগ্ন ১৭টি দোকান। দমকলের আটটি ইঞ্জিন চার ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় দেড় কোটি টাকা বলে অনুমান ব্যবসায়ীদের। জানা গিয়েছে, দোকানগুলির ঠিক পিছনে ঝিল থাকলেও সেখানে জল মেলেনি। তাই অন্য জায়গা থেকে জল বয়ে আনতে অনেকটা সময় চলে যায় দমকল কর্মীদের। জলাশয় ভরাট করে জায়গা বেদখলের পাশাপাশি ঝিল সংস্কার না হওয়ার খেসারত গুনতে হল বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৩৮
Share:

লেলিহান। আগুন নেভানোর চেষ্টা দমকল কর্মীদের। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে আলিপুরদুয়ারে ছবিটি তুলেছেন নারায়ণ দে।

বিধ্বংসী আগুনে ভস্মীভূত হল আলিপুরদুয়ার শহরের স্টেশন রোড সংলগ্ন ১৭টি দোকান। দমকলের আটটি ইঞ্জিন চার ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় দেড় কোটি টাকা বলে অনুমান ব্যবসায়ীদের। জানা গিয়েছে, দোকানগুলির ঠিক পিছনে ঝিল থাকলেও সেখানে জল মেলেনি। তাই অন্য জায়গা থেকে জল বয়ে আনতে অনেকটা সময় চলে যায় দমকল কর্মীদের। জলাশয় ভরাট করে জায়গা বেদখলের পাশাপাশি ঝিল সংস্কার না হওয়ার খেসারত গুনতে হল বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা।

Advertisement

বৃহস্পতিবার রাত দেড়টা নাগাদ স্টেশন রোডে একটি মোবাইল ফোনের দোকানে প্রথম আগুন দেখতে পান বিয়েবাড়ি ফেরত কিছু লোকজন। তাঁরাই আশেপাশের লোকজনকে ডেকে তোলেন। কিন্তু ততক্ষণে আগুন ছড়িয়ে পড়ে লাগোয়া মুদিখানা, স্টেশনারি ও একটি আতশ বাজির দোকানে। খবর পেয়ে আলিপুরদুয়ার দমকল কেন্দ্র থেকে চারটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এক একটি ইঞ্জিনে যতটুকু জল ছিল মিনিট দশেকেই তা শেষ হয়ে যায়। অভিযোগ,দোকানগুলির ঠিক পেছনে জলাশয় থাকলেও সেখানে কচুরিপানা সরিয়েও জল মেলেনি। তিন কিলোমিটার দূরে দমকল কেন্দ্র থেকে জল বয়ে আনতে অনেকটা সময় চলে যায় দমকল কর্মীদের। আর, তারমধ্যেই দাবানলের মত আগুন এক দোকান থেকে আরেক দোকানে ছড়িয়ে পড়ে। আলিপুরদুয়ারের দমকল কেন্দ্রের অফিসার ইনচার্জ প্রদীপ সরকার বলেন, দোকানগুলির পেছনের ঝিলে জল মিললে সে ক্ষেত্রে কখনই পাঁচটির বেশি দোকানে আগুন ছড়াতে পারত না। দমকল কেন্দ্র থেকে জল নিয়ে আসতে অনেকটা সময় চলে যায়।”

আগুন ক্রমশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় রাত তিনটে নাগাদ হাসিমারা,কোচবিহার,তুফানগঞ্জ,ও ফালাকাটা থেকে আরও চারটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। মোট আটটি ইঞ্জিন আগুন নেভানোর কাজে নামানোর পর চার ঘণ্টার চেষ্টায় দমকল কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। শেষের দিকে অনেক কষ্টে ঝিল থেকে জলের যোগান এলেও ততক্ষণে সব শেষ।

Advertisement

সোনার দোকানের মালিক তপন কুণ্ডুর হাহাকার, “সর্বস্বান্ত হয়ে গেলাম। ঝিলে জল থাকলে দোকানটা হয়তো বেঁচে যেত। আলিপুরদুয়ার টাউন ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক উপল দত্তের কথায়,“ঝিলে জল না থাকায় এত ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হলেন। সবার বীমা নেই। তাদের জন্য আমরা কি করতে পারি তা যেমন দেখা হবে, পাশাপাশি সরকার যাতে এগিয়ে আসে সেই দাবি জানাব আমরা।”

জলাভূমি বুঝিয়ে জায়গা বেদখল হয়ে যাওয়া ঠেকাতে প্রশাসনের কোনও হেলদোল নেই বলে অভিযোগ তুলে শুক্রবার সরব হয় আলিপুরদুয়ার অভিভাবক মঞ্চ। তাঁরা এদিন জেলা শাসকলের কাছে ঝিল সংস্কারেরও দাবি জানিয়ে আসেন। সংগঠনের সম্পাদক ল্যারি বসুর কথায়, “ঝিল থেকে জল মিললে এত মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতেন না। ঝিল বেদখল রুখতে এবং এর সংস্কারের দাবিতে আমরা প্রয়োজনে বাসিন্দাদের নিয়ে আন্দোলনে নামব।”

ঝিল ভরাট করে জায়গা বেদখলের ঘটনা স্বীকার করে তৃণমূল পরিচালিত আলিপুরদুয়ার পুরসভার চেয়ারম্যান আশিস দত্ত বলেন, “ওই ঝিল শুকিয়ে গেলেও দেড়শো মিটার দুরে অন্য একটি ঝিলে জল ছিল। সেখান থেকে জলের যোগান দিতে পারতেন দমকল কর্মীরা। দীর্ঘ দিন ধরে ঝিল দখল হচ্ছে। তবে নতুন করে ঝিল যাতে দখল না হয় সে ব্যাপারে পদক্ষেপ করা হবে।”

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়াতে দ্রুত প্রশাসনিক কমিটি গড়ার কথা বলেছেন তৃণমূলের আলিপুরদুয়ার জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement