মানিকচকের বসন্তটোলা গ্রামে ধর্ষণের ঘটনায় মূল অভিযুক্তকে দু’দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিল আদালত। নবীন মণ্ডল নামে ওই যুবককে বিহার থেকে গ্রেফতার করে এনেছে পুলিশ। মঙ্গলবার তাঁকে আদালতে তোলা হয়। ভারপ্রাপ্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট অভিযুক্তের জামিন না-মঞ্জুর করেছেন। সরকারি আইনজীবী দীপেন চৌধুরী বলেন, “বিচারক অভিযুক্তকে দু’দিন পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছেন। ১০ এপ্রিল পুনরায় অভিযুক্তকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন। এই নিয়ে পুলিশ তিন জনকে ধরল।”
অভিযোগ, গত সপ্তাহের সোমবার মনিকচকের বসন্তটোলা গ্রামে প্রতিবেশী ওই অভিযুক্ত বাড়িতে ঢুকে এক গৃহবধূকে ধর্ষণ করে। গৃহবধূর চিৎকারে গ্রামবাসীরা ছুটে এসে অভিযুক্ত নবীনকে ধরে ফেলেন। মহিলা ও তাঁর স্বামী থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে গ্রামের মাতব্বররা তাঁদের বাধা দেন। পরের দিন মাতব্বররা সালিশি সভা ডাকেন। সালিশি সভায় গ্রামের মাতব্বররা অভিযুক্তকে ২০ বার কান ধারে ওঠবস করিয়ে ধর্ষিতার পা ধরে ক্ষমা চাইয়ে ছেড়ে দেয়। ওই বিধান কিন্তু মানতে চাননি ওই বধূ ও তাঁর স্বামী। তাঁরা থানায় অভিযোগ জানাতে অনড় থাকলে মাতব্বররা সালিসি সভায় ওই মহিলাকে ‘কুলটা’ বলে মন্তব্য করেন বলেও অভিযোগ। এরপরই ওই সপ্তাহের বুধবার সকালে গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে ওই মহিলা আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। বৃহস্পতিবার মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।
তার পরে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে জনস্বার্থে মামলা দায়ের করার পরই জেলা পুলিশ নড়েচড়ে বসে। পুলিশ অভিযুক্তের মা ও কাকাকে গ্রেফতার করে। হাইকোর্টের নির্দেশে ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ, জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার পৃথক পৃথক ভাবে হাইকোর্টে রিপোর্ট পাঠিয়েছে। বিহারের পূর্ণিয়া থেকে রবিবার বিকেলে মূল অভিযুক্ত নবীন মন্ডলকে গ্রেফতার করে সোমবার জেলায় আনা হয়।
পুলিশ মূল অভিযুক্ত-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করলেও সালিশি সভায় যে সমস্ত মাতব্বরা ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্তকে ২০ বার কান ধরে ওঠবস করান, তাঁদের এক জনকেও পুলিশ এখনও ধরতে পারেনি বলে বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন। পুলিশের বক্তব্য, অভিযুক্তরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। সব রাজনৈতিক দলই এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের তোলেন।