ট্রেনে মাদক খাইয়ে সিপিএম নেত্রীর সর্বস্ব লুঠ

ফের ট্রেনের কামরায় মাদক মেশানো চা খাইয়ে লুঠের অভিযোগ। এবার নিশানায় সিপিএম নেত্রী তথা শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি মণি থাপা। তাঁর সমস্ত জিনিসপত্র লুঠ করে পালায় দুষ্কৃতীরা। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ওই সিপিএম নেত্রীকে শিলিগুড়ির প্রধাননগরের একটি নার্সিংহোমের আইসিইউ’তে ভর্তি করানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোরে শিয়ালদহ থেকে এনজেপিগামী উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসে ঘটনাটি ঘটেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৫০
Share:

শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি সিপিএমের মণি থাপাকে দেখে নার্সিংহোম থেকে বেরিয়ে আসছেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য ও দার্জিলিং জেলা সিপিএমের সম্পাদক জীবেশ সরকার।

ফের ট্রেনের কামরায় মাদক মেশানো চা খাইয়ে লুঠের অভিযোগ। এবার নিশানায় সিপিএম নেত্রী তথা শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি মণি থাপা। তাঁর সমস্ত জিনিসপত্র লুঠ করে পালায় দুষ্কৃতীরা। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ওই সিপিএম নেত্রীকে শিলিগুড়ির প্রধাননগরের একটি নার্সিংহোমের আইসিইউ’তে ভর্তি করানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোরে শিয়ালদহ থেকে এনজেপিগামী উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসে ঘটনাটি ঘটেছে।

Advertisement

রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মিলনীর কর্মসূচিতে যোগ দিতে কলকাতায় গিয়েছিলেন মণি দেবী। তিনি সংগঠনটির দার্জিলিং জেলার সভানেত্রী। সঙ্গে আরও ৫০ জন সদস্য থাকলেও বুধবার ওই ট্রেনে একাই ফিরছিলেন তিনি। রেল পুলিশ সূত্রের খবর, মণিদেবী ট্রেনের এস-৮ কামরার ৯ নম্বর আসনে ছিলেন। রাত সাড়ে ৮ টা পর্যন্ত তিনি সংবাদপত্র ও বই পড়েন। এর পরে লোয়ার বার্থটিতে শুয়ে পড়েন। তার উপরে মিডল এবং আপার বার্থেই ওই দুই সন্দেহভাজন দুষ্কৃতী ছিলেন বলে পুলিশের অনুমান। প্রাথমিক তদন্তের পর রেল পুলিশ জেনেছে, সাধারণ টিকিট কেটে ট্রেনের ওই কামরায় উঠেছিলেন শুখিয়াপোখরির বাসিন্দা আরতী মাঝি এবং তাঁর ভাই প্রসেস ছেত্রী। এজন্য তাঁরা ফাইনও দেন। তখন ওই দুই দুষ্কৃতীই ভাই-বোনকে নিজেদের জায়গা ছেড়ে দেন।

দুষ্কৃতীদের দেওয়া চা খেয়ে ওই দুই যাত্রীও তাঁদের সর্বস্ব খুঁইয়েছেন। তাঁদের উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। ঘটনাচক্রে ট্রেনের ওই কামরায় ছিলেন সিপিএম নেত্রীর এক প্রতিবেশী বাসুদেব দত্ত। তিনিই নেত্রীর পরিবারের লোকজনকে খবর দেন। এনজেপি স্টেশনে অচৈতন্য অবস্থায় মণিদেবীকে উদ্ধার করে নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। বাসুদেববাবু বলেন,“রাতে মণিদেবীকে দেখার পর কথাও বলি। ট্রেন সকালে রাঙাপানিতে দাঁড়ালে সেখানে নেমে গাড়িতে চলে যাব বলে দু’জনে ঠিক করি। সকালে শৌচালয়ে যাওয়ার সময় ওঁকে ডাকি। সাড়া দিচ্ছিলেন না। ভেবেছিলাম ঘুমোচ্ছেন। ৮টা নাগাদ রাঙাপানিতে আরেক সহযাত্রী আমাকে ডাকেন। তখন ওঁর মুখ দিয়ে গোঙানির আওয়াজ হচ্ছিল। গ্যাঁজলা বার হচ্ছিল। আরও দুই জন যাত্রীও অসুস্থ ছিলেন। শিবমন্দিরের এক পরিচিতকে টেলিফোন করে মণিদেবীর বাড়িতে খবর দিতে বলি। পরে সকলে মিলে ওঁকে নার্সিংহোমে নিয়ে যাই।”

Advertisement

ঘটনার পরেই তদন্ত নামেন রেল পুলিশের অফিসারেরা। মণিদেবীর স্বামী ধ্রুব ছেত্রী এনজেপি রেল পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্‌সাধীন দুই যাত্রী মণিদেবীর তুলনায় অনেকটাই সুস্থ থাকায় তাঁদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ। প্রধাননগরের নার্সিংহোমটিতে মণি দেবী ভর্তি রয়েছেন সেখানে এসেও খোঁজখবর করেন পুলিশ আধিকারিকরা। এর পরেই ওই কামরায় মণিদেবীদের সঙ্গে থাকা সন্দেহভাজন দুই সহযাত্রীর হদিশ শুরু হয়। শিলিগুড়ির রেল পুলিশ সুপার দেবাশিস সরকার বলেন, “দুষ্কৃতীরা যাত্রী সেজে ট্রেনে উঠেছিল। কিষাণগঞ্জে দুই সন্দেহভাজন নেমে গিয়েছে। আমরা বিহার পুলিশের সঙ্গেও যোগাযোগ করছি।”

সকালে খবর পেয়েই নার্সিংহোমে যান সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য, জেলা সিপিএমের কার্যকরী সম্পাদক জীবেশ সরকার-সহ শহরের বহু সিপিএম নেতানেত্রী। তাঁরা সকাল থেকে দুপুর অবধি দফায় দফায় চিকিত্‌সকদের সঙ্গে কথা বলেন। অশোকবাবু বলেন, “ট্রেনে যাতায়াত করা দিনেদিনে উদ্বেগের বিষয় হয়ে যাচ্ছে। মণি’র অবস্থা অত্যন্ত গুরুতর। চিকিত্‌সকেরা সবর্ক্ষণ নজরদারি করছেন।” নার্সিংহোম সূত্রের খবর, এদিন রাত অবধিও মণিদেবীর পুরোপুরি জ্ঞান ফেরেনি। তাঁর স্বামী ধ্রুববাবু বলেন, “ স্ত্রীর অবস্থা খুব খারাপ, ট্রেনের মধ্যে পড়ে রয়েছে,এক প্রতিবেশীর মাধ্যমে এই খবর পাই। এখনও ওর জ্ঞান ফেরেনি। ওকে বিষ খাওয়ানো হয়েছে।”

ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন