যত ভোটের দিন কাছে আসছে, ততই উত্তরের পাহাড়-তরাই-ডুয়ার্সের চা বলয়ে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হিসেবে উঠে আসছে ‘পদ্মফুল’। তাতে দার্জিলিং পাহাড় তো বটেই, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার আসনে প্রতিদ্বন্দ্বীদের জবরদস্ত ধাক্কা দেওয়ার আশা করছেন উত্তরবঙ্গের বিজেপি নেতৃত্ব। ইতিমধ্যেই গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার পক্ষ থেকে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারে বিজেপিকে সমর্থন করা হয়েছে। জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারে আদিবাসী বিকাশ পরিষদের সমর্থন মিলবে বলে আশাবাদী স্থানীয় তৃণমূল সমর্থকেরা। এই অবস্থায়, বৃহস্পতিবার আদিবাসী বিকাশ পরিষদের দল ছুট নেতা তথা প্রোগ্রেসিভ টি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি জন বার্লা ও তাঁর অনুগামীরা বিজেপিকে সমর্থনের কথা ঘোষণা করেছেন। ফলে তরাই-ডুয়ার্সের আদিবাসী অধ্যুষিত চা বলয়েও তৃণমূল ও বামেদের সঙ্গে সমানে-সমানে পাল্লা দেওয়ার স্বপ্ন দেখছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
জন বার্লার কথায়, “আগামী দিনে আদিবাসী অধ্যুষিত জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারের বিস্তীর্ণ এলাকার সামগ্রিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতেই বিজেপিকে সমর্থন করছি। কারণ, আমরা মনে করি, বিজেপিই আগামীতে কেন্দ্রে সরকার গড়ার প্রধান দাবিদার হবে। সেখানে ডুয়ার্সের আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ির বিজেপি সাংসদরা থাকলে বড় দায়িত্ব পাবেন।”
এক সময়ে আদিবাসী বিকাশ পরিষদের প্রথম সারির নেতা জন বার্লা মোর্চার আলাদা রাজ্যের আন্দোলন সমর্থন করে সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত হন। জন ও তাঁর অনুগামীরা মিলে চা বলয়ে নতুন সংগঠন গড়েন। প্রোগ্রেসিভ পিপলস পার্টি নামে আলাদা সংগঠন গড়লে আদিবাসী নেতা কিরণ কালিন্দীও জনের সঙ্গে জোট বাঁধেন। গত পঞ্চায়েত ভোটে জন বার্লারা ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার সঙ্গেও জোট বাঁধেন। তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে কয়েক দফায় আলোচনা করেছেন জন বার্লারা। কিন্তু, পিপিপি সূত্রের খবর, আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায় জন এদিন ডুয়ার্সের নাগরাকাটায় বৈঠক করেন কিরণ কালিন্দীর সঙ্গে। সেখানে উভয় সংগঠনের অন্য নেতারাও ছিলেন। পরে দু’জনে একযোগে বলেন, “আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রে আমাদের পছন্দের প্রার্থীকে টিকিট দিয়েছে বিজেপি।”
আদিবাসী বিকাশ পরিষদের রাজ্য কমিটির নেতা তেজকুমার টোপ্পো কটাক্ষ করেছেন জন বার্লাদের। তাঁর অভিযোগ, “বিজেপিকে জন বার্লাদের সমর্থন একেবারেই সুবিধাবাদী পদক্ষেপ। একে কেউ মেনে নেবেন না। আমরা আগামী ৬ এপ্রিল বাঁকুড়ায় মহাসম্মেলন করব। সেখানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকেও আমন্ত্রণ জানানো হবে। সেই মহাসম্মেলন থেকেই আমাদের লোকসভায় সমর্থন কোন দিকে থাকবে, তা চূড়ান্ত ভাবে জানানো হবে।”
তবে বিজেপির জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং জেলার নেতাদের অনেকেরই ধারণা, দেশ জুড়ে নানা এলাকায় তাঁদের দলের পক্ষে যে হাওয়া বইছে তার আঁচ পড়বে উত্তরবঙ্গেও। বিজেপির দার্জিলিং জেলার এক শীর্ষ নেতা জানান, কেন্দ্রে বিজেপি সরকার গড়লে এস এস অহলুওয়ালিয়ার মতো ব্যক্তিত্ব নিশ্চয়ই মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূণর্ দায়িত্ব পাবেন।
এদিকে, মোর্চা দার্জিলিং কেন্দ্রে এখনও প্রচারে নামেনি, কিন্তু প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে পাহাড়ের প্রত্যন্ত এলাকায় প্রচার শুরু দিয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী ভাইচুং ভুটিয়া। এদিন বিজনবাড়িতে ভোটের প্রচার করেন ভাইচুং। সেখানে একটি মিছিলে যোগ দেন তিনি। প্রথমে চুংথাং যান। সেখানে তাঁকে স্বাগত জানায় স্থানীয় রুবেন মেমোরিয়াল স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। মিছিলের পর একটি দলীয় বৈঠকেও যোগ দেন তিনি। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজেন মুখিয়া, আপ্পা রাজন, নির্মল সিংহ, এন বি খাওয়াস সহ বিভিন্ন ব্লক নেতৃত্ব। বিজনবাড়ি সেতু ভেঙে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তাঁদের আত্মার শান্তি কামনায় দু’মিনিট নীরবতা পালন করেছেন তিনি। প্রাক্তন ভারত ফুটবল অধিনায়ক বলেন, “পাহাড়ে শান্তি রক্ষা করাই আমার প্রধান কর্তব্য হবে।” বৈঠকের পরে বিজনবাড়ি ফুটবল মাঠে একটি প্রীতি ফুটবল ম্যাচেও অংশ নেন তিনি। ম্যাচে করতালিতে ফেটে পরে উপস্থিত জনতা। ভাইচুং একটি গোলও করেন। দার্জিলিং জেলা পাহাড় তৃণমূলের মুখ্য প্রবক্তা বিন্নি শর্মা বলেন, “মানেভঞ্জন, সুখিয়াপোখরি, নাগরি, পোখরেবং ও গোখে যাওয়ার কথা রয়েছে প্রার্থীর।”