বালুরঘাটে তৃণমূলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের রেশ চলছেই। পূর্তমন্ত্রীর অনুগামী তৃণমূল কর্মী দুলাল সিংহের উপর হামলার ঘটনায় কেউ ধরা না পড়লেও বিরুদ্ধ বিপ্লব মিত্র গোষ্ঠীর এক তৃণমূল সমর্থকের দায়ের করা হামলার অভিযোগে বৃহস্পতিবার দুই যুবককে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ধৃতরা মন্ত্রী গোষ্ঠী চয়নিকা লাহার অনুগামী বলে পরিচিত। এ দিন ধৃত দুই যুবক বান্টি বিশ্বাস ও বিল্টু দাসের বিরুদ্ধে পুলিশ খুনের চেষ্টা (৩০৭), আঘাত করা (৩২৬), চুরি (৩৭৯)-সহ একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করে আদালতে পাঠালে তাদের আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত বিচারক জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। মন্ত্রী অনুগামী বলে পরিচিত তৃণমূল নেতা সুভাষ চাকী অভিযোগ করেন, ধৃতদের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার মত মিথ্যা অভিযোগে মামলা করা হয়েছে পরে তদন্তে তা প্রমাণ হবে।
ইতিমধ্যে ঘটনার খবর পূর্তমন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তীর কাছে পৌঁছেছে। দলীয় সূত্রের খবর, আজ, শুক্রবার কলকাতার তৃণমূল ভবনে দলনেত্রীর উপস্থিতিতে সভার পরে বালুরঘাটের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। ওই সভায় যোগ দিতে এ দিন পুরপ্রধান চয়নিকা লাহা কলকাতায় রওনা হন। তিনি বলেন, “হামলার ঘটনা নিয়ে দলের জেলা সভাপতি বিপ্লবদাকে আগেই ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছি। কলকাতায় রাজ্য নেতৃত্বকে সব জানাব।”
পুলিশ জানিয়েছে, অষ্টমীর দিন রাতে শহরের ডাকবাংলোপাড়া এলাকায় দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মারপিটের ঘটনায় বিশাল ঘোষ নামে এক যুবক জখম হন। তিনি তৃণমূল জেলা সভাপতি বিপ্লব গোষ্ঠীর অনুগামী বলে পরিচিত। তাঁর উপরে হামলার অভিযোগে চার জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। তাঁরা পুরপ্রধান চয়নিকা লাহার অনুগামী বলে পরিচিত। দু’সপ্তাহ আগের ওই ঘটনার পরে এ দিন অভিযুক্ত দু’জনকে গ্রেফতারের ঘটনায় ফের পুলিশের বিরুদ্ধে পাল্টা পক্ষপাতের অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন মন্ত্রীর অনুগামীদের অনেকেই। তাঁদের অভিযোগ, বুধবার রাতে জখম দুলালের মা কাজলীদেবী অজ্ঞাত পরিচয় তিন দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে ছেলের উপর প্রাণঘাতী হামলার অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ এখনও পর্যন্ত অপরাধীদের ধরতে তত্পর নয়। জেলা পুলিশ সুপার শিসরাম ঝাঝারিয়া বলেন, “অভিযোগের তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
গত মঙ্গলবার দুপুরে শহরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা, পেশায় প্রাথমিক শিক্ষক ওই যুবককে বাড়ির সামনে টিউবলাইটের রড দিয়ে মেরে জখম করে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ।
তাঁকে বালুরঘাট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার পর দু’দিন কেটে গেলেও ঘটনায় পুলিশি তত্পরতা চোখে পড়েনি বলে তৃণমূলের একাংশ অভিযোগ তুলেছে। অথচ ঘটনার দিন হাসপাতালে ভর্তি করার পরই প্রহৃত ওই যুবকের ইনজুরি রিপোর্ট বালুরঘাট থানায় পাঠানো হয়েছে। বালুরঘাট হাসপাতালের সুপার অসিত দেওয়ান বলেন, “নিয়ম মত ইনজুরি সম্পর্কে হাসপাতাল থেকে পুলিশকে জানানো হয়েছে।” বালুরঘাট থানায় প্রহৃত দুলালের মা কাজলীদেবী লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, ছেলেকে প্রাণে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে আততায়ীরা হামলা চালানোর সময় হুমকি দিয়ে বলে, “তোর বড় বাড় বেড়েছে।” তাঁর অভিযোগ, “দু’জন নেতার নাম উল্লেখ করে বলতে থাকে, ‘তোর এতবড় সাহস তুই নেতাদের বিরুদ্ধে চলছিস। তোকে মারবই। বাঁচতে চাইলে রাজনৈতিক দল করিস না বলে হুমকি দিয়ে ওই তিন দুষ্কৃতী পালিয়ে যায়।”
পুরসভার কর্তৃত্ব নিয়ে দুই গোষ্ঠীর কাজিয়ার জেরে পুরপ্রধানের স্বামীকে ফোনে হুমকির অভিযোগে পুলিশ এক তৃণমূল কর্মীকে ওইদিন রাতেই গ্রেফতার করেছিল। পাল্টা বিরুদ্ধ জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র গোষ্ঠীর কাউন্সিলর ব্রতময় সরকার তাকে হুমকি দিয়ে টাকা ও সোনার চেন ছিনতাইয়ের অভিযোগ দায়ের করেন। পুরপ্রধানের স্বামী ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলারের বিরুদ্ধে প্রথম হুমকির মামলায় পুলিশ তত্পরতার সঙ্গে এক তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করে। ব্রতময়বাবুর দায়ের করা অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা না নেওয়ার পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের নালিশ জানান অপর পক্ষ।