ইসলামপুর হাসপাতালে আহত ছাত্র। নিজস্ব চিত্র।
প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন ঘিরে ফের উত্তপ্ত ইসলামপুর।
শনিবার সকালে ছাত্ররা দু’দলে ভাগ হয়ে মারপিটে জড়িয়ে পড়ায় জখম হল ২০ জন ছাত্র। বেলা ১১টা নাগাদ স্কুলের নাম পরিবর্তনের প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছিল ছাত্ররা। অভিযোগ, সেই সময় পেছনের গেটের তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে আরেক দল ছাত্র তাদের বাধা দেয়। স্কুলের ভেতর ও বাইরে থেকে ছাত্ররা একে অপরকে লক্ষ করে ঢিল ছোড়ে। স্কুল চত্বরে লাগাতার ইট ও পাথর বৃষ্টি হতে থাকে। দমকল ও পুলিশ পৌঁছলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। স্কুলের সামনের ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক আধ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে ছাত্ররা। ছাত্রদের দু’জনের আঘাত গুরুতর হওয়ায় তাদের ইসলামপুর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরিস্থিতি বুঝে স্কুল ছুটি দেন কর্তৃপক্ষ।
সেই সময় দমকল দফতরের সামনেই ছাত্রদের মধ্যে লাঠি ও ঢিল দিয়ে ছাত্ররা একে অপরের উপর হামলা চালায়। যুযুধান ছাত্রদের সরাতে গিয়ে ঢিল লাগে দুই স্কুল শিক্ষক সহ এক পুলিশ কর্মীরও। ইসলামপুরের ভারপ্রাপ্ত ডিএসপি মানিক লাল লোধ বলেন, ‘‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
ইসলামপুর হাইস্কুলের নাম পরিবর্তনের বিষয় নিয়ে উদ্যোগী হয়েছিলেন করিম চৌধুরী। স্কুলের নাম হওয়ার কথা হয়েছে চৌধুরী মহম্মদ ইউসুফ হাই স্কুল। ২০১৪ সালে বিকাশ ভবন থেকে সেই সম্পর্কিত তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠায় শিক্ষা দফতর। তবে স্কুলে রাজ্য সরকার পরিচালিত নতুন পরিচালন সমিতি হওয়ার পর সেই চিঠির বিষয়ে আলোচনায় বসা হয়। পরিচালন সমিতির দাবি, স্কুল প্রতিষ্ঠার সময় স্কুলের নাম ছিল চৌধুরী মহম্মদ ইউসুফ হাই স্কুল অর্থাৎ রাজ্যের জনশিক্ষা ও গ্রন্থাগার মন্ত্রী আবদুল করিম চৌধুরীর বাবার নামে। তবে পরবর্তীতে স্কুলটি শিক্ষা দফতরের স্বীকৃতী পাওয়ার সময় স্কুলের নাম পরিবর্তন হয়। পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা করিম চৌধরীর ভাই কাইজার চৌধুরী বলেন, ‘‘স্কুলের নাম তো পরিবর্তন হয়নি। একটি চিঠি হয়েছিল তারই উত্তর দিয়েছি মাত্র। না হলে আমাদের শো-কজ করতে পারত। তবে স্কুলের গণ্ডগোলের কোনও খবর পাইনি। ছাত্রদের এ ভাবে কে পরিচালনা করছে তা বুঝতে পারছি না। শিক্ষকদেরও উচিত বিষয়টি নজর দেওয়া।’’
ইসলামপুরের হাইস্কুলের বিষয়ে অবশ্য স্কুল পরিচালন সমিতির প্রাক্তন সম্পাদক কানাইয়ালাল অগ্রবাল জানান, গণ্ডগোলের খবর পেয়ে স্কুলে যান। তিনি বলেন, ‘‘ছাত্রদের শান্ত করার চেষ্টা চালিয়েছি। ছাত্ররা আবেগে ওই ঘটনা ঘটিয়েছে। মহকুমা প্রশাসনকে বলা হবে যাতে বিষয়টি নিয়ে হস্তক্ষেপ করে।’’
এ দিনের গণ্ডগোলের পরে অভিভাবকদের দেখা যায় ছুটে স্কুলে যেতে। এক অভিভাবক ঝুলন দত্ত বলেন, ‘‘গণ্ডগোলের খবর পেয়েই যে অবস্থায় ছিলাম ছুটে এসেছি। ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। স্কুল প্রশাসনের উচিত এ সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে অভিভাবকদের বিষয়টি জানানো।’’ স্কুলের সহকারি প্রধান শিক্ষক পরমেশ্বর সাহা বলেন, ‘‘স্কুলের যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ক্লাস করার মতো নয়. বাধ্য হয়েই স্কুলের ছুটির ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’ তবে স্কুল সূত্রে খবর, স্কুলের ওই পরিস্থিতি নিয়ে মহকুমা শাসক শনিবার সন্ধ্যায় স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করবেন।