নাগরিক কনভেনশনে মন্ত্রীর কাছে নালিশ বাসিন্দাদের

শহরের কেন্দ্রে বিভিন্ন রাস্তা ম্যাস্টিক করা হয়েছে। পুরনো আলো বদলে ‘এলইডি’ আলো লাগানো হচ্ছে। সাফাই পরিষেবার জন্য অত্যাধুনিক গাড়ি আনা হয়েছে। অথচ শিলিগুড়ি পুরসভার ৪৫, ৪৬, ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডে অনেক রাস্তায় আজ পর্যন্ত পিচের ছোঁয়া পড়েনি, কোথাও পানীয় জলের সমস্যা, নিকাশির সমস্যায় বাসিন্দারা বছরের পর বছর ধরে জেরবার। আবার কোথাও আবর্জনা জমে বাসিন্দাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৫ ০১:৪৪
Share:

সভায় বক্তব্য রাখছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। —নিজস্ব চিত্র।

শহরের কেন্দ্রে বিভিন্ন রাস্তা ম্যাস্টিক করা হয়েছে। পুরনো আলো বদলে ‘এলইডি’ আলো লাগানো হচ্ছে। সাফাই পরিষেবার জন্য অত্যাধুনিক গাড়ি আনা হয়েছে। অথচ শিলিগুড়ি পুরসভার ৪৫, ৪৬, ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডে অনেক রাস্তায় আজ পর্যন্ত পিচের ছোঁয়া পড়েনি, কোথাও পানীয় জলের সমস্যা, নিকাশির সমস্যায় বাসিন্দারা বছরের পর বছর ধরে জেরবার। আবার কোথাও আবর্জনা জমে বাসিন্দাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে মন্ত্রীর দফতরেও তাঁরা আবেদন নিবেদন করেছেন। কিন্তু কাজ হয়নি। রবিবার শিলিগুড়ির মার্গারেট স্কুলের হল ঘরে নাগরিক কনভেনশনে মন্ত্রীকে সামনে পেয়ে বাসিন্দারা তাঁদের ওই সমস্ত নানা সমস্যার কথা তুলে ধরলেন।

Advertisement

নাগরিক কনভেনশনের আয়োজন করেন শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এসজেডিএ’র চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব সেখানে পুর এলাকায় পুরসভা, এসজেডিএ এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের ফদ্যোগে করা কাজের খতিয়ান তুলে ধরার পাশাপাশি বাসিন্দাদের সঙ্গে মুখোমুখি প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন। সে সময় বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন মোহিত কুমার সাহা, পরেশচন্দ্র সরকার, উত্তম পাল, জয়দীশ মোহন্ত, সীমা সরকার, গোপা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো বাসিন্দারা।

গোপা দেবী, উমেশচন্দ্র ভৌমিকদের অভিযোগ, প্রধাননগরের রামকৃষ্ণপল্লি এলাকায় ৮ ফুট রাস্তার অর্ধেকটাই নোংরা আবর্জনা জমে আটকে থাকে। ২ নম্বর ওয়ার্ডে অভেন্দানন্দ আশ্রমের পিছনে আবর্জনার স্তূপ জমে থাকে। নিকাশি ব্যবস্থা না থাকায় অল্প বৃষ্টিতেই জল জমে যায়। ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডে পোকাইজোতের মোহিতবাবুর অভিযোগ, এলাকায় একটি কাঠের সেতু চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সেতু সংস্কারের জন্য বারবার আবেদন নিবেদন করেছেন তাঁরা। কিন্তু কাজ হয়নি। এলাকার ২ হাজার বাসিন্দাকে তাই বিপাকে পড়তে হচ্ছে। জবাবে মন্ত্রী তাঁদের বলেন, “সমস্যারগুলি নথিভুক্ত করা হচ্ছে। এখনই পরিকল্পনা করে চটজলদি সেতুর কাজ করা সম্ভব নয়। তবে ২০১৫-২০১৬ অর্থবর্ষে ওই সেতু তৈরি চেষ্টা করবেন। গোপাদেবীর এলাকায় সাফাই পরিষেবার যাতে যথাযথ হয় তা দেখার আশ্বাস দেন তিনি।

Advertisement

ঢাকনিকাটা এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, সেখানে ইন্দিরাকলোনি বস্তিতে আলো নেই, রাস্তা নেই, খাবার জল নেই। বাসিন্দারা সমস্যা সমাধানের দাবিতে একাধিকবার বিভিন্ন দফতরে স্মারকলিপি দিয়েছেন। চম্পাসারি গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসের কাছে নিকাশি নালার জায়গা দখল হয়ে গিয়েছে বলে সমস্যার কথা জানান বাসিন্দারা। বাঘাযতীন কলোনির উত্তম পাল জানান, এলাকার কয়েকটি রাস্তায় এখনও পিচের ছোঁয়া পড়েনি। অনুগ্রহ করে একটু দেখবেন। মন্ত্রী অবশ্য তাদের সকলকেই আশ্বস্ত করেছেন। সব মিলিয়ে দেড় ঘন্টার প্রশ্নোত্তর পর্বে ৪৫,৪৬, ৪৭, ১ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তত ৩২ জন বাসিন্দা এলাকার রাস্তা, যান চলাচলের সমস্যা, জলের সমস্যা।, বিদ্যুত্‌ পানীয় জলের সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

শহরের উন্নয়ন নিয়ে মন্ত্রীর দাবির সমালোচনা করেছেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোকত ভট্টাচার্য, বিজেপির জেলা সভাপতি রথীন্দ্র বসুরা। অশোকবাবু বলেন, “শহরে ম্যাস্টিক রাস্তা হচ্ছে বলে যে কথা বারবার তুলে ধরা হচ্ছে এটা ‘কসমেটিক ডেভেলপন্ট’। অনেকটা মুখে পাউডার মাখার মতো। রাস্তা, পানীয় জলের সমসা, নিকাশি সমস্যা মেটানোর জন্য মূল কাজটাই অনেক ক্ষেত্রে হচ্ছে না। বাসিন্দারা সবটাই বুঝতে পারছেন। তাই এ দিন তারা সমস্যার কথাগুলি তুলেছেন।” কলকাতার রাস্তাঘাট যে বার তারা ম্যাস্টিকের তৈরি করেছিলেন সে বারই হেরে যান বলে জানান অশোকবাবু। তাঁর দাবি, চম্পাসারি এলাকার প্রধান রাস্তাটি তাদের সময়ই করা হয়। এখন সেটা ম্যাস্টিক করা হয়েছে মাত্র। তা ছাড়া কোন রাস্তা ম্যাস্টিকের প্রয়োজন, কোনটা নয় তা বুঝতে হবে। আলাদা ভাবে হলেও এ দিন কনভেনশনের সমালোচনা করেছে বিজেপি। বিজেপির জেলাসভাপতি বলেন, “আমরা আগেই বলেছি শহরে কিছু রাস্তা প্রচুর খরচ করে ম্যাস্টিকের করা হচ্ছে অথচ বিভিন্ন ওয়ার্ডে বিশেষ করে পুরসভার সংযোজিত এলাকা, বস্তি এলাকাগুলিতে প্রচুর রাস্তা এখনও পাকাই হয়নি। পুর পরিষেবা শিকেয় উঠেছে। কিছু রাস্তায় আলো বদলে ‘এলইডি’ বাতি লাগানো হচ্ছে অথচ অনেক জায়গায় বাতিই নেই।”

সত্যজিত্‌ নগরের বাসিন্দা দীপালি বর্মনেরও অভিযোগ, তাঁদের এলাকায় বিদ্যুতের খুটি পোতা হয়েছে বহু আগেই। অথচ আলো আসেনি। পানীয় জল আনতে অনেক দূরে যেতে হয় বাসিন্দাদের। রাস্তার পরিস্থিতিও খুবই খারাপ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন