ফের আক্রান্ত পুলিশ, ধরেও ছাড় অভিযুক্তদের

উত্তরবঙ্গেও এ বার পুলিশের উপরে হামলা করার অভিযোগ উঠল শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। যদিও ঘটনায় অভিযুক্তদের ঘটনাস্থল থেকে থানায় নিয়ে গিয়ে, জেরা করে ছেড়ে দিয়ে বিতর্কের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ-ই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:২৮
Share:

উত্তরবঙ্গেও এ বার পুলিশের উপরে হামলা করার অভিযোগ উঠল শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। যদিও ঘটনায় অভিযুক্তদের ঘটনাস্থল থেকে থানায় নিয়ে গিয়ে, জেরা করে ছেড়ে দিয়ে বিতর্কের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ-ই।

Advertisement

বৃহস্পতিবার রাতে বাগডোগরার গোঁসাইপুরে বিক্রয় কর দফতরের চেকপোস্টে ওই ঘটনায় তিন পুলিশকর্মী জখম হন। চেকপোস্ট লাগোয়া পুলিশ-ব্যারাকে ঢুকে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগও রয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) চার স্থানীয় নেতার বিরুদ্ধে। তাঁদের বিরুদ্ধে শুক্রবার জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা করেছে পুলিশ। দাবি করেছে, অভিযুক্তেরা পলাতক।

কিন্তু পুলিশের ‘ভূমিকা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সিপিএম, বিজেপি-র নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, শাসক দলের ছাত্র সংগঠন বলেই, ওই চার জনকে থানায় এনেও গ্রেফতার করা হয়নি। সুযোগ দেওয়া হয়েছে পালানোর। বিজেপি-র দার্জিলিং জেলা সভাপতি রথীন বসুর কথায়, “নিজেদের সহকর্মীর উপরে হামলায় কারা অপরাধী তা জেনেও স্রেফ শাসক দলের কথা মাথায় রেখেই তাদের ধরছে না পুলিশ। এ জন্যই পুলিশের উপরে জনতা আস্থা হারাচ্ছে।” রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্যের কটাক্ষ, “সারা রাজ্যেই পুলিশ পড়ে মার খাওয়ার নীতি নিয়েছে। এই ঘটনাও তেমনই এক দৃষ্টান্ত।”

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ মোটরবাইকে চেপে শিলিগুড়ির দিক থেকে বাগডোগরার দিকে যাচ্ছিলেন দুই টিএমসিপি নেতা। উল্টো দিক থেকে আসা একটি ট্রাক গোঁসাইপুরের চেকপোস্টে ‘বেকায়দা’ দাঁড়ানোয় তাঁদের অসুবিধা হয়েছে দাবি করে ট্রাকচালকের সঙ্গে বচসায় জড়ান টিএমসিপি নেতারা। অভিযোগ, তাঁরা ট্রাকচালককে মারেন। চেকপোস্টে কর্তব্যরত পুলিশ থামাতে গেলে ‘কোন সাহসে বাধা দিচ্ছিস, জানিস আমরা তৃণমূল করি’ বলে হুমকি দেওয়া হয়। পুলিশের সঙ্গে ওই দুই নেতার বচসা বাধে। ইতিমধ্যে পুলিশ তাঁদের মারধর করছে দাবি করে মোবাইলে খবর দিয়ে লোক জড়ো করেন ওই দু’জন। পুলিশের অভিযোগ, টিএমসিপি-র লোকজন এর পরেই কর্তব্যরত তিন কনস্টেবলকে ঘুষি মারে। ভাঙচুর চালায় লাগোয়া পুলিশ-ব্যারাকে, অফিস-ঘরে, রান্নার জায়গায়।

হামলার খবর পেয়ে বাগডোগরা থানা থেকে পুলিশ বাহিনী যায়। আণবিক জোয়ারদার নামে এক টিএমসিপি নেতাকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয়। কিন্তু ওই নেতাকে কেন আটক করা হয়েছে, সে প্রশ্ন তুলে ফের পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়ান সংগঠনের অন্য নেতা-কর্মীরা। পুলিশ উৎপল সেন, ব্রতীন ঘোষ এবং সম্তোষ আরও তিন জনকে আটক করে। স্থানীয় সূত্রের খবর, আনবিক বাগডোগরা কলেজের ছাত্র-নেতা। বাকিরা এলাকায় টিএমসিপি-র নেতা বলে পরিচিত।

জেলা পুলিশের এক সূত্র জানাচ্ছে, ওই চার জনকে বাগডোগরা থানায় নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক জেরার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। যদিও এ দিন ওই চার জনের বিরুদ্ধেই পুলিশকে মারধর, সরকারি কাজে বাধা, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করার ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিক্রয় কর বিভাগের তরফেও এ ব্যাপারে পুলিশে অভিযোগ হয়েছে। শিলিগুড়ি পুলিশের এসিপি (পশ্চিম) মানবেন্দ্র দাস বলেন, “অভিযুক্তেরা পলাতক। তাঁদের খোঁজা হচ্ছে।”

ঘটনাস্থল থেকে আটক করার পরে তা হলে এই চার জনকে ছেড়ে দেওয়া হল কেন? বাগডোগরা থানার ওসি সোনম লামা নিরুত্তর।

তৃণমূলের বাগডোগরা অঞ্চল সভাপতি প্রশান্ত ঘোষ বলেন, “অভিযুক্তদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়েছে। ওরা এলাকাতেই আছে। এ ধরনের অভিযোগ ওঠা অনভিপ্রেত।” তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “খোঁজ নিয়ে দেখি। তার পরে পরবর্তী পদক্ষেপ করব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন