পঞ্চায়েত দফতরে তালাবন্দি পুলিশকর্মীরা।
একের পর এক চুরি হচ্ছে। কিন্তু দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য রুখতে পুলিশ নিষ্ক্রিয় বলে অভিযোগে তেতে উঠেছে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের ভিঙ্গোল এলাকা। তদন্তে যাওয়া পুলিশকর্মীদের পঞ্চায়েত দফতরে ঢুকিয়ে তালাবন্ধ করে দিয়ে পুলিশের জিপ ভাঙচুর করেন বাসিন্দারা। সোমবার সকালে ওই ঘটনাটি ঘটে। দু’মাসের ব্যবধানে এলাকার গ্রামীণ ব্যাঙ্কে শনিবার রাতে ফের চুরির চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা। কাছেই একটি মুদিখানার দোকানে চুরি হয়।
এ দিন সকালে ওই ঘটনার তদন্তে যেতেই বাসিন্দাদের রোষের মুখে পড়তে হয় পুলিশকে। এক এএসআই সহ বাকি পুলিশকর্মীদের পঞ্চায়েত দফতরে ঢুকিয়ে দরজায় তালা দিয়ে দেওয়া হয়। বাইরে ভাঙচুর চালানো হয় পুলিশের জিপে। পরে আরও পুলিশকর্মী গেলে তাদেরও আটকে রাখা হয়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে র্যাফ নিয়ে এলাকায় যান চাঁচলের এসডিপিও। তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে পাঁচ ঘন্টা বাদে দুপুর সাড়ে ১২টায় মুক্তি পান পুলিশকর্মীরা। ওই ঘটনায় পুলিশের তরফেও মামলা রুজু করা হয়েছে। চাঁচলের এসডিপিও কৌস্তভদীপ্ত আচার্য বলেন, “বাসিন্দাদের কিছু ক্ষোভ ছিল। কিন্তু এ ভাবে পুলিশকর্মীদের আটকে রাখা কিংবা জিপ ভাঙচুর করা ঠিক হয়নি।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রবিবার রাতে ভিঙ্গোল বঙ্গীয় গ্রামীণ ব্যাঙ্কের শাখায় চুরির চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা। গ্রাম পঞ্চয়েত দফতরের উপরে দোতলায় ওই ব্যাঙ্কের শাখাটি রয়েছে। গ্যাস কাটার যন্ত্র দিয়ে দরজার তালা কেটে ভিতরে ঢোকার পর একই ভাবে ভল্টের ঘরে ঢুকে যায় দুষ্কৃতীরা। কিন্তু চেষ্টা করেও ভল্ট ভাঙতে পারেনি তারা। তবে ব্যাঙ্কের দু’টি তোয়ালে, কম্পিউটারের সামগ্রী খোয়া গিয়েছে। বহু কাগজপত্র তছনছ করে দেওয়া হয়েছে বলে ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে।
একই রাতে লাগোয়া একটি মুদিখানার দোকানে চুরির ঘটনা ঘটে। এ দিন সকালে বিষয়টি নজরে আসতেই এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। ওই সময় একজন হোমগার্ড ও ৬ জন সিভিক ভলান্টিয়রকে সঙ্গে নিয়ে ব্যাঙ্কে ঘটনার তদন্তে যান এএসআই গৌতম মাহাতো। পুলিশ দেখেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন বাসিন্দারা। পুলিশকর্মীদের পঞ্চায়েতে ঢুকিয়ে তালা দিয়ে দেওয়া হয়। তারপর পুলিশের জিপে ভাঙচুর চালায় জনতার একাংশ। খবর পেয়ে কয়েকজন পুলিশকর্মীকে নিয়ে এলাকায় যান এসআই পরিমল সাহা। কিন্তু তাঁদেরও তালাবন্ধ না করলেও আটকে রাখা হয়।
জিপ ভাঙচুর চালিয়েছে জনতা।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত বছর ১৯ ডিসেম্বর রাতে এই শাখায় চুরির চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা। ৩১ ডিসেম্বর রাতে এলাকার সুবল দাসের বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটে। জানুয়ারি মাসের শেষে ব্লক কংগ্রেসের সাধারণ ও পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন পূর্ত কর্মাধক্ষ সম্পাদক হরিহর দাসের খালি বাড়ি থেকে সর্বস্ব চুরি করে পালায় দুষ্কৃতীরা। হরিহরবাবু ওই সময় কলকাতায় গিয়েছিলেন। ওই ঘটনাগুলির কোনটিরও কিনারা হয়নি বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। তার পর গত রাতের ঘটনার পরে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন বাসিন্দারা। পুলিশকর্মীদের তালাবন্ধ করে রেখে এলাকায় মাইকে প্রচার করে বিক্ষোভে সামিল হতে বাসিন্দাদের জড়ো হতে বলায় নিমেষে কয়েকশো মানুষ পঞ্চায়েতের সামনে জড়ো হয়ে যান।
পুলিশ অবশ্য বাসিন্দাদের অভিযোগ পুরোপুরি মানতে চায়নি। হরিশ্চন্দ্রপুরের আইসি বাবিন মুখোপাধ্যায় বলেন, “সম্প্রতি সমস্ত ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে নিয়ে সভা করা হয়েছিল। সেখানে প্রতিটি ব্যাঙ্কে নৈশপ্রহরী, সাইরেন সহ সিসিটিভি বসানোর কথা বলা হয়েছিল। বেশ কিছু ব্যাঙ্ক তা করলেও ভিঙ্গোল ব্যাঙ্ক তা করেনি।”
বঙ্গীয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্কের মালদহের রিজিওনাল ম্যানেজার সব্যসাচী মজুমদার বলেন, “আমাদের ছোট ব্যাঙ্ক। ফলে নৈশপ্রহরী রাখা সম্ভব নয়। তবে শাখাগুলিতে সিসিটিভি বসানোর কাজ চলছে।” কিন্তু তার প্রশ্ন, “শুধু কি ব্যাঙ্কেই চুরি হচ্ছে? এলাকার বাসিন্দাদের বাড়িতেও সিসিটিভি, সাইরেন বসাতে হবে নাকি! পাহারাদার রাখতে হবে নাকি!”
ছবি: বাপি মজুমদার।