দুই কেএলও জঙ্গি গ্রেফতার

পুলিশের জালে ধরা পড়ল কামতাপুরি লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (কেএলও) দুই জঙ্গি। বৃহস্পতিবার ভোর ৪ টা নাগাদ কোচবিহারের বক্সিরহাট থানার বালাকুঠি থেকে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ। জানা গিয়েছে, ওই দুই জঙ্গির একজনের নাম লাল সিংহ ডেকা ওরফে হরেশ্বর বর্মন। তিনি সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। অপরজন হিরণ্য রায় ওরফে অনাথ, সংগঠনের কমান্ডার ইন চিফ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৫ ০১:৪৯
Share:

(বাঁ দিকে) লাল সিংহ বেকা ও হিরণ্য রায়। —নিজস্ব চিত্র।

পুলিশের জালে ধরা পড়ল কামতাপুরি লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (কেএলও) দুই জঙ্গি। বৃহস্পতিবার ভোর ৪ টা নাগাদ কোচবিহারের বক্সিরহাট থানার বালাকুঠি থেকে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ। জানা গিয়েছে, ওই দুই জঙ্গির একজনের নাম লাল সিংহ ডেকা ওরফে হরেশ্বর বর্মন। তিনি সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। অপরজন হিরণ্য রায় ওরফে অনাথ, সংগঠনের কমান্ডার ইন চিফ।

Advertisement

২০১৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর জলপাইগুড়ি বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় অভিযুক্ত ডেকা। তাঁর বিরুদ্ধে বক্সিরহাট থানা এলাকার এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে হুমকি দিয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টার মামলাও রয়েছে। ওই একই মামলায় অভিযুক্ত হিরণ্য। এ ছাড়াও তাঁদের বিরুদ্ধে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন থানায় ১২ টির বেশি মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। মালদহে যাত্রীদের লক্ষ্য করে গুলি চালনার ঘটনাতেও এই দুইজনের যোগ রয়েছে বলে সন্দেহ করছে পুলিশ।

এদিন সাংবাদিক বৈঠক করে কোচবিহারের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব বলেন, “ আমরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছিলাম। তাঁদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ হেফাজতে নিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।” এদিন ধৃতদের তুফানগঞ্জ আদালতে তোলা হয়। কোচবিহার পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “ দু’বছরের বেশি সময় ধরে ওই দু’জন সংগঠনের খুব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন। নানা অপরাধের ছক তাঁরাই করত। পাশপাশি নতুন ছেলেমেয়েদের দলে টানার ব্যাপারেও তাঁদের ভূমিকা ছিল। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও কিছু বিষয় জানা যাবে।”

Advertisement

তদন্তকারী অফিসাররা জানতে পেরেছেন, অসমের কোকরাঝাড়ের গোসাইগাঁওয়ের বাসিন্দা লাল সিংহ ডেকা। কোকরাঝাড়েরই বাসিন্দা হিরণ্য। তাঁদের দুইজনেরই বয়স তিরিশের মধ্যে। জলপাইগুড়ি বোমা বিস্ফোরণ কান্ডের পর থেকে ওই দুইজনের নাম সামনে আসতে থাকে। অসমে থেকেই ওই দু’জন দলের নানা কাজ করছিলেন। ডেকা কেএলওর অস্টম ব্যাচে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। নবম ব্যাচে প্রশিক্ষণ নিয়েছে হিরণ্য। গত কয়েকবছর ধরে দলে ওই দুইজনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। ২০১৩ সালে জলপাইগুড়ির বজরাপাড়ায় বিস্ফোরণ, মালদহে বাস যাত্রীদের লক্ষ্য করে গুলি চালনার ঘটনার পর কেএলও ফের সক্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করেছে বলে সন্দেহ করে পুলিশ। পরপর টম অধিকারী, নীলাম্বর রাজবংশী, মালখান সিংহের মতো নেতারা গ্রেফতার হয়ে যাওয়ার পরে কেএলও অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। তার পরেও সংগঠন গুছিয়ে নেওয়ার কাজ যে তাঁরা চালিয়ে যাচ্ছে তা জানতে পারেন তদন্তকারী অফিসাররা।

ডেকা এবং হিরণ্যর উপর একদিকে সংগঠন বাড়ানোর দায়িত্ব পড়ে। সেই সঙ্গে টাকা জোগাড় করার দায়িত্বও পরে। তদন্তকারী অফিসাররা জানান, টাকা না থাকলে যে কোনও সংগঠন চালানো কঠিন। নতুন ছেলেমেয়েদের দলে টানা, অস্ত্র কেনা সে জন্য টাকা জোগাড়ে ফের অপারেশনে নামে কেএলও জঙ্গিরা। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বক্সিরহাটের এক ব্যবসায়ীর কাছে টাকা চেয়ে হুমকি ফোন করে কেএলও।

ওই ব্যবসায়ী পুলিশকে সব জানান। সেই সূত্রে তদন্ত করেই একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁর কাছ থেকে ডেকা এবং হিরণ্য সম্পর্কে নানা তথ্য পুলিশের হাতে আসে। এর পর থেকেই তাঁদের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরতে থাকে পুলিশ। এদিন পুলিশ আগে থেকেই জানতে পারে ওই দুই জঙ্গি ওই গ্রামে যাচ্ছে। ওৎ পেতে বসে থাকে পুলিশের বিশেষ বাহিনী। গ্রামে ঢুকতেই গ্রেফতার করা হয় তাদের। পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতারের সময় তাঁদের কাছে কোনও অস্ত্র ছিল না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন