শিলিগুড়িতে এক প্রতিবাদকারীকে চড় মারার অভিযোগে উত্তরবঙ্গ উন্ননয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করলেও পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি। তাই কংগ্রেস সহ একাধিক বিরোধী দল রাজ্যপালের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিরোধী দলের প্রায় সকলেরই দাবি, যে হেতু মন্ত্রীর দফতরের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতিবাদকারী ব্যক্তিকে ধরা হয়েছে, তাই নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীকে গ্রেফতার করা হোক। কংগ্রেস, বামফ্রন্ট বা বিজেপি নেতৃত্ব প্রত্যেকেই এই বিষয়কে কেন্দ্র করেই আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ওই ঘটনায় প্রথমে গ্রেফতার ও পরে জামিন পাওয়া মহানন্দ মণ্ডল থেকে রাজেশ যাদব প্রত্যেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। পুলিশের প্রতি সরাসরি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনেছেন তাঁরা। এমনকী শনিবার তৃণমূলের মিছিলের আগে রামঘাট এলাকায় পুলিশের অতি সক্রিয়তা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাঁরা। যদিও এ বিষয়ে মন্ত্রী পুলিশের উপরেই ভরসা করতে চাইছেন। বিরোধীদের প্রচার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর শিলিগুড়িতে রামঘাট শ্মশানে বৈদ্যুতিন চুল্লির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর। ওই ঘাটের দায়িত্বে থাকা ট্রাস্ট, অগ্রসেন মণ্ডলের সঙ্গে এ বিষয়ে দফতরের একটি চুক্তি হয়েছে বলে মন্ত্রী জানিয়েছিলেন। ওইদিন অনুষ্ঠানের সময় মন্ত্রীকে সামনে পেয়ে শ্মশানের গেটের বাইরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন এলাকার কিছু বাসিন্দা। তাঁদের নেতৃত্ব দেন ওয়ার্ডের কয়েকজন ব্যক্তি। হই চই শুনে উত্তরববঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব তাঁদের বক্তব্য শোনার জন্য কয়েকজনকে ডেকে নেন ভিতরে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর ফরওয়ার্ড ব্লকের অমরনাথ সিংহ, মহানন্দ মণ্ডল, সুভাষ রায়, গৌরী মিত্র, রাজেশ যাদবরা। সেখানেই আলোচনার সময় দু’পক্ষই উত্তেজিত হয়ে পড়লে মন্ত্রী মহানন্দবাবুকে চড় মারেন বলে অভিযোগ ওঠে। এমনকী মন্ত্রীর সঙ্গে থাকা তৃণমূলের প্রাক্তন কাউন্সিলর তথা জেলা কমিটির সদস্য কৃষ্ণ পাল ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধেও মারধরের অভিযোগ ওঠে। এই অভিযোগ জানিয়ে শিলিগুড়ি থানায় দুটি অভিযোগ দায়ের করেন এলাকাবাসী। একটি মহানন্দবাবু করেন ও অপরটি করেন গৌরী মিত্র।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের পক্ষ থেকে উপ সহকারী বাস্তুকার বাসুদেব মানি সরকারি কাজে বাধা দান ও সরকারি কর্মীদের গায়ে হাত তোলার একটি পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেন। এই ভিত্তিতে পুলিশ মহানন্দ ও রাজেশকে গ্রেফতার করে। পরে অবশ্য আদালতে পেশ করা হলে দু’জনেরই জামিন হয়ে যায়। এই ঘটনার প্রতিবাদে শিলিগুড়ির রাজনৈতিক দলগুলি বিক্ষোভে ফেটে পরে। প্রতিটি দলই মন্ত্রী সহ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবি জানান।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব এদিন অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে এর আগে সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি উন্নয়নের বিরুদ্ধে বিরোধীদের ষড়যন্ত্র বলে অভিযোগ করেছিলেন। অন্যদিকে যাঁদের কেন্দ্র করে এত কাণ্ড সেই মহানন্দ মণ্ডল অবশ্য এর শেষ দেখে ছাড়তে চান। তিনি বলেন, “ঘটনার পর এলাকায় পুলিশ হয়রানি করেছে। আমাকে গ্রেফতার করলেও আমাদের অভিযোগের কোনও গুরুত্ব পুলিশ দেয়নি। আমরা পুলিশের উপরে আস্থা হারিয়ে ফেলেছি।” তবে সরাসরি কংগ্রেস দলের সঙ্গে যুক্ত থাকায় রাজেশবাবু অবশ্য কোনও রকম মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, “ঘটনাটি রাজনৈতিক রং নেওয়াতে এ বিষয়ে যা বলার আমাদের দলের জেলা সভাপতি শঙ্করবাবুই বলবেন। তবে আমরা দলগতভাবে এর মোকাবিলা করব।”
প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “মন্ত্রীর যদি শহরবাসীর কাছ থেকে এতই ভয়, তা হলে তিনি যে পাড়ায় থাকেন, সেই পাড়াও খালি করে দিক পুলিশ। আমরা গৌতম দেবকেই ওই ঘটনায় দোষী মনে করছি। আমরা আদালতে গিয়ে তাঁর গ্রেফতারির পরওয়ানা দাবি করব।” মন্ত্রীর গ্রেফতারির দাবি ও সাধারণ মানুষকে হেনস্থা বন্ধ করার দাবিতে রাজ্যপালের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দার্জিলিং জেলা কংগ্রেস। জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর মালাকার বলেন, “দ্রুত তারিখ ঠিক করে রাজ্যপালের কাছে যাব। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীকে গ্রেফতারের দাবি জানাব। এই সরকার পুলিশকে নিজেদের স্বার্থে যেভাবে ব্যবহার করছে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাব।”
বিজেপির পক্ষ থেকেও আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান দার্জিলিং জেলা সভাপতি রথীন্দ্র বসুও। তিনি বলেন, “উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব এর আগেও চড় মারার ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পুলিশের আরও নিরপেক্ষভাবে কাজ করা উচিত। আমরাও সব স্তরে অভিযোগ জানাব।”