ফালাকাটার স্কুল ছাত্রী নিকিতা হত্যা কান্ডে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হল আলিপুরদুয়ার আদালতে। শুক্রবার বেলা পৌনে বারোটা নাগাদ শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ। চলে প্রায় সোয়া ১টা পর্যন্ত। এদিন অতিরিক্ত জেলা দায়রা আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণের সময় উপস্থিত করা হয় মূল অভিযুক্ত তাপস দাস, বিজিত দত্ত ও গোপাল আচর্যকে। এদিন অতিরিক্ত জেলা দায়রা আদালতের বিচারক সোমেশ পালের এজলাসে ফালাকাটার ব্যাঙ্ক রোডের বাসিন্দা বৃদ্ধা সন্ধ্যা দাসের সাক্ষ্য নেওয়া হয়।
সরকারী আইনজীবী জহর মজুমদার বলেন, “গত বছর ২৭ জুলাই দিনের বেলায় ফালাকাটার ব্যাঙ্ক রোডে স্কুল ছাত্রী নিকিতাকে গুলি করে হত্যা করে এলাকার বাসিন্দা তাপস দাস ওরফে খুলু।” ঘটনার আগের মুহূর্তে সন্ধ্যাদেবী তাঁর বাড়ির জানলা দিয়ে দেখেছিলেন খুলু নিকিতাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। তারপরে বাড়ির বারান্দায় এসে সন্ধ্যাদেবী দেখেন, খুলু এক মোটরবাইক আরোহীকে বলে ‘গাড়িটা রেডি রাখ। আমি আসছি।’ সরকারি আইনজীবী জানান, ওই মোটরবাইক আরোহী ছিলেন গোপাল আচার্য। কিছুক্ষণ পরে পাড়ার লোকজনের চিকার চেঁচামেচি শুনতে পান ওই বৃদ্ধা। পরে তিনি জানতে পারেন ওই স্কুল ছাত্রত্রীকে খুন করা হয়েছে। এর আগে আদালতে সন্ধ্যা দেবী তার গোপন জবানবন্দী দিয়েছিলেন। আজ সাক্ষ্য গ্রহণের সময় সেই জবানবন্দী বন্ধ খাম থেকে খোলা হয়। তা নিয়ে দু’পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে সওয়াল জবাব শুরু হয়।
এদিন বেলা পৌনে বারোটা নাগাদ সন্ধ্যা দেবী সাক্ষীর কাঠগোড়ায় দাঁড়ান। বিচারক সোমেশবাবু ওই বৃদ্ধাকে কাঠগোড়ায় বসবার চেয়ার দেওয়ার নির্দেশ দেন। তারপর তাঁর পরিচয় জানতে চান। পরিচয় পর্ব শেষ হওয়ার পরেই খোলা হয় জবানবন্দির খাম। সরকারী আইনজীবী জহরবাবু বৃদ্ধাকে জিজ্ঞাসা করেন, তাঁর বাড়ি কোথায়? খুলুকে তিনি কী ভাবে চেনেন?
সাক্ষী জানান, ফালাকাটার ব্যাঙ্ক রোডে তাঁর বাড়ি। খুলু তাঁর পাড়তেই থাকেন ছোট বেলা থেকে। সরকারী আইনজীবী খুলুকে দেখাতে বললে আদালতের ভিতর লক আপে থাকা খয়েরি রঙের জামা ও কালো প্যান্ট পরা খুলুকে চিনিয়ে দেন তিনি। পাশে থাকা গোপাল আচার্যকেও চেনায় সাক্ষী। সওয়াল জবাবের পুরোটাই বিচারক সোমেশবাবু বলতে থাকেন এবং তা পাশে বসে থাকা এক কর্মী কম্পিউটারের টাইপ করতে থাকেন।
খুনে মুল অভিযুক্ত তাপস দাস ওরফে খুলুর আইনজীবী সমীর সরকার সাওয়াল করতে উঠে ফের ওই বৃদ্ধার কাছে তার বাড়ির বিবরণ নেন। তিনি বাড়িতে কার সঙ্গে থাকেন তা জানতে চান আইনজীবী। সাক্ষী উত্তর জানান, তিনি ছেলে বৌ ও নাতনির সঙ্গে থাকেন। তাদের বাড়িতে ভাড়াটিয়াও থাকেন। সমীরবাবু দাবি করেন, বৃদ্ধা যা বলছেন তার সবই শেখানো কথা। বৃদ্ধা অবশ্য আজালতে তা অস্বীকার করেন। পরে সাওয়াল করতে আসেন অপর অভিযুক্ত গোপাল আচার্যের আইনজীবী সু্হৃদ মজুমদার। তিনি সাক্ষীর স্বাস্থ্য নিয়ে প্রশ্ন করেন। চোখে কেমন দেখেন, কানে কম শুনতে পান কি না, এসব জানতে চান। ৮৩ বছর বয়স্ক সাক্ষী জানান, তাঁর চোখে কাছে ও দূরের জিনিস দেখার সমস্যা রয়েছে। সে জন্য চশমা পড়েন। কানেও একটু কম শোনেন। ফের সুহৃদবাবু জানতে চান, বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দী দেওয়ার পরে কি তিনি গোপাল আচার্যর নাম শুনেছেন? বৃদ্ধা তা স্বীকার করেন। পরে আইনজীবী বৃদ্ধাকে চশমা খুলতে বলেন। বিচারকের পিছনে থাকা একটি ছবি দেখিয়ে ছবিটি কার তা জানতে চান। সাক্ষী চশমা খুলে ছবিটি দেখে বলেন সেটি গাধীঁজির ছবি। এর পরে অপর অভিযুক্ত বিজিত দত্তের আইনজীবী তুষার চক্রবর্তী প্রশ্ন করেন, বৃদ্ধার বাড়ির সামনে রাস্তায় তো লোকজন চলাচল করে। বৃদ্ধা জবাব দেন, হ্যা।ঁ
নিকিতার বাবা কানু দত্তের এদিন সাক্ষ্য দিতে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তিনি হাজির ছিলেন না। ফোনে কানুবাবু জানান, তার শরীর খারাপ থাকায় তিনি আদালতে আসতে পারেননি। শনিবার ফের মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ রয়েছে।