দুই বন্ধুর মৃত্যু, দীপাবলির আনন্দ ফিকে

দীপাবলির রেশ কাটতে না কাটতেই বিষাদ নামল কোচবিহারের পালপাড়ায়। কালীপুজোর পরদিন সকালে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল দুই বন্ধুর। শুক্রবার ভোর পাঁচটা নাগাদ কোতোয়ালি থানার পালপাড়া এলাকায় এই দুর্ঘটনায় মারা যান রতন বর্মন (৩২) ও গৌতম বর্মন (২৫)।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৪ ০১:৫৪
Share:

দীপাবলির রেশ কাটতে না কাটতেই বিষাদ নামল কোচবিহারের পালপাড়ায়। কালীপুজোর পরদিন সকালে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল দুই বন্ধুর।

Advertisement

শুক্রবার ভোর পাঁচটা নাগাদ কোতোয়ালি থানার পালপাড়া এলাকায় এই দুর্ঘটনায় মারা যান রতন বর্মন (৩২) ও গৌতম বর্মন (২৫)। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ পুজো শেষ হলে ভাত খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন রতনবাবু। সকালে গৌতম পারিবারিক প্রয়োজনে মামাবাড়ি যাবে বলে রতনকে ডেকে নেন। দু’জনে একটি মোটরবাইকে চেপে পাকা সড়ক পেরিয়ে পালপাড়ার আরেক প্রান্তে তাঁর মামাবাড়ি যাচ্ছিলেন। সেই সময় মাথাভাঙা থেকে কোচবিহারের দিকে যাওয়া একটি ট্রাক সামনে থেকে তাঁদের ধাক্কা মারে। দু’জন ছিটকে পড়েন দু’দিকে। মাথা ফেটে ঘটনাস্থলেই তাঁদের মৃত্যু হয়।

সবিস্তার জানতে ক্লিক করুন।

Advertisement

পালপাড়া সংলগ্ন জুটুমের তেপতী এলাকাতেই তাঁদের বাড়ি। বৃহস্পতিবার মাঝরাত পর্যন্ত যে দু’জন পাড়ার পুজো সামলেছেন, ভোরের আলো না ফুটতেই সেই দুই বন্ধুর মৃত্যু সংবাদে গোটা গ্রাম কার্যত দুঃখে স্তব্ধ। গ্রামের বাসিন্দারা জানান, গ্রামের পুজোতে সব থেকে বেশি আগ্রহ ছিল রতনবাবুর। আগ বাড়িয়ে তিনিই সব দায়িত্ব নেন। এ দিনও তাই হয়েছিল। সকাল থেকে উপোস ছিল রতনের। তাঁর সঙ্গে গৌতম-সহ অন্য প্রতিবেশী বন্ধুরাও পুজোর আয়োজনে একসঙ্গে কাজ করেছিলেন। সকাল থেকে গ্রামের বাসিন্দারা ভিড় করেন তাঁদের বাড়িতে। কারও মুখেই কোনও ভাষা ছিল না। শুধু ভেসে আসছিল কান্নার শব্দ। রতনের বন্ধু মন্টু দাস বলেন, “কথা ছিল শুক্রবার সন্ধ্যায় মায়ের পুজোর খিচুড়ি প্রসাদ বিলি করা হবে গোটা গ্রামে। তা আর হল না। এভাবে যে ওরা চলে যাবে ভাবতে পারিনি। কয়েক ঘণ্টা আগে একসঙ্গে আনন্দ করছিলাম। আজ ভাবতেই পারছি না রতন, গৌতম আর ফিরবে না।”

রতনের ছোট ছোট দুই ছেলেমেয়ে রয়েছে। ঘটনা শোনার পর থেকে তাঁর স্ত্রী কনিকা বর্মন ঘন ঘন মূর্চ্ছা যাচ্ছেন। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, “এখন কীভাবে বেঁচে থাকব আমি?” রতনের মা সোমারি বর্মন বলেন, “গোটা পাড়ায় সব মানুষের সঙ্গে সখ্যতা ছিল রতনের। সবার বিপদ-আপদে ডাকলেই চলে যেত। সেটাই কাল হল।” গৌতমের মা সোনেকা বর্মনের কান্না থামছিল না। বারবার বলছিলেন, “আমার ছেলেটা এ ভাবে কেন চলে গেল?”

বাসিন্দারা জানিয়েছেন, দিনমজুরির কাজ করা রতন কারও বাড়িতে কোনও বিপদ হলে সবার আগে হাজির হতেন। গ্রামের কালীপুজো ও শনিপুজোতেও সবার আগে থাকতেন তিনি। গ্রামের বাসিন্দা প্রদীপ বর্মন বলেন, “আমার বাড়িতে কোনও অনুষ্ঠান হলে রান্নার দায়িত্ব সামলাত রতন। ৫০ জনের খাবার ও হামেশাই তৈরি করে দিত।” গ্রামের দুই যুবক একদিনে এ ভাবে মারা যাওয়ায় শোকে বিহ্বল বাসিন্দারা। তাঁরা বলেন, “আজ দীপাবলির আলো জ্বলবে না। প্রসাদ বিতরণও হবে না। আনন্দ আর আমাদের ভাল লাগছে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন