দীর্ঘ দিন সংস্কার না হওয়ায় জেলার প্রাচীন আমলের ঐতিহ্যবাহী দিঘিগুলি মজে গিয়েছে। দক্ষিণ দিনাজপুরের তপনে তপনদিঘি, গঙ্গারামপুরে কালদিঘি ও ধলদিঘি, বংশীহারীতে মালিয়ানদিঘি, আলতাদিঘি, জোড়দিঘি ও ধুমসাদিঘি, হরিরামপুরে বামনাদিঘির মতো দশটি দিঘি বেহাল জেলা প্রশাসনের তরফে দাবি করা হয়, দিঘিগুলিতে মাছ চাষ ও পর্যটন সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে রাজ্যকে প্রস্তাব পাঠানো হয়। রাজ্যের সাড়া না মেলায় কাজ এগোয়নি।
প্রশাসনের নথি মতো আত্রেয়ী, পুনর্ভবা, টাঙন, যমুনা, ব্রাহ্মণী আর ইছামতীর মতো নদী রয়েছে জেলায়। রয়েছে চল্লিশ হাজার পুকুর। তাও ফি বছর গরমে শুকিয়ে কাঠ জলাগুলি। বাম আমলে জেলা থেকে পাঠানো সংস্কারের প্রস্তাব ফাইলবন্দি হয়ে চাপা পড়ে আছে কেন তা নিয়ে ক্ষোভ দানা বাঁধছে জেলার নানা এলাকায়। তপন পঞ্চায়েতের প্রাক্তন সভাপতি আনিসুর রহমান বলেন, “তপন দিঘিটি সংস্কার করে এখানে পর্যটন কেন্দ্র, পক্ষিনিবাস ও মাছ চাষের প্রস্তাব জেলা পরিষদ এবং জেলা প্রশাসনের কাছে আগেই পাঠানো হয়েছিল।” তৃণমূল পরিচালিত জেলা পরিষদ সভাধিপতি ললিতা টিগ্গা বলেন, “অর্থাভাবে তপন দিঘি সহ অন্য দিঘি সংস্কারে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। ১০০ দিনের প্রকল্পে দিঘি সংস্কারের কথা ভাবা হয়েছে।”
একাধিক দিঘি ও বাণগড়ের মতো ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত এলাকা ঘিরে ৮৫ কোটি টাকার খসড়া প্রকল্প গত বছর রাজ্যের পর্যটন দফতরে পাঠানো হয়েছিল। ১০০ দিন প্রকল্পে কুশমন্ডির মহিপালদিঘি সংস্কার করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। হিলি ব্লকে প্রায় মজে যাওয়া শ্রীনদী ও ভালুকা বিল খনন এবং কুমারগঞ্জের জামিরবাড়িতে নতুন করে চারটি জলাশয় ও তপনের কাশিয়া খাড়ি খননে উদ্যোগী হয়। ওই প্রকল্পগুলিতে খরচ ধরা হয়েছে ছয় কোটি টাকা। জেলা প্রশাসনের হিসেব অনুযায়ী, মুখ্যমন্ত্রীর ‘জল ধরো, জল ভরো’ কর্মসূচিতে গত আর্থিক বছরে দক্ষিণ দিনাজপুরে ১০০ দিনের মাটি কাটা প্রকল্পে ২৬০৯টি পুকুর ও জলা খননের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়। তার মধ্যে ১৪৬১টি পুকুর ও জলাশয় খনন হয়েছে। খরচ হয়েছে ১৫ কোটি ৫৪ লক্ষ ৩৪ হাজার টাকা। এই অর্থবর্ষে ‘জল ধরো, জল ভরো’ কর্মসূচিতে এ যাবৎ তেমন কাজ হয়নি।
বাসিন্দারা জানান, তপন দিঘির অধিকাংশ এলাকা কচুরিপানায় ঢেকেছে। কালদিঘির একাংশ পাঁকে মজেছে। জেলা পরিষদে তৃণমূল নেতা শুভাশিস পাল বলেন, “দিঘিগুলি জেলা পরিষদ থেকে সংস্কার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বালুরঘাটের পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের তরফে দিঘি সংস্কার করে পর্যটনক্ষেত্র গড়ার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল পর্যটন মন্ত্রীর কাছে। তবে সাড়া মেলেনি।”