দুই কর্মিসভা ঘিরেই উন্মাদনা দিনভর

রাহুল গাঁধী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুই জায়গায় দুই দলের কর্মিসভা ঘিরে মঙ্গলবার উদ্দীপনা দেখা দিল কংগ্রেস ও তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে। মুখে রঙ মেখে দলের প্রতীক আঁকা, জামার বদলে দলের পতাকা গায়ে জড়িয়ে আসা অত্যুৎসাহী কর্মী সমর্থকের দেখা গিয়েছে দুই সভাতেই। উৎসাহ ছিল সাধারণ বাসিন্দাদের মধ্যেও। সকাল দশটা থেকেই ডুয়ার্সের মেটেলি উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠের চারদিকে অজস্র মানুষের ভিড়। জুরান্তির সভায় যাওয়ার জন্যে হেলিকপ্টারে এই মাঠেই নামবেন রাহুল গাঁধী।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৪ ০১:০৫
Share:

জুরান্তিতে রাহুল গাঁধীর কর্মিসভায় জনতার উচ্ছ্বাস। মঙ্গলবার ছবি তুলেছেন দীপঙ্কর ঘটক।

রাহুল গাঁধী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুই জায়গায় দুই দলের কর্মিসভা ঘিরে মঙ্গলবার উদ্দীপনা দেখা দিল কংগ্রেস ও তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে। মুখে রঙ মেখে দলের প্রতীক আঁকা, জামার বদলে দলের পতাকা গায়ে জড়িয়ে আসা অত্যুৎসাহী কর্মী সমর্থকের দেখা গিয়েছে দুই সভাতেই। উৎসাহ ছিল সাধারণ বাসিন্দাদের মধ্যেও।

Advertisement

সকাল দশটা থেকেই ডুয়ার্সের মেটেলি উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠের চারদিকে অজস্র মানুষের ভিড়। জুরান্তির সভায় যাওয়ার জন্যে হেলিকপ্টারে এই মাঠেই নামবেন রাহুল গাঁধী। মাঠের ভিতরেই মেটেলি বালিকা বিদ্যালয়স্কুলের দিদিমণিরাও জানেন আজ স্কুলের অন্যরকম দিন। তাই সকাল সকাল নিজেদের ছোট ছেলে মেয়েদেরও সঙ্গে নিয়ে হেলিকপ্টারে করে আসা রাহুলকে দেখাতে নিয়ে এসেছিলেন। রাহুলের হেলকপ্টার যখন মাটি ছুল, তখন স্কুলের শিক্ষিকা পৌলমী বসু নিজের ২ বছরের ছেলে বিতানকে দেখিয়ে বললেন, “দেখ বাবা এই লোকটাই রাহুল গাঁধী।”

নকশালবাড়ির কর্মিসভায় মুখে দলীয় প্রতীক এঁকে এসেছেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা।

Advertisement

জুরান্তির কর্মিসভার মাঠেও একই চিত্র। সভায় যখন গাড়ি থেকে নামলেন রাহুল, জুরান্তির বাসিন্দা বৃদ্ধ বলবাহাদুর রাই বললেন, “আমাদের আমলের নেত্রী ইন্দিরা গাঁধীর নাতিকে এতকাছ থেকে দেখতে পাব তা ভাবিনি।” জুরান্তীর ১৫০০ শ্রমিকের উৎসাহের পারদ এতটাই ওপরে ছিল যে রবিবারে কাজ করার শর্তেও তাঁরা মঙ্গলবারে বাগান ছুটি করিয়ে রাহুলকে দেখতে আসেন। জুরান্তি বাগানের ম্যানেজার তাপস দাসের কথায়, “বাগানের ইতিহাসে এতবড় মাপের নেতা এই প্রথম আসলেন। তাই সকলেরই উৎসাহ ক্লান্তিহীন।”

রাহুল যখন মঞ্চে উঠলেন তখন জনতার হাততালিই হোক বা যখন রাহুল স্বভাবসিদ্ধ ঢঙে ব্যারিকেড টপকে জনতার মধ্যে থেকে ৫ বছরের মেয়ে স্নেহাকে কোলে তুলে নিলেন সবের মধ্যেই রাহুল ম্যাজিক পেয়েছেন উৎসাহী জনতা। ১২টার পর রাহুল যখন ফেরত যাচ্ছেন, তখনও জুরান্তির প্রতিবেশী চা বাগান চিলৌনির শ্রমিকদের পাহাড়ের ঢাল থেকে দেখতে দেখা গিয়েছে। নাগেশ্বরী চা বাগান বা মেটেলি বাজারের চিত্রটিও দুপুরে বদলায়নি। বেলা ১২টা ৪০ নাগাদ রাহুলের কপ্টার যখন উড়ে গেল তখনও নিচ থেকে অগুনতি হাত আকাশের দিকে।

মেটেলির জুরান্তিতে রাহুল গাঁধী। মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

রাহুলকে দেখার জন্য মহিলা চা শ্রমিকরা এ দিন সকাল থেকে রাস্তার দু’পাশে ভিড় করে অপেক্ষায় থাকেন। বাস, ছোট গাড়ি ভাড়া করে বানারহাটের রেডব্যাঙ্ক, সামসিং, ইন্দং, নাগরাকাটা থেকে কংগ্রেস কর্মী সমর্থকরা সভাস্থলে ভিড় করতে শুরু করেন। কংগ্রেসের সভাতে প্রদেশ ও জেলাস্তরের নেতাদের ভিড় ছিল। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী, দেবপ্রসাদ রায়, বিশ্বরঞ্জন সরকার ছাড়াও কংগ্রেস প্রার্থী সুজয় ঘটক, সুখবিলাস বর্মা, যোশেফ মুন্ডা এবং কেশবচন্দ্র রায়ও ছিলেন।

অন্য দিকে , বিকেলে নকশালবাড়ি, সন্ধ্যায় সাহুডাঙিতে দার্জিলিং এবং জলপাইগুড়ি লোকসভার তৃণমূল প্রার্থীদের সমর্থনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কর্মিসভা করেছেন। পরপর ওই দুই কর্মিসভা ঘিরে যথেষ্ট উৎসাহিত হয়ে ওঠে তৃণমূল শিবির। নকশালবাড়ির সভায় গালে তৃণমূলের দলীয় পতাকার ছবি আকা দুই তরুণীকে দেখা যায়। ওই তরুণীদের কথায়, “রাজ্যে দিদি উন্নয়নের কাজ শুরু করেছেন। কন্যাশ্রী প্রকল্পও শুরু হয়েছে। তাই সভায় এসেছি।”

নকশালবাড়ি ও সাহুডাঙ্গি, মুখ্যমন্ত্রীর দুই সভাতেই অবশ্য মাইক-বিভ্রাট কিছুটা তাল কাটে। নকশালবাড়ির সভায় পোডিয়ামের মাইকের সামনে একটি সংস্থার নাম উঁচু বোর্ডে লাগানো ছিল। ওই বোর্ডের কারণে সামনে থাকা কর্মী সমর্থকদের তাঁকে দেখতে সমস্যা হবে বলে জানিয়ে বোর্ডটি সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন বোর্ড লাগানো হল তা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এরপরে সাহুডাঙ্গির সভাতেও উঁচু করে মাউথপিস লাগানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপরে তিনি নিজেই মঞ্চের আরেক কোনা থেকে একটি মাইক টেনে মঞ্চের মাঝখানে নিয়ে আসেন।

এরপরে স্বাভাবিক ছন্দেই বক্তব্য রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কয়েকটি বাংলা গানের কলি ও হিন্দি শায়েরিও বলেন। তিনি পুজো মণ্ডপে কী ভাবে চণ্ডীপাঠ করেন, রোজার সময়ে দোয়া করেন তাও শোনান। এমনকী গুরুদ্বারের প্রার্থনায় কীভাবে জয়ধ্বনি দেয় তাও শোনান তিনি। সাহুডাঙ্গির সভায় উপচে পড়া ভিড় দেখে তৃণমূল নেত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

দুই সভাতেই ছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব। সভাগুলিতে কৃষ্ণ পাল, সৌরভ চক্রবর্তী, চন্দন ভৌমিক, সৈকত চট্টোপাধ্যায়, রঞ্জন সরকার, জয়ন্ত মৌলিকেরাও ছিলেন। নকশালবাড়ি সভায় প্রার্থী ভাইচুং ভুটিয়া ও সাহুডাঙির সভায় বিজয়কৃষ্ণ বর্মনও ছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন