ঝকঝকে পরিপাটি স্কুল, মিলল নির্মল শিরোপা

কোন স্কুল চত্বরের পড়ুয়ারা তৈরি করেছে ‘কিচেন গার্ডেন’। কোন স্কুলের পড়ুয়ারা নিজেদের উদ্যোগে কেনা পাপোস রেখেছে ক্লাসঘরের বাইরে। জুতো খুলে বাইরে রাখা পাপোসে পা মুছে খালি পায়ে একেএকে ক্লাসে ঢুকছে। কোন স্কুলে আবার প্রতিটি ঘরে রাখা জঞ্জালের ‘ ডালি’। একটুকরো আবর্জনাও বাইরে ছড়িয়ে ফেলার প্রবণতা নেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৫ ০১:৫১
Share:

(বাঁ দিকে) পুরস্কার হাতে উচ্ছ্বসিত খুদেরা। (ডান দিকে) অনুষ্ঠানে খুদে পড়ুয়াদের নাটক। বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

কোন স্কুল চত্বরের পড়ুয়ারা তৈরি করেছে ‘কিচেন গার্ডেন’। কোন স্কুলের পড়ুয়ারা নিজেদের উদ্যোগে কেনা পাপোস রেখেছে ক্লাসঘরের বাইরে। জুতো খুলে বাইরে রাখা পাপোসে পা মুছে খালি পায়ে একেএকে ক্লাসে ঢুকছে। কোন স্কুলে আবার প্রতিটি ঘরে রাখা জঞ্জালের ‘ ডালি’। একটুকরো আবর্জনাও বাইরে ছড়িয়ে ফেলার প্রবণতা নেই। সেইসঙ্গে মিড ডে মিলের খাওয়াদাওয়ার আগে নিয়ম করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নেওয়ার রেওয়াজ। এমনই নজরকাড়া বৈশিষ্ট্যের স্বীকৃতি হিসাবে জেলার ৫২টি স্কুলকে নির্মল বিদ্যালয় পুরস্কার দিল কোচবিহার সর্বশিক্ষা মিশন প্রকল্প দফতর। বৃহস্পতিবার কোচবিহার শহরের সাহিত্য সভা হলঘরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট স্কুল কর্তৃপক্ষ ও পড়ুয়াদের হাতে ওই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। পুরস্কারের আর্থিক মূল্য নগদ ৫ হাজার টাকা, শংসাপত্র ও নির্মল বিদ্যালয় স্মারক ট্রফি। যা হাতে পেয়ে পড়ুয়াদের কেউ আনন্দে উচ্ছ্বসিত, কেউ আবার সবভুলে ট্রফি নিয়ে আবেগে মাতল। পুরস্কার নিয়ে উচ্ছ্বাসে মাতলেন শিক্ষকরাও।

Advertisement

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কোচবিহারের অতিরিক্ত জেলাশাসক আয়েষা রানি বলেন, “জেলার প্রতিটি স্কুলকে নির্মল রাখার চেষ্টা করতে হবে।” সর্বশিক্ষা মিশন প্রকল্প দফতরের ভারপ্রাপ্ত জেলা আধিকারিক তথা ডিআই (প্রাথমিক) নিহারকান্তি ভট্টাচার্য বলেন, “ জেলার ২৬টি শিক্ষা সার্কেল এলাকা থেকে একটি করে প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয় ওই পুরস্কারের জন্য তৈরি নির্বাচক কমিটির প্রদত্ত নম্বরের ভিত্তিতে মনোনীত করা হয়েছে। এদিনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের পরিবেশ প্রতিদিন পরিচ্ছন্ন রাখার বার্তা দেওয়া হয়।”

সর্বশিক্ষা মিশন প্রকল্প দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, কোচবিহার জেলায় প্রাথমিক স্কুলের সংখ্যা ১৮৪০টি। উচ্চ প্রাথমিক স্কুল রয়েছে ২৬৪টি। মোট ২৬টি শিক্ষা সার্কেল এলাকায় শিক্ষা জেলা বিভক্ত। বিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখায় উৎসাহ দিতে ২০১২-১৩ সাল থেকে নির্মল বিদ্যালয় পুরস্কার দেওয়ার রেওয়াজ চালু হয়। প্রথমবার শুধুমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলি পুরস্কারের আওতায় ছিল। পরের বছর থেকে উচ্চ প্রাথমিক স্কুলগুলিকেও পুরস্কারের আওতায় আনা হয়। ২০১৪-১৫ সালের পুরস্কারের জন্য দফতরের তৈরি নির্বাচক কমিটি প্রতিটি সার্কেল এলাকা ঘুরে একটি করে প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক স্কুলের নাম চূড়ান্ত করে পাঠায়। সেই ভিত্তিতেই ৫২ টি স্কুলের তালিকা তৈরি করা হয়। দফতরের এক আধিকারিক বলেন, স্কুলের শিশু বান্ধব পরিবেশ, কিচেন গার্ডেন, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পৃথক শৌচাগারের পরিকাঠামো, পরিচ্ছন্নতা, মিড ডে মিল খাবার আগে ভাল করে পড়ুয়াদের সাবান দিয়ে হাত ধোঁওয়ার প্রবণতা, পড়ুয়া-শিক্ষক সংখ্যার অনুপাত প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয় আলাদা করে খতিয়ে দেখে মোট ১০০ নম্বরের ওপর স্কোর হয়। প্রতিটি সার্কেলের সর্ব্বোচ্চ নম্বর প্রাপক একটি করে স্কুলের নাম এভাবে চূড়ান্ত হয়।

Advertisement

দিনহাটার আটিয়াবাড়ি এলাকার অধর রায় এসডি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক চিলতে জমিতে তৈরি কিচেন গার্ডেনে মরসুমি চাষ হচ্ছে। পেঁপে, বরবটি, লঙ্কা, কুমড়ো এখনও রয়েছে। বর্ষার মরসুম শুরুর আগে বেগুন, ঝিঙে ফলেছে। মরসুমি ফুলের বাগান বাড়তি আকর্ষণ। তুফানগঞ্জ বিবেকানন্দ হাইস্কুলের ক্লাসঘরে ঢোকার আগে প্রতিটি ঘরের সামনে রাখা পাপোস। জুতো খুলে পা মুছে পড়ুয়ারা রোজ ক্লাসে ঢুকছে। ছাত্র-ছাত্রীদের আলাদা বসে খাওয়ার ব্যবস্থা, বেসিন, পরিস্রুত পানীয় জল, বিশাল সবুজ মাঠে চেহারা অনেকটা পেতে রাখা গালিচার মত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন