তৃণমূলে রব্বানি, ‘দুর্বল’ কংগ্রেস

কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগ দিলেন উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখর বিধানসভার কংগ্রেসের বিধায়ক গোলাম রব্বানি। সোমবার কলকাতার ধর্মতলায় তৃণমূলের শহিদ দিবসের সমাবেশে কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগ দেন তিনি। শুধু রব্বানিই নয়, গোয়ালপোখর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তপনকুমার সিংহও কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। এলাকার উন্নয়নের স্বার্থেই তাঁর এই দলবদল বলে দাবি করেছেন রব্বানি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রায়গঞ্জ ও ইসলামপুর শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৪ ০২:১১
Share:

কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগ দিলেন উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখর বিধানসভার কংগ্রেসের বিধায়ক গোলাম রব্বানি। সোমবার কলকাতার ধর্মতলায় তৃণমূলের শহিদ দিবসের সমাবেশে কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগ দেন তিনি। শুধু রব্বানিই নয়, গোয়ালপোখর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তপনকুমার সিংহও কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন।

Advertisement

এলাকার উন্নয়নের স্বার্থেই তাঁর এই দলবদল বলে দাবি করেছেন রব্বানি। তিনি বলেন, “উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখর সব থেকে পিছিয়ে পড়া এলাকা। এলাকাতে কোনও কলেজ, হাসপাতাল কিছুই নেই। শিক্ষাতেও পিছিয়ে পড়েছে এই এলাকা। উন্নয়ন না করতে পেরে বিধায়ক থেকে লাভ নেই। এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে আমি তৃণমূলে যোগ দিয়েছি।”

কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত গোয়ালপোখরে এই দলবদলে কংগ্রেস বেশ দুর্বল হয়ে পড়ল বলেই মনে করা হচ্ছে। যদিও কংগ্রেস তা অস্বীকার করেছে। কংগ্রেস সূত্রে খবর, গোলাম রব্বানি রায়গঞ্জের প্রাক্তন সাংসদ দীপা দাশমুন্সির অনুগামী বলে পরিচিত ছিলেন। উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে গোয়ালপোখর বিধানসভা কেন্দ্র থেকেই দীপাদেবী প্রথমবার কংগ্রেস বিধায়ক নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালে দীপাদেবী রায়গঞ্জ লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর প্রথমবার গোয়ালপোখর বিধানসভা কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে হেরে যান গোলাম রব্বানি। ২০১১ সালে গোয়ালপোখর বিধানসভা ভেঙে চাকুলিয়া বিধানসভা গঠিত হয়। ওই বছর গোয়ালপোখর কেন্দ্রে ১৩ হাজারেরও বেশি ভোটে কংগ্রেসের টিকিটে জয়ী হন রব্বানি। তাঁর হয়ে সেইসময় টানা প্রচারও চালিয়েছিলেন দীপাদেবী।

Advertisement

লোকসভা নির্বাচনে গোয়ালপোখর বিধানসভায় রায়গঞ্জের প্রার্থী দীপাদেবীর প্রচারের প্রধান দায়িত্বেও ছিলেন গোলাম রব্বানি। তাঁর বিধানসভা ক্ষেত্রে গোয়ালপোখর থেকে প্রায় ১৮ হাজার ভোটে এগিয়েও ছিল কংগ্রেস। তবে ভোটে সিপিএম প্রার্থী মহম্মদ সেলিমের কাছে দীপাদেবী পরাজিত হওয়ার পর হারের জন্য তিনি জেলা কংগ্রেস নেতাদের একাংশকে দায়ী করেছিলেন। সেই রব্বানির দলবদলে কংগ্রেস এলাকায় অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়বে বলে মত স্থানীয় রাজনৈতিক মহলের একাংশের।

কংগ্রেস সূত্রের খবর, কয়েকদিন আগে গোলাম রব্বানির তৃণমূলে যাওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন মোহিতবাবু। তিনি বলেন, “আমি গোলাম রব্বানিকে ফোন করে জানতে চেয়েছিলাম, তিনি তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন কি না। কিন্তু গোলাম তৃণমূলে যোগ দেবেন না বলে আমাকে দাবি করেন। আমি ওঁকে বলেছিলাম তৃণমূলে যোগ দেবেন না। কংগ্রেসে থাকুন।” তবে রব্বানি যাওয়ায় কংগ্রেসের কোনও ক্ষতি হবে না বলে দাবি করেছেন মোহিতবাবু। তাঁর কথায়, “তৃণমূল টাকা দিয়ে গরু-ছাগল কিনে দল ভারী করছে। গোলাম কংগ্রেসের টিকিটে জয়ী হয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে ক্ষমতা ও লোভে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। গোলাম রব্বানি তৃণমূলে যোগ দিলেও গোয়ালপোখর বিধানসভা কেন্দ্রে কংগ্রেসের কোনও ক্ষতি হবে না। দুষ্ট গরুর চাইতে শূন্য গোয়াল অনেক ভাল।” রব্বানি অবশ্য কংগ্রেসের বিরুদ্ধে কিছু বলেলনি। তাঁর কথায়, “আমি এক জন শিক্ষক হয়ে কারও কোনও সমালোচনা করতে চাই না. তৃণমূলে যোগ দেওয়াটা নিজের সিদ্ধান্ত।”

তবে রব্বানিকে বিঁধতে ছাড়েনি সিপিএম-বিজেপি। রায়গঞ্জের সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিম বলেন, “ক্ষমতার অলিন্দে থাকার জন্যই গোলাম রব্বানি তৃণমূলে যোগ দিলেন। আর তৃণমূল কী ধরনের দল, তা গোলাম রব্বানিকে দলে ঢুকিয়ে প্রমাণ করে দিল।” গোলাম রব্বানির তৃণমূলে যোগ দেওয়ার বিষয়টিকে কটাক্ষ করেছেন বিজেপির জেলা সভাপতি শুভ্র রায়চৌধুরীও। তিনি বলেন, “কংগ্রেস ও তৃণমূল দু’দলই ক্ষমতার স্বার্থে রাজনীতি করে। যতদিন দীপাদেবী সাংসদ ছিলেন, ততদিন বিভিন্ন স্বার্থে গোলাম রব্বানি কংগ্রেসে ছিলেন। দীপাদেবী হেরে যেতেই তিনি একই স্বার্থে তৃণমূলে যোগ দিলেন।”

জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্য এ প্রসঙ্গে বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে উন্নয়নের স্বার্থে মানুষের জন্য সম্মানের সঙ্গে কাজ করতেই গোলাম রব্বানি তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। দলে ভাঙন দেখা দেওয়ায় কংগ্রেস নেতাদের মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন