প্রতারণায় অভিযুক্ত বিজেপি নেতা

রেলে চাকরি দেওয়ার নাম করে কয়েক কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ উঠল এক বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে। অলক সেন নামে ওই নেতাকে সোমবার শিলিগুড়ির নিউ জলপাইগুড়ি ফাঁড়ির বকরাভিটায় তাঁর বাড়ি থেকে নিউ জলপাইগুড়ি ফাঁড়ির পুলিশের সহায়তায় গ্রেফতার করে গুয়াহাটি পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার তাকে ট্রানজিট রিমান্ডে নেবে গুয়াহাটি সিআইডি বলে জানা গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৪ ০১:১৪
Share:

রেলে চাকরি দেওয়ার নাম করে কয়েক কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ উঠল এক বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে। অলক সেন নামে ওই নেতাকে সোমবার শিলিগুড়ির নিউ জলপাইগুড়ি ফাঁড়ির বকরাভিটায় তাঁর বাড়ি থেকে নিউ জলপাইগুড়ি ফাঁড়ির পুলিশের সহায়তায় গ্রেফতার করে গুয়াহাটি পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার তাকে ট্রানজিট রিমান্ডে নেবে গুয়াহাটি সিআইডি বলে জানা গিয়েছে।

Advertisement

অলকবাবু জলপাইগুড়ি জেলা বিজেপির সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও আহ্বায়ক ছিলেন। বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য তাঁর আগের কোনও বিষয়ে জানতেন না বলে জানান। তবে অলকবাবু দোষী প্রমাণিত হলে দল তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বলে জানানো হয়েছে। বিরোধীরা অবশ্য বিজেপি নেতার এই কাণ্ডে কটাক্ষ করেছেন। কারা বিজেপি দলের সঙ্গে জড়িত তা এই ঘটনাতেই প্রমাণিত বলে মনে করছেন তৃণমূল থেকে বিজেপি ও কংগ্রেস। অভিযুক্তের কড়া শাস্তির দাবি করেছেন তাঁরা। অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অলকবাবু। তিনি বলেন, “আমি নির্দোষ, তবে আমার বিরুদ্ধে অনেক পুরনো মামলা ছিল তা জানি। তবে এতদিন পরে কেন ধরা হল বুঝতে পারছি না।’’

শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগমোহন বলেন, “গুয়াহাটির সিআইডিই বিষয়টি দেখছে। আমাদের কাছে সাহায্য চেয়েছিল। আমরা সহায়তা করেছি। সিআইডি থানায় উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের বিভিন্ন পদে চাকরি দেওয়ার নাম করে অর্থ আদায় করছে একটি চক্র, এমন অভিযোগ করা হয়েছিল ২০১৩ সালে। তার পরেই গুয়াহাটি সিআইডি মামলা করে তদন্ত শুরু করে। অসমের বিভিন্ন এলাকা থেকে এই চক্রের সঙ্গে জড়িত ৮ জনকে গ্রেফতার করে তাঁরা। এই মামলায় তদন্ত চালিয়ে তাঁরা জানতে পারে অলক সেন এই চক্রের মূল পাণ্ডা। এদিন তাঁর বাড়িতে দুই আধিকারিকের নেতৃত্বে তল্লাশি চালাতে যান ৬ সদস্যের সিআইডি অফিসারের একটি দল।

Advertisement

সিআইডি ইন্সপেক্টর যজ্ঞেশ্বর দত্ত বলেন, “ধৃতের বাড়ি থেকে ৩ টি মোবাইল ফোন ও দুটি সরকারি ও বেসরকারি ব্যঙ্কের পাস বই উদ্ধার করেছে। তাতে মোট ৪৫ লক্ষ টাকার হদিশ পাওয়া গিয়েছে।” প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে প্রায় ৪৫ কোটি টাকার প্রতারণা হয়েছে। তবে বিস্তারিত জানতে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হবে বলে জানা অপর ইন্সপেক্টর পুতুল বৈশ্য।

তদন্তকারীদের দাবি, ধৃতের বিভিন্ন জায়গায় একাধিক বাড়ি রয়েছে। শিলিগুড়ির বকরাভিটায় তার আদি বাড়ি। স্ত্রী ছেলে-মেয়ে নিয়ে দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার পৈলানে থাকেন। ছেলে-মেয়ে সেখানেই স্কুলে পড়ে। এখানে একাই থাকতেন তিনি। শিলিগুড়ি ছাড়াও। গুয়াহাটি, কলকাতা, দিল্লিতে নিজস্ব বাড়ি রয়েছে। এগুলোতেও হানা দিতে পারে সিআইডি। আরও সম্পত্তি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখছেন তাঁরা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন প্রাথমিক জেরায় চারজনের নাম জানিয়েছে পুলিশকে। তার মধ্যে কাশেম আলি নামে মালিগাঁও এর এক চিফ ইঞ্জিনিয়ারও রয়েছেন। তিনি মূলত নথি জাল করার কাজে সাহায্য করতেন বলে জানা গিয়েছে। তার বাড়ি চাপড়ে।

উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব এই ঘটনার বিস্তারিত তদন্তের দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “ওই প্রতারণার টাকায় অনেক জায়গায় বিজেপি অনেক কিছু করেছে শুনেছি। পুলিশের উচিত তদন্ত করে পুরো বিষয়টি তুলে ধরা।”

কংগ্রেসের দার্জিলিং জেলা সভাপতি শঙ্কর মালাকার বলেন, “তৃণমূল-সিপিএম-বিজেপিতে কোনও পার্থক্য নেই। ভবিষ্যতে বিজেপি এলে কী চেহারা নেবে এটা তার একটা নমুনা মাত্র।” প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের কটাক্ষ, “সমাজ বিরোধীদের ভাগাভাগি করে নিয়েছে তৃণমূল আর বিজেপি। ঘটনায় পরিষ্কার বিজেপি লুঠপাটের নীতি নিয়েছে।” যদিও এই ঘটনায় অলকবাবু দোষী প্রমাণিত হলে কড়া অবস্থান নেবে দল বলে জানান বিজেপির জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক দ্বীপেন প্রামাণিক। তিনি বলেন, “উনি আমাদের দলের জেলা সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও আহ্বায়ক। দোষী প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে দলের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে বহিষ্কারও করা হবে।” কেউ ব্যক্তিগত জীবনে কিছু করে থাকলে তার দায় দল নেবে না বলে জানান, দার্জিলিং জেলা বিজেপির সভাপতি রথীন্দ্র বসু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন