প্রাথমিকে বদলি বাতিল, তৃণমূলের কোন্দল প্রকাশ্যে

নানা অভিযোগের জেরে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রাথমিক স্কুল সংসদের জারি করা প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির নির্দেশ বাতিল করে দিল শিক্ষা দফতর। সেই সঙ্গে জেলার প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি সংক্রান্ত নির্দেশ রাজ্যের শিক্ষা দফতর থেকেই জারি হবে বলেও জেলা সাংসদকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বালুরঘাট শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৪ ০২:৩৯
Share:

নানা অভিযোগের জেরে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রাথমিক স্কুল সংসদের জারি করা প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির নির্দেশ বাতিল করে দিল শিক্ষা দফতর। সেই সঙ্গে জেলার প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি সংক্রান্ত নির্দেশ রাজ্যের শিক্ষা দফতর থেকেই জারি হবে বলেও জেলা সাংসদকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি জেলা শিক্ষা সংসদে এই নির্দেশ এসে পৌঁছয়। গত ৫ মার্চ লোকসভা ভোট ঘোষণার দিনই জেলা জুড়ে ৩১২ জন প্রাথমিক শিক্ষককে বদলির নির্দেশ জারি হয়। ভোটের মুখে শিক্ষকদের প্রভাবিত করতে তৃণমূল পরিচালিত জেলা সংসদ অনৈতিকভাবে নির্দেশ জারি করেছে এবং তাতে বিধিভঙ্গ হয়েছে বলে সিপিএমের তরফে জেলাশাসকের কাছে অভিযোগ করা হয়। জেলা প্রশাসনের নির্দেশে সাময়িক ভাবে ওই নির্দেশ স্থগিতও হয়ে যায়। এরপরে গত মাসে জেলা প্রাথমিক স্কুল সংসদের চেয়ারম্যান পদ থেকে তপনের বিধায়ক বাচ্চু হাঁসদাকে সরিয়ে জেলা পরিষদের প্রাক্তন সহকারী সভাধিপতি কল্যাণ কুণ্ডুকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তৃণমূলের অন্দরের খবর, বদলি নিয়ে দলীয় স্তরেই নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। কয়েকটি ক্ষেত্রে লেনদেনের অভিযোগও উঠে আসে, তারপরেই চেয়ারম্যানকে সরানো এবং বদলির নির্দেশ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

Advertisement

জেলা প্রাথমিক স্কুল সংসদের চেয়ারম্যান কল্যাণ কুণ্ডু এদিন রাজ্যের পাঠানো নির্দেশ ব্যাখ্যা করে বলেন, “বদলি নিয়ে নানা অভিযোগ উঠেছিল। তার জেরে রাজ্য শিক্ষা দফতর নির্দেশ পাঠিয়ে আগের নির্দেশ বাতিল করেছেন। নির্দেশে বলা হয়েছে সংসদ থেকে বদলির তালিকা তৈরি করে রাজ্যকে পাঠাতে হবে। রাজ্য শিক্ষা দফতর খতিয়ে দেখে তারপরে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির নির্দেশ জারি করবেন।”

রাজ্যের শিক্ষা দফতরের এই নির্দেশের জেরে জেলায় শাসক দলের অন্দরে গোষ্ঠী রাজনীতি প্রকাশ্যে এসেছে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র এ দিন রাজ্যের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে অভিযোগ করেন, লেনদেনের কারণেই গত মার্চ মাসে বদলির নির্দেশ জারি হয়েছিল। যদিও, তত্‌কালীন স্কুল সংসদ চেয়ারম্যান তথা দলেরই তপনের বিধায়ক বাচ্চু হাঁসদা পাল্টা দাবি করে বলেছেন, “বদলি নিয়ে আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ দিতে পারলে বিধায়ক পদ ছেড়ে দেব।”

Advertisement

জেলা তৃণমূল সভাপতির দাবি, বদলি নিয়ে গোড়াতেই অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে বাচ্চুবাবুকে স্কুল সংসদের চেয়ারম্যান পদ থেকে দল সরিয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, “বদলিতে লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে বলেই দল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গোটা বিষয়টি সংগঠন দেখছে।” যদিও, সংসদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান বাচ্চু হাঁসদার দাবি, লোকসভা ভোট ঘোষণার আগেই গত ২৭ ফেব্রুয়ারি জেলা স্কুল পরিদর্শক (ডিআই) ওই বদলির আদেশে সই করেন। উদ্দেশ্যপ্রনোদিতভাবে এখন নানা অভিযোগ তোলা হচ্ছে বলে বিধায়কের দাবি।

জেলার বাম শিক্ষক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের অভিযোগ, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের প্রভাব জেলার প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে পড়তে শুরু করেছে। প্রায় দু’বছর ধরে বদলি প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে থাকায় একজন শিক্ষক থাকা স্কুলের সংখ্যা বাড়ছে। সংসদ সদস্য তথা আরএসপির সারা বাংলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সহ সম্পাদক অমিত সাহা অভিযোগ করে বলেন, “নিয়ম মেনে ওই বদলি হয়নি। আর তা নিয়ে শাসক দলের নিজেদের গোলমালে পুরো প্রক্রিয়াটিই ভেস্তে গেল। যার প্রভাব শিক্ষা ক্ষেত্রে পড়েছে।” সিপিএমের নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের জেলা সভাপতি অভিমন্যু দে-র কটাক্ষ, “লেনদেনের বিষয়টি তৃণমূল নেতারাই ভাল বলতে পারবেন। তবে সংসদ সদস্যদের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই ৩১২ জন শিক্ষককে বদলি করা হয়েছিল। দ্রুত জট না খুললে এ জেলার তপন পূর্ব ও পশ্চিম চক্র, বালুরঘাটের পশ্চিম চক্র এবং কুমারগঞ্জ ব্লকের উত্তর চক্রের স্কুলগুলিতে শিক্ষকের অভাবে পঠনপাঠন ব্যহত হবে।” পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি অজয় সাহা বলেন, “শীঘ্রই সমস্যা মিটিয়ে অতিরিক্ত শিক্ষক বিশিষ্ট প্রাথমিক স্কুলগুলি থেকে শিক্ষকদের ঘাটতি-শিক্ষক স্কুলে বদলি করা প্রয়োজন। না হলে পঠনপাঠন ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। ইতিমধ্যে জেলায় ৪০টির বেশি প্রাথমিক স্কুলে একজন শিক্ষক দিয়ে চলছে বলে তিনি দাবি করেছেন।

শাসক দলের শিক্ষক সংগঠন তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি দিব্যেন্দু সমাজদার অবশ্য প্রাত্তন সংসদ চেয়ারম্যানের পাশেই দাঁড়িয়েছেন। তিনি বলেন, “শিক্ষকদের সিনিয়ারিটি দেখেই সে সময়ে বদলি করা হয়। নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগে ওই ৩১২ জন শিক্ষকের বদলি স্থগিত হয়ে যায়। লেনদেনের অভিযোগ সঠিক নয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন