এ বছরও মাধ্যমিক চলাকালীন উত্তর দিনাজপুর জেলার একাধিক পরীক্ষাকেন্দ্রে (হাইস্কুল) বাইরে থেকে নকল সরবরাহ ও গণ টোকাটুকির আশঙ্কা করছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের রিপোর্ট ও পর্ষদের অতীতের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এ বছর জেলার ইসলামপুর মহকুমার ১৬টি পরীক্ষা কেন্দ্রকে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করেছেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদ কর্তৃপক্ষ। ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪ মার্চ পর্যন্ত চলবে মাধ্যমিক পরীক্ষা।
বাইরে থেকে নকল সরবরাহ ও গণ টোকাটুকি রুখতে স্পর্শকাতর পরীক্ষাকেন্দ্রগুলির ভিতরে ও বাইরে এ বছর ছয় থেকে সাতটি করে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে নজরদারি চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। প্রশাসনের সহযোগিতায় ইসলামপুরের মহকুমাশাসকের দফতরে একটি মনিটরিং রুম খোলা হয়েছে। সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে একাধিক কম্পিউটারের পর্দায় ওই মনিটরিং রুম থেকেই পরীক্ষা চলাকালীন স্পর্শকাতর পরীক্ষা কেন্দ্রগুলিতে নজরদারি চালাবেন পর্ষদ ও প্রশাসনের আধিকারিকেরা। সার্ভারের মাধ্যমে সেই ভিডিও ফুটেজ সরাসরি কলকাতায় পর্ষদের সদর দফতরে পৌঁছে দেওয়ারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। উল্লেখ্য, আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪ মার্চ পর্যন্ত এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা চলবে। এই প্রথম পর্ষদের তরফে জেলায় সবচেয়ে বেশি পরীক্ষাকেন্দ্রকে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। গত বছর ইসলামপুর মহকুমার ৬টি পরীক্ষা কেন্দ্রকে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
পর্ষদের উত্তরবঙ্গ আঞ্চলিক আধিকারিক প্রদীপ বিশ্বাস বলেন, “পুলিশ ও প্রশাসনের রিপোর্টের পাশাপাশি অতীতের অভিজ্ঞতা বিচার করেই এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন বাইরে থেকে নকল সরবরাহ ও গণ টোকাটুকি রুখতে ১৬টি পরীক্ষাকেন্দ্রকে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পরীক্ষা চলাকালীন কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে যাতে খুব তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তার জন্য সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে স্পর্শকাতর পরীক্ষাকেন্দ্রগুলির উপর নজরদারি চালানো হবে।”
পর্ষদ নিযুক্ত জেলা আহ্বায়ক ব্যোমকেশ বর্মন ও ইসলামপুর মহকুমা পরিদর্শক সঞ্জয়চন্দ্র দাস জানান, এ বছর নির্বিঘ্নে মাধ্যমিক শেষ করতে জেলার ন’টি ব্লকে পর্ষদ ও প্রশাসনের ন’টি প্রতিনিধি দল প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রে নজরদারি চালাবে। প্রতিটি পরীক্ষাকেন্দ্র কর্তৃপক্ষকে পরীক্ষা চলাকালীন নির্দিষ্ট সময় অন্তর পর্ষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধিকে মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়ে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রেজা বলেন, “নির্বিঘ্নে মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ করতে স্পর্শকাতর ও সাধারণ পরীক্ষা কেন্দ্রগুলিতে পর্যাপ্ত পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হবে। বাইরে থেকে নকল সরবরাহ রুখতে সাদা পোশাকের পুলিশ পরীক্ষাকেন্দ্রগুলির আশপাশের এলাকায় নজরদারি চালাবেন।” তিনি জানান, পরীক্ষা চলাকালীন প্রতিটি পরীক্ষাকেন্দ্রে ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। সেই সঙ্গে পরীক্ষা চলাকালীন পরীক্ষাকেন্দ্রের ২০০ মিটারের মধ্যে জমায়েত, মাইক বাজানো ও জেরক্সের দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে।”
২০১২ ও ২০১৩ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন ইসলামপুর মহকুমার গোয়ালপোখর-১ ব্লকের লোধন ও ঠিকরিবাড়ি হাইস্কুলে বাইরে থেকে নকল সরবরাহ রুখতে গিয়ে পরীক্ষার্থীদের অভিভাবক ও পরিচিতদের একাংশের সঙ্গে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। লোধন ও ঠিকরিবাড়ি হাই স্কুলে ওই সংঘর্ষে ইটের আঘাতে জখম হন ইসলামপুরের তৎকালীন মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সুধীরকুমার নীলকান্ত ও মহকুমাশাসক সমনজিত সেনগুপ্ত। উত্তেজিত জনতা সেইসময় পুলিশের গাড়িও ভাঙচুর করেছিল।
গত বছরও করণদিঘি, ইসলামপুর, চোপড়া, গোয়ালপোখর-১ ও ২ ব্লকের একাধিক পরীক্ষাকেন্দ্রে পুলিশের সামনেই পরীক্ষার্থীদের ঘনিষ্ঠরা পাঁচিল ও দোতলার কার্নিসে উঠে একাধিক পরীক্ষাকেন্দ্রের ভিতরে নকল ছুড়ে দেয়। পুলিশ-প্রশাসনের রিপোর্ট ও অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে এ বছর ইসলামপুর মহকুমার যে ১৬টি পরীক্ষা কেন্দ্রকে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করেছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ।
পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর জেলার ৭৪টি পরীক্ষাকেন্দ্রে মাধ্যমিক পরীক্ষা নেওয়া হবে। পর্ষদ কর্তৃপক্ষ ১৬টি সেন্টার থেকে পরীক্ষাপর্ব পরিচালনা করবেন। জেলার মোট মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৭ হাজার ৮০২ জন। তাঁদের মধ্যে ছাত্র ১৪ হাজার ৯২২ জন। ছাত্রী রয়েছেন ২২ হাজার ৮৮০ জন। গত বছরের তুলনায় ছাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে ১ হাজার ৩৬৩ জন। যা মেয়েদের উন্নয়নের বাহক বলে মনে করছেন পর্ষদ ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি থেকে শুরু করে জেলার প্রবীন শিক্ষাবিদরা।
শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য সদ্য কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের তরফে রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত রায়গঞ্জ করোনেশন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, “মেয়েদের শিক্ষার প্রসারের ব্যাপারে সর্বশিক্ষা মিশনের ধারাবাহিক বিভিন্ন কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য-সহ শিক্ষক ও শিক্ষিকাদের ধারাবাহিক প্রচেষ্টা এবং মেয়েদের পড়াশোনার বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতনতার কারণেই এ বছর মাধ্যমিকে ছাত্রীদের সংখ্যা এতটা বেড়েছে বলে আমার ধারণা। যা ভবিষ্যতের নারীশিক্ষার উন্নয়নে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছি।”
মালদহে এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এবার বাড়ল পাঁচ শতাংশ। ৪৪ হাজার ৭৩৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র রয়েছেন ২২ হাজার ৬১৯ জন। ছাত্রী রয়েছেন ২২ হাজার ১০৮ জন। স্কুল শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে,এ বার জেলার ১৮টি কেন্দ্রে এবং ১১২টি ভেনুতে পরীক্ষা নেওয়া হবে। তার মধ্যে ন’টি কেন্দ্রকে উত্তেজনাপ্রবণ হিসেবে চিহ্নত করা হয়েছে। এই কেন্দ্রগুলির জন্য বাড়তি নিরপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মালদহ জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) আশিসকুমার চৌধুরী বলেন, “গত বছর কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া জেলায় শান্তিপূর্ণভাবে মাধ্যমিক পরীক্ষা হয়েছিল। এ বারও আশা করি, তেমন কোনও বিশৃঙ্খল ঘটনা ঘটবে না। তবে আমরা কয়েকটি কেন্দ্র উত্তেজনাপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত করেছি। সেগুলির নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। বাড়তি পুলিশ থাকবে।