নয়া বিজ্ঞপ্তি, অনাস্থা নিয়ে দোটানায় তৃণমূল

ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে ক্ষমতা দখলের পর আড়াই বছরের মধ্যে ক্ষমতাসীন বোর্ডের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা যাবে না। রাজ্যের পঞ্চায়েত দফতর থেকে জারি করা এমন একটি বিজ্ঞপ্তিকে ঘিরে বৃহস্পতিবার দুই দিনাজপুর ও মালদহের তৃণমূলের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। দক্ষিণ দিনাজপুরের তৃণমূল নেতারা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন।

Advertisement

অনুপরতন মোহান্ত

শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৩৭
Share:

ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে ক্ষমতা দখলের পর আড়াই বছরের মধ্যে ক্ষমতাসীন বোর্ডের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা যাবে না। রাজ্যের পঞ্চায়েত দফতর থেকে জারি করা এমন একটি বিজ্ঞপ্তিকে ঘিরে বৃহস্পতিবার দুই দিনাজপুর ও মালদহের তৃণমূলের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। দক্ষিণ দিনাজপুরের তৃণমূল নেতারা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন। মালদহ ও উত্তর দিনাজপুরের ক্ষেত্রে পঞ্চায়েতে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা করছেন সেখানকার তৃণমূলের অনেকেই। এদিন রায়গঞ্জ এবং মালদহের একাধিক তৃণমূল নেতা স্বীকার করেছেন, ওই নির্দেশ এখানে লাগু হলে বেশ কিছু পঞ্চায়েতে ক্ষমতা থেকে সরতে হবে তাঁদের।

Advertisement

দক্ষিণ দিনাজপুরের ক্ষেত্রে ওই বিজ্ঞপ্তিকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ পঞ্চায়েতগুলিতে অনাস্থা পেশের প্রক্রিয়া আটকে রেখেছে। পাশের জেলা উত্তর দিনাজপুর ও মালদহে এদিনও একাধিক পঞ্চায়েতে তলবি সভা ডেকে প্রধান অপসারিত হয়েছেন একই সরকারি বিজ্ঞপ্তি সামনে রেখে দুই জেলা প্রশাসনের দুরকম পদক্ষেপ করায় ফাঁপরে পড়েছে তৃণমূল। কারণ, গত কয়েকদিন ধরে উত্তর দিনাজপুর এবং মালদহে একাধিক গ্রামপঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতে অনাস্থা পেশের ফলে ওই পঞ্চায়েতগুলির বোর্ডের ক্ষমতা দখল করতে চলেছে তৃণমূল।

দক্ষিণ দিনাজপুরের ক্ষেত্রে একাধিক পঞ্চায়েতে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিরোধী জোটের অনাস্থা পেশের জেরে তৃণমূল বোর্ডের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ফলে ওই বিজ্ঞপ্তিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সিপিএম। ওই সরকারি বিজ্ঞপ্তি দক্ষিণ দিনাজপুরে এলেও কেন পাশের ওই দুই জেলায় পৌঁছল না, এই প্রশ্নও উঠেছে।

Advertisement

এ দিন মালদহ জেলা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের আধিকারিক মানবেন্দ্র মোদক বলেন, “আমরা এখনও ওই বিজ্ঞপ্তি পাইনি। ফলে, বৃহস্পতিবার মালদহের চাঁচল ১ নম্বর ব্লকের অলিহান্ডা গ্রামপঞ্চায়েতে ক্ষমতাসীন সিপিএমের বোর্ডের বিরুদ্ধে তৃণমূল ও কংগ্রেস জোট অনাস্থা পেশের পর তলবি সভায় সিপিএমের প্রধানকে অপসারণ করেছে। একইভাবে বুধবার হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতিতে তৃণমূলের অনাস্থার জেরে সিপিএম বোর্ড ক্ষমতাচ্যূত হতে চলেছে।”

এ দিন উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ ব্লকের ৬ নম্বর রামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে তলবি সভার মাধ্যমে কংগ্রেসের প্রধানকে অপসারণ করা হয়। আজ, শুক্রবার উপপ্রধান অপসারণের সভা হবে। গত এক সপ্তাহের মধ্যে রায়গঞ্জের ভাটোল ও জগদীশপুর সহ একাধিক পঞ্চায়েতে অনাস্থার জেরে তলবি সভায় বিরোধীদের হটিয়ে তৃণমূল পঞ্চায়েত গুলিতে ক্ষমতা দখল করতে চলেছে। এদিন রায়গঞ্জের বিডিও অমূল্য সরকার বলেন, “ওই ধরণের কোনও সরকারি বিজ্ঞপ্তি আসেনি। বিষয়টি সম্পর্কে জানা নেই। ফলে পঞ্চায়েতে অনাস্থা প্রস্তাব পেশের প্রক্রিয়া উত্তর দিনাজপুরে চালু রয়েছে।”

দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক তাপস চৌধুরী জানান, বিধানসভায় পাশ হওয়া ওই নির্দেশ মানতেই হবে। তিনি বলেন, “জনস্বার্থে ওই বিজ্ঞপ্তি পঞ্চায়েত দফতর থেকে ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে।” ওই বিলটিতে রাজ্যপালের অনুমোদন আছে কি না, তা জেলাশাসক বলতে পারেননি। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সই করা এ সংক্রান্ত একটি সরকারি বিজ্ঞপ্তি গত ৭ নভেম্বর বালুরঘাটে এসে পৌঁছয়।

গত মঙ্গলবার তৃণমূল পরিচালিত বংশীহারি পঞ্চায়েত সমিতির প্রধানের বিরুদ্ধে মহকুমা শাসকের কাছে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করে সিপিএম। গত শুক্রবার এই ব্লকের তৃণমূলের ব্রজবল্লভপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের বিরুদ্ধেও সংখ্যাগরিষ্ঠ সিপিএমের সদস্যরা বিডিও-র কাছে অনাস্থা পেশ করেন। বংশীহারি পঞ্চায়েত সমিতির মোট আসন ১৫টি। তার মধ্যে সিপিএম ৮টি, তৃণমূল ৬টি এবং বিজেপির ১টি আসন রয়েছে। ব্লক প্রশাসন নতুন বিজ্ঞপ্তি সামনে রেখে অনাস্থা আনা যাবে না বলে জানিয়ে দেয়।

সিপিএম নেতা তথা জেলা পরিষদের সদস্য রঞ্জন মিত্র অভিযোগ করেন, “তৃণমূলের স্বজনপোষণ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছি। তা আটকাতেই প্রশাসন তৎপর।” বংশীহারি ব্লক সিপিএমের জোনাল সম্পাদক সকিরুদ্দিন আহমেদ অভিযোগ করেন, ওই সিদ্ধান্তটি বিধানসভায় প্রস্তাব হলেও ওই বিলে এখনও রাজ্যপালের সই হয়নি। ফলে, তা কার্যকর করতে অপেক্ষা জরুরি।”

তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা আইন পরিষদীয় সচিব বিপ্লব মিত্রের বক্তব্য, বিধানসভায় পঞ্চায়েত আইনে ওই প্রস্তাবটি পাশ হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সিপিএম এখন বিজেপির সঙ্গে জোট বেধে পঞ্চায়েত দখলের স্বপ্ন দেখছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement