পুজোর আনন্দে সামিল সুর্যোদয়ের আবাসিকরাও

বছরভর হোমের চার দেওয়ালের মধ্যেই আবদ্ধ থাকে ওদের পৃথিবী। বাইরের আলো হাওয়া যেমন গায়ে লাগেনা ওদের , তেমনই ওদের সুখ দুঃখের হদিশও মেলেনা বাইরে থেকে। কিন্তু উৎসবের মরশুমে ওদেরও সবার সঙ্গে মিলিয়ে দিতে উদ্যোগী হল হোম কর্তৃপক্ষ। রায়গঞ্জের সূর্যোদয় মূক ও বধির আবাসিক হোমের বাসিন্দা ৬২ জন মূক ও বধির কিশোর-কিশোরীকে দুর্গাপুজোর আনন্দে সামিল করতে অভিনব উদ্যোগ নিলেন তাঁরা।

Advertisement

গৌর আচার্য

রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৪ ০২:২০
Share:

বছরভর হোমের চার দেওয়ালের মধ্যেই আবদ্ধ থাকে ওদের পৃথিবী। বাইরের আলো হাওয়া যেমন গায়ে লাগেনা ওদের , তেমনই ওদের সুখ দুঃখের হদিশও মেলেনা বাইরে থেকে। কিন্তু উৎসবের মরশুমে ওদেরও সবার সঙ্গে মিলিয়ে দিতে উদ্যোগী হল হোম কর্তৃপক্ষ। রায়গঞ্জের সূর্যোদয় মূক ও বধির আবাসিক হোমের বাসিন্দা ৬২ জন মূক ও বধির কিশোর-কিশোরীকে দুর্গাপুজোর আনন্দে সামিল করতে অভিনব উদ্যোগ নিলেন তাঁরা। উত্তর দিনাজপুর জেলা পুলিশের বরাদ্দ করা একটি বাসে করে আজ সপ্তমীতে দিনভর বিভিন্ন মন্ডপে ঘুরে ঠাকুর দেখবে মূক ও বধির শিশু কিশোররা। শুধু তাই নয়, হোম কর্তৃপক্ষ পুজোর চারদিন তিনবেলা আবাসিকদের বিশেষ খাওয়া দাওয়ারও বন্দোবস্ত করেছেন। ইতিমধ্যেই হোমের তরফে আবাসিকদের হাতে নতুন পোশাক ও জুতো সহ বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রী তুলে দিয়েছে।

Advertisement

সমাজকল্যান দফতরের অধীনস্থ এই হোমের অধ্যক্ষ পার্থসারথী দাস বলেন, সারাবছর হোমের চার দেওয়ালে বন্দি থেকে হাঁপিয়ে ওঠে মূক ও বধির আবাসিকরা। সাধারণ ছেলেমেয়েদের থেকে ওদের আমরা আলাদা চোখে দেখতে চাই না। তাই ওদেরও পুজোর আনন্দে সামিল করাটা আমাদের অন্যতম প্রধান কর্তব্য বলে মনে করি।” তিনি জানান, পুলিশের সহযোগিতা ছাড়া আবাসিকদের পুজোমন্ডপ ঘুরিয়ে দেখানো তাঁদের পক্ষে সম্ভব হত না।

জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রেজা বলেন,“ মূক ও বধির আবাসিকরা যাতে নির্বিঘ্নে বিভিন্ন পুজোমন্ডপ ঘুরতে পারে তারজন্য হোম কর্তৃপক্ষের অনুরোধে একটি বাস দেওয়া হয়েছে। আবাসিকদের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা রক্ষীও দেওয়া হয়েছে।”হোম সূত্রের খবর, আজ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হোমের চার থেকে ১৭ বছর বয়সী ৩৯ জন ছেলে ও ২৩ জন মেয়েকে রায়গঞ্জের শিলিগুড়ি মোড় থেকে কসবা পর্যন্ত ১৫টি বড় পুজোমন্ডপ ঘুরিয়ে দেখাবেন হোমের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা।

Advertisement

পার্থবাবু জানান, হোমের নিজস্ব তহবিলের টাকায় পুজো উপলক্ষ্যে মহালয়ার দিন আবাসিক মূক ও বধির কিশোরদের নতুন জামা, প্যান্ট ও জুতো দেওয়া হয়েছে। কিশোরীদের দেওয়া হয়েছে নতুন ফ্রক, চুরিদার, জুতো ও বিভিন্ন প্রসাধনী। পুজোর চারদিন স্বাদ বদলেও থাকছে এলাহি ব্যবস্থা। সকালের মেনু লুচি, ছোলার ডাল, পনিরের ঝোল, পায়েস, দই ও মিষ্টি। আবাসিকদের জন্য দুপুরে বরাদ্দ হয়েছে ভাত, সবজি, মুগের ডাল, আলুভাজা, বেগুন ভাজা, মাছের ঝোল, খাসির মাংস, দই, মিষ্টি ও চাটনি। রাতের মেনুতে থাকছে ফ্রাইড রাইস, বাঁধাকপির ঘন্ট, মুড়িঘন্ট, মুরগির মাংস ও আইসক্রিম।

মঙ্গলবারই হোমে গিয়ে শোনা গেছে উৎসবের আগমনী। দেখা গেছে আবাসিকদের অনেকেই নতুন পোশাক পড়ে খেলাধূলা করছে। তাদের জন্য পুজোর আয়োজনে তারা যে খুশি ইশারাতেই বুঝিয়ে দিল তারা। যেকোনও ভাবে বাড়ি থেকে হারিয়ে আদালতের নির্দেশে মূক ও বধির কিশোর কিশোরীরা ওই হোমের দুটি পৃথক হস্টেলে সারাবছর থাকে। সেখানে তাদের চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া খেলাধুলো ও বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন