পুলিশকে হুমকি তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি নির্ণয় রায়ের। শুক্রবার বাগডোগরায় বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
কলেজে ছাত্র সংসদের নির্বাচন নিয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের আক্রমণের শিকার হল পুলিশ।
শুক্রবার কালীপদ ঘোষ তরাই মহাবিদ্যালয় তথা বাগডোগরা কলেজে মনোনয়নপত্র জমা করার ক্ষেত্রে পড়ুয়াদের যাতে সমস্যা না-হয় সে ব্যাপারে পুলিশ সক্রিয় হতেই তাদের উপর আক্রমণের অভিযোগ উঠেছে টিএমসিপি’র বিরুদ্ধে। এ দিনও ওই কলেজে টিএমসিপি’র লোকজন বহিরাগতদের সামিল করে বিরোধী ছাত্র সংগঠনের প্রার্থীদের কলেজে ঢুকতে বাধা, তাদের মনোনয়নপত্র কেড়ে নিতে গিয়েছিল বলে অভিযোগ। এমনকী বিরোধী সংগঠনের ছাত্রীদের উপর হামলা করে মনোনয়ন কেড়ে নিচ্ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ তাতে বাধা দেয়। তা নিয়ে গোলমালে পুলিশের উপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করে টিএমসিপি’র সদস্য সমর্থকরা। শিলিগুড়ি পুলিশের এসিপি মানবেন্দ্র দাসকে ঘুষি মারার চেষ্টাও হয়। দফায় দফায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে তা সামাল দিতে এসিপি মানবেন্দ্র দাস এবং অন্যান্য পুলিশ কর্মীদের বারবার বাধ্য হয়ে লাঠি চালাতে হয়েছে। তৃণমূলের কয়েকজন নেতা এর পর মানবেন্দ্রবাবুকে হুমকি দেন ‘কী করে কাজ করেন তা দেখে নেব।’ ‘আমরা রাজ্যে শাসক দল। আমাদের আপনি মারছেন? পরে সামলাতে পারবেন তো।’ ‘আপনার সাহস হল কী করে?’ এ সব বলে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে সঞ্জয় পালের মতো টিএমসিপি’র যুব নেতা, জেলা সভাপতি নির্ণয় রায়ের মতো নেতাদের বিরুদ্ধে।
পুলিশ বিরোধী এবিভিপি এবং ছাত্র পরিষদের লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর উপর হামলা চালিয়েছে, লাঠিপেটা করে প্রাণে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে বলে টিএমসিপি’র জেলা সভাপতি নির্ণয় রায় এ দিন বিকেলে বাগডোগরা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। মানবেন্দ্রবাবু ওই ঘটনা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। মানবেন্দ্রবাবু এবং পুলিশের একাংশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে আজ, শনিবার জেলা জুড়ে কালা দিবস পালনের ডাক দিয়েছে টিএমসিপি। টিএসিপি’র জেলা সভাপতি বলেন, “বিরোধী এবিভিপি, ছাত্র পরিষদের লোকজনদের নিয়ে মানবেন্দ্রবাবু উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে আমাদের উপর হামলা চালিয়েছেন।” পুলিশের তরফেও এ দিনের গোলমালের ঘটনা নিয়ে অভিযোগ জানানো হয়েছে। তৃণমূলের যুবনেতা সঞ্জয়বাবু বলেন, “পুলিশকে কোনও হুমকি দেওয়া হয়নি।”
এবিভিপি’র নেতা ত্রিদিব সাহার দাবি, “প্রার্থীরা ছাড়া আমাদের কেউ এ দিন কলেজ লাগোয়া এলাকায় ছিলাম না। তৃণমূলের লোকজনরাই জড়ো হয়ে বিরোধীদের মনোনয়ন কেড়ে নিচ্ছিল।” ছাত্র পরিষদেরর কলেজ ইউনিটের নেতা ইমরান খানের অভিযোগ, “‘টিএমসিপি কী ভাবে মনোনয়ন জমা করতে যেতে বাধা দিচ্ছিল সকলেই দেখেছেন। পুলিশ প্রার্থীদের সাহায্য করাতে তাদেরও হেনস্থা করতে চেয়েছে তৃণমূল। ”
বৃহস্পতিবার মনোনয়ন জমা করার প্রথম দিন পুলিশের সামনেই টিএমসিপি’র সঙ্গে এবিভিপি এবং ছাত্র পরিষদের সংঘর্ষ বেধেছিল। জখম হন উভয়পক্ষের অন্তত ১০ জন। শুক্রবারই ছিল মনোনয়ন জমা করার শেষ দিন। নিরাপত্তা বাড়াতে এ দিন ১০০ মিটারের পরিবর্তে কলেজ লাগোয়া ২০০ মিটারের মধ্যে একশো চুয়াল্লিশ ধারা জারি করা হয়।
তার পরেও বেলা ১২ টা নাগাদ অ্যাম্বুল্যান্সে করে এবিভিপি’র জখম ৩ জন ছাত্র মনোনয়ন জমা করতে গেলে টিএমসিপি’র লোকজন মনোনয়ন পত্র কেড়ে নিতে তাঁদের তাড়া করে বলে অভিযোগ। এবিভিপি’র সদস্য সমর্থকদের একাংশ তা নিয়ে পুলিশ কমিশনারেটে গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এক সঙ্গে দল বেঁধে না গিয়ে সময় সুযোগ বুঝে এর পর ফাঁকে ফাঁকে কয়েকজন করে মনোনয়ন জমা করতে শুরু করেন বিরোধী ছাত্র সংগঠনের প্রার্থীরা। দুই জন এসিপি, ট্রাফিক পুলিশের ডিএসপি শ্যাম সিংহের নেতৃত্বে পুলিশ কর্মীরা ওই প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা করতে কলেজে যেতে সাহায্য করছিলেন। টিএমসিপি’র লোকজন দফায় দফায় বিরোধী সংগঠনের প্রার্থীদের উপর চড়াও হয়ে কয়েকজন ছাত্রছাত্রীর মনোনয়ন কেড়ে ছিঁড়েও দেয় বলে অভিযোগ। এসএফআই-এর এক ছাত্রী সুস্মিতা সরকারের মনোনয়নও টিএমসিপি’র লোকজন কেড়ে নিয়ে ছিঁড়ে দেয় বলে অভিযোগ। পুলিশ বারবার তাদের বাধা দেয়। লাঠি চালিয়ে কখনও দূরে সরিয়ে দেয়। টিএমসিপি’র জেলাসভাপতি মানবেন্দ্রবাবুকে বলেন, “আমাদের উপর লাঠি চালানোর সাহস আপনার হচ্ছে কী ভাবে?” তাদের হঠাতে পুলিশকে লাঠি চালাতে হয়। তাতে নির্ণয়-সহ কয়েকজন টিএমসিপি’র সদস্য জখম হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের গাড়ি করেই নির্ণয় রায়কে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিনই ছিল মনোনয়ন জমা করার শেষ দেন। দুই দিনে সব মিলিয়ে ১৬৪ টি মনোনয়ন জমা হয়েছে। ৫০টি আসনের সব কটিতে মনোনয়ন জমা করেছে বলে দাবি টিএমসিপি’র। এবিভিপি ২১টি আসনে এবং ছাত্র পরিষদ অন্তত ৪০ টি আসনে মনোনয়ন জমা করেছে বলে দাবি করেছে। এসএফআই দুই দিনে ৪৩ টি মনোনয়ন জমা করেছে বলে জানিয়েছে।