প্লাস্টিক রুখতে আশা জাগাচ্ছেন বাসিন্দারাই

দার্জিলিং কিংবা গ্যাংটক শহরের বাসিন্দাদের সিংহভাগ যে কোনও ধরনের প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ দেখলেই ক্ষেপে যান। কোনও দোকানে কিংবা বাজারে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ হাতে কাউকে দেখলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে খোলাখুলি আপত্তি জানতেও দেখা যায় পাহাড়ের বাসিন্দাদের।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৪১
Share:

প্লাস্টিক রুখতে শহরে মিছিলে সব দলের প্রতিনিধিরাই।

দার্জিলিং কিংবা গ্যাংটক শহরের বাসিন্দাদের সিংহভাগ যে কোনও ধরনের প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ দেখলেই ক্ষেপে যান।

Advertisement

কোনও দোকানে কিংবা বাজারে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ হাতে কাউকে দেখলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে খোলাখুলি আপত্তি জানতেও দেখা যায় পাহাড়ের বাসিন্দাদের। লুকিয়ে-চুরিয়ে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ চালাতে চাইলে দলমত নির্বিশেষে বাসিন্দারা অনেকেই রুখে দাঁড়ান। শিলিগুড়িতেও তেমনই ঘটতে শুরু করেছে। শহরবাসীদের অনেকেই হাটে-বাজারে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ নিতে অস্বীকার করছেন। একাধিক ক্লাব স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে প্রচারাভিযানে নেমেছেন। যা কি না আশার আলো দেখাচ্ছে বলে মনে করছেন পরিবেশপ্রেমীরা।

শহরের আনাচে-কানাচে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বর্জনের আহ্বান ছড়িয়ে দিতে আসরে নেমেছে হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশন (ন্যাফ) সহ একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। ন্যাফের মুখপাত্র অনিমেষ বসুর কথায়, “আইনি প্রক্রিয়া বলবত্‌ হতে হয়তো একটু সময় লাগে। সে জন্য হাত গুটিয়ে বসে থাকলে তো চলবে না। প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ কত মাইক্রনের সেটা দেখার দরকার তো সাধারণ মানুষের নেই। শহরের সার্বিক স্বার্থের জন্য নাগরিকরা সব ধরনের প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বর্জন করতে পারেন। সেই অধিকার শহরের নাগরিকদের রয়েছে।”

Advertisement

পুরসভা-প্রশাসনের একাধিক অফিসার-কর্মীও একান্তে জানিয়েছেন, সরকারি ফাইল নড়াচড়া করে আদপে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ পুরোপুরি বন্ধের বিজ্ঞপ্তি কবে দিনের আলো দেখবে তা স্পষ্ট নয়। কারণ, সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধি ও আমলাদের একাংশের তরফে বিষয়টি নিয়ে তেমন উত্‌সাহ ওই অফিসার-কর্মীরা দেখতে পাচ্ছেন না। ফলে, পুরসভা-প্রশাসনের অনেকেই চাইছেন, শহরবাসীরা স্বেচ্ছায় যাবতীয় প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বর্জন করুন। তাতে অভিযানে নামার কোনও দরকারই হবে না। শিলিগুড়ির পুর কমিশনার সোনম ওয়াংদি ভুটিয়া বলেছেন, “নাগরিকরা প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বর্জনে জোট বাঁধলে শহরের মর্যাদা আরও বাড়বে। পুরসভাও সব রকম সহযোগিতা করবে।”

প্লাস্টিক ব্যবহার করছেন পুলিশকর্মীরাই।

ঘটনা হল, শিলিগুড়ি প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ মুক্ত শহর বলে যে মর্যাদা অর্জন করেছিল তা ধূলিসাত্‌ হয়ে যাক সেটা শহরের আমজনতা কখনও চায় না। সে কথা জানেন সব দলের নেতারা। তাই দুমাস আগেই শহরে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির ডাকে যে মিছিল হয় তাতে অংশ নিতে ভিড় উপচে পড়ে। তৃণমূল-সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপির নেতারাও ওই মিছিলে পা মেলান। অন্যান্য বাম দলের প্রতিনিধিদেরও সেখানে সামিল হতে দেখা যায়। কারণ, একশ্রেণির ব্যবসায়ীদের তত্‌পরতায় শহরে ফের প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের রমরমা জাঁকিয়ে বসলে যে আগামী প্রজন্ম যে সব দলকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে চাইতে পারে। তাই প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য অরাজনৈতিক মিছিলে সামিল হওয়ার পরে বলেছেন, “একটা শহর প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বর্জন করে শিরোপা পেয়েছে। এখন নতুন করে বিজ্ঞপ্তি দিলেই সেই শিরোপা থাকে। কিন্তু, শাসক দলের তরফে আর পাঁচটা বিষয়ের মতো প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বন্ধ করানো নিয়েও গয়ংগচ্ছ মনোভাব দেখানো হচ্ছে বলে অনেকেই অভিযোগ করছেন। শিলিগুড়ির মান-সম্মান ধূলিসাত্‌ হতে আমরা দিতে পারি না।”

ওই মিছিলে সামিল ছিলেন বিজেপির দার্জিলিং জেলা সভাপতি রথীন বসুও। তিনি জানান, তাঁরা শহরের পরিবেশের স্বার্থে প্রয়োজনে নিজেরাই সর্বোচ্চ আদালতের গ্রিন ট্রাইবুনালের দ্বারস্থ হওয়ার কথা ভাবছেন। রথীনবাবু বলেন, “আমরা শীঘ্রই সর্বোচ্চ আদালতের গ্রিন ট্রাইবুন্যালের হস্তক্ষেপ চাইব।” ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সভাপতি অনিরুদ্ধ বসুও মনে করেন, শহরের পরিবেশের স্বার্থে আইনি পদক্ষেপ করা জরুরি। তিনি বলেন, “প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার মানে যে কী বিপদ সেটা এখন পৃথিবীর অনেক দেশই বুঝতে পারছে। নর্দমা বন্ধ হয়ে যাওয়া, বর্ষায় শহর জলমগ্ন হয়ে যাওয়ার মতো নানা সমস্যা বেড়ে যায়। এটা বন্ধ করার ব্যাপারে বিজ্ঞপ্তি জারি নিয়ে টালবাহানা করলে তো নানা প্রশ্ন উঠবেই।”

শহরে নেতা-কর্তা-আমলাদের চাপানউতোর অবশ্য নতুন কিছু নয়। সে জন্য শহরের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের অনেকেই চাইছেন, আমজনতা নিজেরাই শিলিগুড়ির ‘প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ফ্রি জোন’ সম্মান অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থে নিজেরাই জোট বাঁধুন। ঠিক যেমন পাহাড়ের সব শ্রেণির মানুষ একজোট হয়েছেন। শিলিগুড়ির একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত সুজিত রাহার কথায়, “নাগরিক সমাজ চাইলে সব হয়। তা হলে গোটা শিলিগুড়ি চাইলে শহরে একটি প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগও পাওয়া যাবে না। এমন দিন আসতেই পারে।”

এখন নাগরিক সমাজের জোট সুসংহত হতে কতদিন লাগে সেটাই দেখার বিষয়।

(শেষ)

ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

কেমন লাগছে আমার শহর? নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান। ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ। Subject-এ লিখুন ‘আমার শহর-শহরের নাম’। অথবা চিঠি পাঠান, ‘আমার শহর-শহরের নাম’, আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৩৬/৮৯ চার্চ রোড, শিলিগুড়ি ৭৩৪০০১। প্রতিক্রিয়া জানান এই ফেসবুক পেজেও: www.facebook.com/anandabazar.abp।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন