নেশার আসর পার্ক, রাস্তা দখল করে যথেচ্ছ পার্কিং

শিলিগুড়ির অন্যতম ব্যস্ত সেবক মোড়ে দাঁড়ালেই বাড়িটা দেখা যায়। একেবারে হিলকার্ট রোডের গা ছুঁয়ে থাকা বাড়িটির নাম ‘লায়েক ভবন’। দোতলা বাড়ির নিচতলায় একটি বড় মাপের ওষুধের দোকান। দোকানের সাইনবোর্ডের পাশে টাঙানো একটি বড় মাপের ছবি। তাতে দেখা যাচ্ছে, লায়েক ভবনের সামনে দিয়ে হিলকার্ট রোড ঘেঁষে কু-ঝিক-ঝিক করতে করতে টয় ট্রেন চলেছে দার্জিলিঙের দিকে। ১৯৫৯ সালে তোলা ছবিটি মনে করিয়ে দেয় পুরনো শিলিগুড়ির কথা।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৪ ০২:১১
Share:

শিলিগুড়ি ১৯৫৯। লায়েক ভবনের সামনে দিয়ে ধোঁয়া উড়িয়ে চলেছে টয় ট্রেন। ফাইল চিত্র।

শিলিগুড়ির অন্যতম ব্যস্ত সেবক মোড়ে দাঁড়ালেই বাড়িটা দেখা যায়। একেবারে হিলকার্ট রোডের গা ছুঁয়ে থাকা বাড়িটির নাম ‘লায়েক ভবন’। দোতলা বাড়ির নিচতলায় একটি বড় মাপের ওষুধের দোকান। দোকানের সাইনবোর্ডের পাশে টাঙানো একটি বড় মাপের ছবি। তাতে দেখা যাচ্ছে, লায়েক ভবনের সামনে দিয়ে হিলকার্ট রোড ঘেঁষে কু-ঝিক-ঝিক করতে করতে টয় ট্রেন চলেছে দার্জিলিঙের দিকে। ১৯৫৯ সালে তোলা ছবিটি মনে করিয়ে দেয় পুরনো শিলিগুড়ির কথা।

Advertisement

সাড়ে পাঁচ দশক কেটে গিয়েছে। এখন সেবক রোড সকাল থেকে প্রায় মাঝ রাত পর্যন্ত জমজমাট। টয় ট্রেনের লাইন শহরের বুক থেকে সরিয়ে মহাবীরস্থানের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখন সেবক মোড়ের ওই লায়েক ভবনও তিন তলা হয়েছে। আশেপাশে বহুতলের ছড়াছড়ি। দশতলা অট্টালিকার সংখ্যা একাধিক। লায়েক ভবনের সামনে যেখানে টয় ট্রেনের লাইন ছিল সেখানে বৈধ-অবৈধ পার্কিং চলছে। গাড়ির ধোঁয়া, ধুলোবালি, গাড়ির বিকট শব্দে বৈদ্যুতিক হর্নের টানা আওয়াজে কান ঝালাপালা।

হিলকার্ট রোড, বিধান রোড কিংবা সেবক রোড, সর্বত্রই একই দৃশ্য। রাস্তার দু’ধার সব সময়েই দখল করে রাখে নানা যানবাহন। কারণ, শহরে শয়ে-শয়ে বহুতল, দোকানপাট, বাজার হলেও কোথাও গাড়ি রাখার সুষ্ঠু বন্দোবস্ত রয়েছে কি না সে দিকে পুরসভা নজর দেয়নি। অনেক বাণিজ্যিক ভবনে কাগজে-কলমে গ্যারাজ হয়েছে। বাস্তবে তা দোকান হিসেবে চলছে। ফলে, শহরের রাস্তা, ফুটপাতে কোপ পড়েছে। যা কি না শহর নিয়ে সমীক্ষা ও গবেষণার সময়ে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালায়ের অনেক গবেষকদের নজরে পড়েছে। ‘রাইটস’-এর সমীক্ষাতেও শহরে ফুটপাত, অবৈধ পার্কিং-এর জেরে গতি কমছে, দূষণ বাড়ছে বলেও অতীতে উল্লেখ করা হয়েছে।

Advertisement

পরিবেশবিজ্ঞানী, গবেষক কিংবা একাধিক সমীক্ষার পরেও অবশ্য শহরের হাল খুব একটা ফেরানোর ব্যাপারে সরকারি তরফে কেউ উদ্যোগী হননি। অন্তত, প্রবীণ শহরবাসীদের অভিজ্ঞতা তেমনই। পুরসভা, প্রশাসনের এ হেন উদাসীনতার সুযোগেই শিলিগুড়ি শহরের ৪৭টি ওয়ার্ডেই এখন বেআইনি বাড়ি, বহুতল তৈরির যেন হিড়িক পড়েছে। মহানন্দাপাড়া, বর্ধমান রোড, চানাপট্টি, হিলকার্ট রোড, আশ্রমপাড়া, চম্পাসারি ও পুরসভায় সংযোদিত এলাকায় হু হু করে বেআইনি বহুতল বাড়ছে। পুরসভার নথি অনুযায়ী, ২৪৩টি বেআইনি নির্মাণ চিহ্নিত হয়েছে। দফায় দফায় নোটিস পাঠানো হয়েছে। কিন্তু, কোনও বেআইনি নির্মাণই ভাঙা হয়নি। ফলে, সমস্যা বেড়েছে।

বাম আমল থেকে তৃণমূল জমানা, সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে। উঠছে একই অভিযোগ। বামেরা ক্ষমতায় থাকার সময়ে প্রোমোটোরদের একাংশের সঙ্গে তাঁদের যোগসাজশের অভিযোগে সরব হতেন কংগ্রেস, তৃণমূলের নেতানেত্রীরা। এখন তৃণমূল-কংগ্রেসের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ নিয়ে আন্দোলন করেন বামেরা। তাই হয়তো শহরের নাগরিক সমাজের অনেকেই একান্ত আলোচনায় তা নিয়ে আক্ষেপ করেন।

শিলিগুড়ি ২০১৪। সেই লায়েক ভবনের সামনেই যথেচ্ছ পার্কিং। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

যেমন, বাঘা যতীন পার্ক এলাকার বাসিন্দা তথা সাহিত্য দুনিয়ার সঙ্গে যুক্ত এক প্রবীণ জানান, বাম আমলে বাঘা যতীন পার্কের হাল ফেরাতে বহুবার নেতাদের বলে লাভ হয়নি। তৃণমূল ক্ষমতাসীন হওয়ার পরে এলাকার কাউন্সিলর গৌতম দেব মন্ত্রী হওয়ার পরে বাঘা যতীন পার্কের হাল পাল্টানো শুরু হলেও স্বস্তি পাচ্ছেন না তাঁরা। কারণ, পার্কের গা ঘেঁষে এখন বেআইনি ভাবে সিটি অটোর স্ট্যান্ড তৈরি হয়েছে। সন্ধে নামলে ওই পার্কে যে হারে নেশার আসর বসে বলে বাসিন্দাদের অনেকেরই অভিযোগ। তাই এলাকার বাসিন্দারা আশঙ্কায় থাকেন। যা নিয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া, “বাঘা যতীন পার্কের চেহারা আমূল বদলানোর কাজ সম্পূর্ণ হবে শীঘ্রই। কোনও বাজে আড্ডা বরদাস্ত হবে না। বেআইনি পার্কিং, দখলদারি দেখলেই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কে কোন দলের তা দেখা হবে না। এটা করতে আমরা দায়বদ্ধ।”

মন্ত্রী তাঁর দায়বদ্ধতা কতটা পালন করতে পারবেন তা সময়ই বলবে। কিন্তু, শহরের প্রবীণ ও নবীন প্রজন্মের অনেকে এ সবকে এড়িয়ে কাজের দুনিয়ায় ডুবে গিয়ে শিলিগুড়িতে সত্যিকারের ‘স্মার্ট সিটি’ করার ব্যাপারে আশাবাদী। তা নিয়ে চেষ্টা কম হচ্ছে না। সাফল্যের দৃষ্টান্তও কম নেই।

(পরবর্তী কিস্তি সোমবার)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন