হিংসা রোখার দাবি

পথে সাবেক ছিটের বাসিন্দারা

কাউকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। কাউকে মারধর করা হয়েছে। কারও বাড়ি থেকে গরু নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কয়েকজনের দোকানে তালা দেওয়া হয়েছে। এমনই অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দাদের নিয়ে কোচবিহারের জেলাশাসকের দফতরে এসে স্মারকলিপি দিল নাগরিক অধিকার রক্ষা সমন্বয় কমিটি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৬ ০১:৩৯
Share:

সাবেক ছিটের বাসিন্দাদের নিয়ে কোচবিহারের জেলাশাসকের দফতরে কমিটি। — নিজস্ব চিত্র

কাউকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। কাউকে মারধর করা হয়েছে। কারও বাড়ি থেকে গরু নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কয়েকজনের দোকানে তালা দেওয়া হয়েছে। এমনই অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দাদের নিয়ে কোচবিহারের জেলাশাসকের দফতরে এসে স্মারকলিপি দিল নাগরিক অধিকার রক্ষা সমন্বয় কমিটি।

Advertisement

কমিটির ডাকে সাড়া দিয়ে কর্মসূচিতে সামিল হন বাম ও বিজেপি নেতারা। দু’ তরফেই সন্ত্রাসের প্রতিবাদ করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করা হয়েছে। এ দিন কমিটির পক্ষ থেকে ছিটমহলের বাসিন্দাদের হাতে একটি করে ফর্ম তুলে দেওয়া হয়। ওই ফর্মের মাধ্যমে জেলাশাসকের দফতরে বাসিন্দাদের অভিযোগ জমা দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। শুধু ছিটমহল নয়, বাম ও বিজেপির অভিযোগ, গোটা জেলা জুড়েই সন্ত্রাস চালাচ্ছে শাসক দল।

তৃণমূল অবশ্য ওই অভিযোগ ঠিক নয় বলে দাবি করেছে। এ দিকে, এ দিনই জেলার সমস্ত মহকুমা এবং ব্লকগুলিতে সর্বদলীয় বৈঠক করে প্রশাসনের তরফ থেকে শান্তি বজায় রাখার আবেদন করা হয়েছে। কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথন বলেন, “শান্তি বজায় রাখতে সমস্ত দলের কাছে আবেদন করা হয়েছে। তার পরেও কোথাও গণ্ডগোল হলে কড়া ব্যবস্থা হবে।”

Advertisement

নাগরিক অধিকার রক্ষা সমন্বয় কমিটির তরফ থেকে এ দিন অভিযোগ করা হয়, ১৯ তারিখ ভোটের ফল প্রকাশ হওয়ার পর থেকে সাবেক ছিটমহল পোয়াতুরকুঠি, করলা, মশালডাঙ্গা, নলগ্রাম সহ নানা জায়গায় হামলা চালাচ্ছে শাসক দলের কর্মীরা। কেউ যাতে বিষয়গুলি নিয়ে পুলিশে অভিযোগ না জানায় সে জন্য তাঁদের হুমকি দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। পোয়াতুর কুঠির বাসিন্দা মুন্নাফ শেখ অভিযোগ করেন, তাঁর বাড়ি ভাঙচুর করে শাসক দলের কর্মীরা। বাধা দিতে গিয়ে তাঁর পরিবারের সদস্যরা আক্রান্ত হন। নলগ্রামের দুলাল হোসেন অভিযোগ করেন, তাঁর বাড়ি থেকে গরু নিয়ে যাওয়া হয়েছে। করলার বাসিন্দা মধু শেখ অভিযোগ করেন, জোট প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার অভিযোগ তুলে তাঁকে মারধর করা হয়। বাত্রীগছের বাসিন্দা শৈলেন বর্মন বলেন, “আমি চারদিন ধরে বাড়ি ফিরতে পাচ্ছি না। শাসক দলের লোকজন বার বার আমার বাড়ি গিয়ে আমাকে খোঁজাখুঁজি করছে। আমাকে পেলেই মারধর করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থায় প্রশাসন পাশে না থাকলে আমরা কি করে বাড়ি ফিরব?”

কমিটির মুখ্য সমন্বয়ক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, “নতুন নাগরিকরা তাঁদের প্রথম ভোট উৎসাহের দিকে সঙ্গে দিয়েছে। ৯২ শতাংশ ভোট পড়েছে সাবেক ছিটমহলে। কিন্তু গণনার পর থেকে তাঁদের উপরে ধারাবাহিক হামলা চলছে। তাঁদের এই কথা বাইরে ছড়িয়ে পড়লে দেশের সম্মান নষ্ট হবে। প্রশাসন কেন নতুন নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে পাচ্ছে না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।” তিনি দাবি করেন, এ দিনও যাতে কেউ স্মারকলিপি দিতে জেলাশাসকের দফতরে যেতে না পারে সে জন্য তাঁদের হুমকি দেওয়া হয়েছে।

সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদক তারিণী রায় জানান, আজ বুধবার থেকে সন্ত্রাসের প্রতিবাদে তাঁরা জেলাশাসকের দফতরের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করবেন। ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সভাপতি পরেশ অধিকারী বলেন, “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সবাইকে একসঙ্গে রুখে দাঁড়ানো উচিত। ভোটে হারজিত হবে। তা বলে মারধর কেন করা হবে।”

তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “কোথাও সন্ত্রাস নেই। ভোটে হেরে এখন নানা মিথ্যে অভিযোগ করছে। আমি মনে করি এমনটা না করে উন্নয়নের কাজে সহযোগিতা করা উচিত সকলের।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন